বাংলা ট্রিবিউন
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন

‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন

সারা দেশের মতো দিনাজপুরের হিলিতে গত কয়েক দিন ধরেই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৩৯-৪০ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। তীব্র গরমের কারণে অনেক ফার্মে হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে মুরগি। ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ডিমের উৎপাদন আগের তুলনায় নেমেছে অর্ধেকে। এতে করে উৎপাদন খরচ উঠানো নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন খামারিরা। গরমের কারণে দেখা দেওয়া রোগ থেকে বাঁচতে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে খামারিদের, এমনটাই দাবি করেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। খামারে কর্মরত শ্রমিক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এতে খামারে মুরগি টেকানো নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছি। প্রচণ্ড গরমের কারণে স্ট্রোক করে মুরগি মারা যাচ্ছে সেই সঙ্গে ডিমের উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে। আগে যা ডিম উৎপাদন হতো তার চেয়ে এখন ডিম উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। গত কয়েক দিন ধরেই মুরগি মারা যাওয়ার এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ৮-১০টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে, যা ফেলে দিতে হচ্ছে। আগে দেখা যাচ্ছে দিনে ২-৩ বার পানি দিলেই হতো। এখন ৫-৬ বার দিয়েও মুরগিগুলোকে টেকানো যাচ্ছে না।’ অপর শ্রমিক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘প্রচণ্ড মুরগির খাবারের চাহিদাও কমে গেছে। ঠিকমতো খাচ্ছে না। তবে পানির চাহিদা আগের তুলনায় খুব বেড়ে গেছে। ফ্যান চালিয়ে বা শেডে পানি দিয়েও কোনও উপকার হচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়েও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’ হিলি বাজারের মুরগির খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার চারটি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে, যেগুলোকে সোনালি মুরগি বলা হয়। আমার খামারে প্রায় ৬ হাজার মুরগি আছে। এখান থেকে প্রতিদিন ডিম আসতো চার থেকে চার হাজার ২০০ পিস। কিন্তু বর্তমানে অত্যন্ত গরমের কারণে অনেক মুরগি অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। ঠিকমতো খাবারও খাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, ডিমের উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ায় মুরগির যে খাবার খরচ সেই টাকাই উঠছে না আমাদের। বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে করে আমাদের অনেক টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’ হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সারা দেশের মতো হিলিতেও গত কয়েক দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে কিছু খামারে তাপজনিত অসুখ দেখা দিয়েছে। যেটিকে আমরা হিটস্ট্রোক বলি। এতে করে মুরগি হঠাৎ করেই স্ট্রোক করে মারা যায়। তাদের যে স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ সেটি বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে মুরগির স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা সেটিও নষ্ট হয়ে যায়। তাপজনিত রোগ থেকে কীভাবে মুরগিগুলোকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে খামারের ভেতরের যে তাপমাত্রা সেটি কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘খামারের যে শেড রয়েছে তাতে ভেজা কাপড়, চটের বস্তা বা খড় দিয়ে পুরোটা ঢেকে দিতে হবে। মাঝে মাঝে শেডে ঠান্ডা পানি ছিটালেও ভালো ফল পাওয়া যায়। দিনের বেলায় খাবার কম দিয়ে সকালে ও রাতে বাড়িয়ে দিতে হবে। দিনের বেলায় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। পর্যাপ্ত ইলেকট্রোলাইজড, ভিটামিন সি এবং সম্ভব হলে একটু বরফযুক্ত ঠান্ডা পানি সরবরাহ করা। তাহলে হিটস্ট্রোকজনিত যে সমস্যা রয়েছে সেগুলো অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।’
Published on: 2024-05-03 07:11:29.45817 +0200 CEST