The Daily Star Bangla
গরমে হাসপাতালে রোগীর ভিড় / চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি: হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক

গরমে হাসপাতালে রোগীর ভিড় / চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি: হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক

*সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগ ও কিডনি রোগীর ভিড় বাড়ছে। হাসপাতালগুলোর জরুরি ও বহির্বিভাগে রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।* চিকিত্সকরা বলছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে কিডনি ও হার্টের রোগীদের মধ্যে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে। এর ফলে তাদের অবস্থার আরও অবনতি ঘটছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ইমার্জেন্সি কাউন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালটিতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে প্রতিদিন জরুরি বিভাগে গড়ে ৩০০-৩৫০ জন রোগী আসলেও এখন প্রায় ৪৫০ জন রোগী আসছেন। অতিরিক্ত গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে গত ২২ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৭০)। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসও রয়েছে। অসুস্থ হওয়ার পর নিজের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রেফার করেন। মো. ইব্রাহিমের ছেলে জসিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাড়ির ছাদ টিনের। গত মাসের মাঝামাঝি তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর থেকে আমার বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সেদিন সন্ধ্যায় তা মারাত্মক আকার নিলে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। শুরুতে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে দুই দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সাধারণ ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ ওয়ার্ডে প্রচণ্ড গরমে তিনি কষ্ট পাচ্ছেন।' 'ওয়ার্ডের সিলিং ফ্যানে কাজ হচ্ছে না বলে আমি টেবিল ফ্যান নিয়ে এসেছি। তার অবস্থার উন্নতি হলে আমরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাব। কিন্তু দুশ্চিন্তা হচ্ছে যে, তিনি গরমের কারণে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বেন কি না', বলেন জসিম। চিকিৎসকরা জানান, এই ধরনের গরম আবহাওয়ায় রক্ত সঞ্চালনের জন্য হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। যার কারণে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, এমনকি কখনো কখনো হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। স্টেন্ট বা ভালভ ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীরা তাপপ্রবাহের সময় বেশি ঝুঁকিতে থাকে বলে জানান তারা। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি) কাজল কুমার কর্মকার বলেন, 'গত দুই সপ্তাহে জরুরি ও বহির্বিভাগে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যাও কয়েকগুণ বেড়েছে। ইমার্জেন্সিতে আমরা প্রতিদিন প্রায় ৫০০ রোগী পাচ্ছি, যা এর আগের কয়েক বছরের মধ্যে বেশি। ১২০০ শয্যার এই হাসপাতালে ইতোমধ্যে আরও ২০০ শয্যা যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলোতেও রোগী ভর্তি। আমরা রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।' অতিরিক্ত গরমের কারণে কিডনি রোগীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন চাঁদপুরের বাসিন্দা নুর ইসলাম (৭০)। পরিবার জানায়, গরমে প্রচুর ঘামতে থাকার কারণে তার পানিশূন্যতা দেখা দেয়। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, 'প্রতিদিন তাকে ৭৫০ মিলি পানি পান করতে বলা হয়েছে। কিন্তু গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে এই পানি পর্যাপ্ত কিনা আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।' ইনস্টিটিউটের চিকিত্সকরা জানান, কিডনি রোগী যারা প্রচুর ঘামছেন তাদের ঠিক কতটুকু পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন, এটি নির্ধারণ করা চিকিৎসকদের জন্য চ্যালেঞ্জের। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক শেখ মইনুল আহসান বলেন, 'দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা এখন কঠিন। কারণ তারা পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এদিকে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি পানি পান করাও তাদের উচিত নয়। কিন্তু পানিশূন্যতা গুরুতর হলে রোগীর অঙ্গহানিও হতে পারে।' 'গত কয়েকদিনে কিডনি ফাউন্ডেশনে অন্তত আট থেকে ১০ জন রোগী এসেছেন, যারা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন কিন্তু আমরা তাদের নির্দেশনার চেয়ে বেশি পানি পান করতে দিতে পারিনি। কারণ এতে তাদের কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত হবে। এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি', বলেন তিনি। তীব্র গরমে কিডনি রোগীদের যতটা সম্ভব সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা, বাসার ভেতরে থাকা এবং প্রচুর বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
Published on: 2024-04-26 17:30:22.938661 +0200 CEST