আমাদের সময়
নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তরে ব্যর্থ জাগৃক

নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তরে ব্যর্থ জাগৃক

সাশ্রয়ী দামে বিভিন্ন পেশার লোকদের ফ্ল্যাট দিতে রাজধানীর মিরপুরে স্বপ্ননগর আবাসিক ফ্ল্যাট প্রকল্প হাতে নেয় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (জাগৃক)। স্বপ্ননগর আবাসিক ফ্ল্যাট প্রকল্প-১ এর কাজ শেষ করে বরাদ্দপ্রাপ্তদের বুঝিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। তবে স্বপ্ননগর-২ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ফ্ল্যাট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তবে জাগৃক বলছে, চলতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। অন্যদিকে কাজ শুরুর আগেই জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করেছিল জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। যারা আবেদন করেছিল, তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয় সরকারি এই আবাসন সংস্থা। নিয়মানুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার আগে মোট মূল্যের অর্ধেক অর্থ কিস্তিতে দিয়েছেন বরাদ্দপ্রাপ্তরা। জাগৃকের নথি বলছে, রাজধানীর মিরপুর-৯ নম্বর সেক্টরে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য স্বপ্ননগর আবাসিক ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়। ১৪ দশমিক ৯৮ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ১৪ তলার ১৫টি ভবন। এসব ভবনে ১৫৬০টি ফ্ল্যাট হবে। এসব ফ্ল্যাটের মধ্যে ৭০টি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ এখনো ঠিক হয়নি। আগামী সপ্তাহে ৭০টি ফ্ল্যাটের লটারি হবে। জানা গেছে এই ৭০টি ফ্ল্যাটের বিপরীতে ৬০০টি আবেদন জমা পড়েছে। এ জন্য লটারির মাধ্যমে ৭০ ফ্ল্যাটের বরাদ্দপ্রাপ্ত ঠিক হবে। বড় ও ছোট দুই ধরনের ফ্ল্যাট নির্মাণ করার জন্য নকশা প্রণয়ন করে সংস্থাটি। স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য ১৩৩৮ বর্গফুট এবং মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১৫৪৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়। কাজ শুরু হওয়ার সময় ভূমির মূল্য ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ধরে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ২০০ টাকা। যদিও বর্তমানে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রতি বর্গফুট ৮-৯ হাজার টাকার নিচে কোনো ফ্ল্যাট পাওয়া যায় না। তবে সরকার স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের আবাসনের কথা চিন্তা করে বাজার মূল্যের চাইতে কম মূল্যে ফ্ল্যাট দিচ্ছে। এদিকে কিস্তির টাকা দেওয়ার পরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট বুঝে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী, সচিব এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন বরাদ্দপ্রাপ্তরা। স্বপ্ননগর-২ প্রকল্পে বরাদ্দপ্রাপ্তদের অনেকেই সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। বরাদ্দপ্রাপ্তদের ১২২ জন লিখিত আবেদনে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে মো. জাহিদ হোসেন ও নুরুল ইসলাম সিকদার জানান, ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি। চলতি বছরে শেষ হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কিস্তির টাকা শোধ করা হলেও তারা ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ। তারা বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট পেলে ভাড়া বাসায় থাকতে হতো না। ভাড়া বাসায় থাকায় প্রতি মাসে আয়ের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে বাসা ভাড়ায়। তা ছাড়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করতেও অনেক ধারদেনা করতে হয়েছে। এ জন্য তারা দ্রুত ফ্ল্যাট বুঝে পেতে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট বিভাগে নোট দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য ২১ এপ্রিল রবিবার একটি ফাইল সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছেন তিনি। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনার কারণে শুরুর দিকের কাজ আটকে যায়। তাছাড়া জায়গাটিতে ১২ হাজার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ও করোনা দুই কারণে প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ঢাকা ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী আমাদের সময়কে বলেন, করোনার কারণে প্রথম দিকের কাজ শুরু করতেই সময় লেগে যায়। বর্তমানে কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। যেভাবে কাজ চলছে চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, নকশার কিছু পরিবর্তনজনিত কারণেও প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। তবে সব প্রক্রিয়া শেষে এখন বুঝিয়ে দেওয়ার সময় চলে এসেছে। আগামী ডিসেম্বরের পর আর সময় বাড়বে না।
Published on: 2024-04-27 04:52:05.440654 +0200 CEST