মেহেরপুরে বিশুদ্ধ পানির অভাবে আর্সেনিকযুক্ত পানি পানে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। কারণ জেলায় সুপেয় পানি সরবরাহের ৫৫টি ওয়াটার প্ল্যান্টের মধ্যে ৫২টি পানি শোধনাগার দীর্ঘদিন ধরে অকেজো।
বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন কর্তৃপক্ষের দাবি, ৪-৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি প্ল্যান্ট তৈরির পর আর্সেনিক-আয়রনযুক্ত পানি শোধন করতে ৪-৫ মাস পরপর ৫০-৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আবার প্ল্যান্টগুলো সক্রিয় রাখতে প্রতি মাসে আরও ৬-৭ হাজার টাকা খরচ আছে। স্থানীয় সুবিধাভোগীরা প্ল্যান্টগুলো রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় প্ল্যান্টগুলো এখন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করার কারণে শরীরে দগদগে ঘা নিয়ে চলছেন এমন অসংখ্য মানুষ মেহেরপুরের শহর এবং গ্রামে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করতে করতে একপর্যায়ে আক্রান্ত এ সমস্ত মানুষের মৃত্যু ঘটে। গত ১০ বছরে মেহেরপুরে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে ৫৭ জন মারা গেছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, গত তিন মাসে আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে হাসাপাতালে ভর্তির পর ৯জন মারা গেছে।
বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, ২০১৫ সালে আর্সেনিক উপদ্রুত এলাকা চিহ্নিত করে প্ল্যান্টগুলো নির্মাণ করা হয়। তবে তাদের কার্যক্রম মেহেরপুর থেকে তুলে নিয়ে আকার সীমিত করা এবং স্থানীয়দের তদারকির অভাবে প্ল্যান্টগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্ল্যান্টগুলো চালু করা না হলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্ল্যান্টগুলো মরিচা পড়ে শতভাগ অকার্যকর হয়ে পড়বে।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর, তারানগর, মেহেরপুর সদরের আলমপুর, আমঝুপি, বেলতলাপাড়া, গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা, মানিকদিয়া, তেঁতুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে আর্সেনিকের উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্ত। এসব এলাকায় ২০১৫-২০১৬ সালে আর্সেনিকের ভয়াল থাবা থেকে মানুষকে বাঁচাতে সুপেয় পানির জন্য বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন ৫২টি এবং সরকারিভাবে তিনটি ওয়াটার প্ল্যান্ট নির্মাণ করে। এসব প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমিতি করে দেওয়া হয়। এই সমিতি উপকারভোগী মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে প্ল্যান্টগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবে বলে শর্ত ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে সেভ দ্য চিলড্রেন কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্ল্যান্টগুলোও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুসলেহ উদ্দিন জানান, জেলায় আর্সেনিকের ভয়াবহতা মারাত্মক। তবে আর্সেনিক নিয়ে তাদের কোনো পরিসংখ্যান নেই। আবার আর্সেনিক প্রতিরোধে তাদের কার্যক্রম খুবই সীমিত।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার সিদ্দিকী জানান, হাসপাতালে মাঝেমধ্যেই আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী আসে। এই জেলায় আর্সেনিক মাত্রাতিরিক্ত। আর্সেনিক আক্রান্তদের চিকিৎসার চেয়ে এর প্রতিরোধ জরুরি।
মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘প্ল্যান্টগুলো অসচেতনতার কারণে নষ্ট হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের সমিতিগুলো ঠিকমতো কাজ করেনি। প্ল্যান্টগুলো যাতে আবার চালু হয় তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
Published on: 2023-11-20 20:48:44.221485 +0100 CET
------------ Previous News ------------