চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে এনবিআরের এমন সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ যাত্রীসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভ্যাট থেকে অব্যাহতির জন্য দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল)। এনবিআরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, জনস্বার্থে মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে এনবিআরেও আলোচনা হয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশের জায়গায় আরও কমানো হতে পারে। এ খাতে ভ্যাট হার কমে ৫ শতাংশ হতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। তবে মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট সহনীয়ভাবে বসানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি মনে করেন, আস্তে আস্তে ৫ থেকে ৭ শতাংশ, ৭ থেকে ১০ শতাংশ এবং পরে ৫ শতাংশ করা যেতে পারে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন। এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ যাত্রীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার। জানা গেছে, বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত থাকলে বছর শেষে ৭১ কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে। সে হিসাবে ভ্যাট হার ৫ শতাংশ করলে ২৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে।
ডিএমটিসিএলের ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ১০০ টাকা। এ ছাড়া যে কোনো দূরত্বে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। তবে এই ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করলে ২০ টাকার ভাড়া বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ টাকায়। এ ছাড়া শুরু থেকে শেষ স্টেশনে যাতায়াত করলে ১০০ টাকার পরিবর্তে খরচ করতে হবে ১১৫ টাকা।
অন্যদিকে ভ্যাট ৫ শতাংশ আরোপ করা হলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২১ টাকা। ১০০ টাকার ভাড়ার বিপরীতে গুণতে হবে ১০৫ টাকা। আর ভ্যাট অব্যাহতি চালু রাখলে ভাড়া আগের মতোই থাকবে।
এর আগে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট আদায় না করার ব্যাখ্যাসহ এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে চলে। শুধু ভাড়ার টাকায় লাভজনকভাবে মেট্রোরেল পরিচালনা করা যায় না। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, মেট্রোরেলের যাত্রীদের কোনো শ্রেণিবিন্যাস না থাকায় এর যাত্রীসেবার ওপর কোনো ধরনের মূসক প্রযোজ্য নয়। অন্যদিকে এনবিআরের আইন অনুযায়ী এসি (তাপানুকূল) ও নন-এসি রেলওয়ে সার্ভিসের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেল চলাচল মতিঝিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যদিও মেট্রোরেলের যাত্রীদের কোনো ক্লাস বা শ্রেণিবিন্যাস নেই। সব যাত্রী একই ভাড়ায় নির্ধারিত গন্তব্যে আসা-যাওয়া করতে পারেন।
এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তিন ফুট উচ্চতার শিশুরা বিনা ভাড়ায় এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারেন।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টি সরকার কীভাবে দেখছে তার ওপর সবুকিছু নির্ভর করবে। এখান থেকে আহামরি বেশি কর আসবে না। তবে মূসক অব্যাহতি বা কমালে মানুষের জন্য বড় ধরনের স্বস্তি হবে। কারণ সব শ্রেণির মানুষ মেট্রোরেলে ভ্রমণ করে।
Published on: 2024-04-27 20:51:51.947668 +0200 CEST
------------ Previous News ------------