দেশ রূপান্তর
স্কুলের মাটি ও গাছ বিক্রি করলেন ঠিকাদার, ইউএনও’র ‘সাফাই’

স্কুলের মাটি ও গাছ বিক্রি করলেন ঠিকাদার, ইউএনও’র ‘সাফাই’

পাবনা সদর উপজেলার নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে মাটি ও গাছ কেটে অন্যত্র বিক্রির অভিযোগ উঠেছে প্রমি কনস্ট্রাকশন নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা’র কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় অভিভাবক ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। স্থানীয় গ্রামবাসী ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগ,পরিদর্শনে গিয়ে অভিযুক্ত ঠিকাদারের পক্ষেই ‘সাফাই’ গেয়েছেন ইউএনও। প্রকাশ্য অনিয়মের পক্ষে ইউএনও এর এমন অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। তারা জানান, গত ২১ মার্চ স্কুলের ভবন নির্মাণ কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে ২৫ মার্চ এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি খনন শুরু করে প্রমি কনস্ট্রাকশন। খনন করা ওই মাটি বিদ্যালয়ের কাজে না লাগিয়ে টাকার বিনিময়ে পাশের একটি বাড়ির খাল ভরাটের কাজে ব্যবহার করছেন ঠিকাদার। নিয়মবহির্ভূতভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ থেকে ২৫ ট্রলি মাটি থেকে খাল ভরাটে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ৩টি বড় গাছও বিক্রি করে দিয়েছে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কাউকেই না জানিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমন অনিয়ম করছে বলেও অভিযোগ তাদের। পরে এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাটি কেটে পাশের একটি বাড়ির খাল ভরাট করা হয়েছে। ট্রলি গাড়ি দিয়ে খাল ভরাটের জন্য মাটি যেভাবে ফেলা হয়েছে এখনও সেভাবেই রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আজও মাটি ফেলার কথা ছিল। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হবার পর ইউএনও আসার খবরে মাটি ফেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া নির্মাণস্থলে কয়েকটি গাছ ছিল সেগুলোর ৩টি কেটে নির্মাণ কাজের জন্য খনন করা হয়েছে। তবে কেটে ফেলা ওই গাছের হদিস কেউই জানেন না। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকালও (২৭ মার্চ) মাটি কেটে ওই খাল ভরাট করা হয়েছে। স্কুলের গাছগুলোও উধাও হয়ে গেছে। অথচ ইউএনও বলছেন, অভিযোগের সত্যতা নেই। এ নিয়ে আর কি বলার আছে? বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু সায়েম মো. আরিফুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩/৪শ গজ দূরে রাস্তার সাথে একটি বাড়ির খাল ভরাটের জন্য ওই মাটি স্থানান্তর করা হয়েছে। আমরা এর কিছুই জানি না। খবর পেয়ে বাধা দিলেও তারা সেটি মানতে নারাজ। পরে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও ইউএনওকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়কে না জানিয়েই বনজ ও ফলজ গাছসহ বড় বড় ৩টি গাছ ঠিকাদার বিক্রি করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সম্পদ কীভাবে তারা বিক্রি করেন? এগুলো পরিষ্কার অনিয়ম। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা নারগিস আক্তার বলেন, গাছ বা মাটি কেটে বিক্রির বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা দেখিও নাই। আমার সভাপতি ও স্থানীয়রা আমাকে জানান। ঘটনা সত্য দেখে নিষেধ করলেও তারা শোনেননি। পরে লিখিত অভিযোগ করেছি। তবে এসব অভিযোগ অসত্য দাবি করেছেন প্রমি কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম ঝন্টু। তিনি বলেন, মাটি কেটে বিদ্যালয়েই রাখা হয়েছে। বিক্রি করা হয়নি। গাছও বিক্রি করেননি বলে দাবি তার। তাহলে গাছ কোথায় গেল এবং বিদ্যালয়ের মাটি পাশের বাড়ির ওই খালে কীভাবে গেল জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এদিকে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, মাটি ও গাছ কাটার অভিযোগের প্রাথমিক কোনো সত্যতা পাইনি। তবে স্কুল যেহেতু শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, ৬৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭৩ টাকা ব্যয়ের নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দোতলা বিশিষ্ট ৪ রুমের একতলা ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডার পায় জিহাদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের হয়ে এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে প্রমি কনস্ট্রাকশন। যেটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।
Published on: 2024-03-28 20:50:44.257559 +0100 CET