ঢাকাট্রিবিউন
মুক্তিপণ নিয়ে তীরে ওঠা আট জলদস্যু সোমালি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার

মুক্তিপণ নিয়ে তীরে ওঠা আট জলদস্যু সোমালি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার

সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফেডারেল রাজ্য পান্টল্যান্ডের পূর্ব উপকূল থেকে অন্তত আট জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশ। তাদের দাবি, গ্রেপ্তার জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ “এমভি আবদুল্লাহ” জিম্মিকাণ্ডে জড়িত ছিল। মুক্তিপণ প্রাপ্তি সাপেক্ষে শনিবার (১৩ এপ্রিল) জিম্মি জাহাজ মুক্ত করে তীরে ফিরছিল তারা। ইয়েমেন উপকূলের লোহিত সাগরে হুতিদের আনাগোনা বেড়ে গেলে ভারত মহাসাগর থেকে নজর কিছুটা সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের নৌ-বাহিনী। এই সুযোগে গত কয়েক মাস ধরেই মহাসাগরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল সোমালি জলদস্যুরা। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পান্টল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম গ্যারো অনলাইন। সোমালি পুলিশের ধারণা, জলদস্যুরা আল-শাবাব জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করছিল। গত তিন মাস ধরে তাদের আধিপত্য বেড়ে যায়। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করতে কাজ করছে। পান্টল্যান্ড পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা গ্যারো অনলাইনকে জানান, তারা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ “এমভি আবদুল্লাহ” জিম্মিকাণ্ডে জড়িত জলদস্যু দলের আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে মুক্তিপণের অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পান্টল্যান্ড পুলিশের এক কর্মকর্তা গ্যারো অনলাইনকে বলেন, মুক্তিপণ দেওয়ার অভ্যাস জলদস্যুতাকে আরও উৎসাহিত করতে পারে। মুক্তিপণের আশায় পান্টল্যান্ডের উপকূল এলাকায় চলাচল করা জাহাজগুলো প্রায়ই জলদস্যুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই উপকূলীয় এলাকায় বেশ কয়েকটি জলদস্যু দলকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের দেশে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এজন্য সোমালি কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ “এম ভি আবদুল্লাহ”। এরপর তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। নিজ দেশের উপকূলে নেওয়ার নয় দিনের মাথায় দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরমধ্যে সোমালি পুলিশ ও আন্তর্জাতিক বাহিনী ওই জাহাজে অভিযান চালাতে চাইলেও নাবিকদের সুরক্ষা বিবেচনায় তাতে সায় দেয়নি জাহাজটির মালিকপক্ষ। তবে নানা পর্যায়ে দর-কষাকষির পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছছিল বলে ঈদের আগেই আভাস দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা যায়, পাঁচ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ পাওয়ার পর “এম ভি আবদুল্লাহ” ছেড়ে দেয় সোমালি জলদস্যুরা। তবে  মুক্তিপণ পাওয়ার পরে জলদস্যুদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। পান্টল্যান্ডের মেরিন পুলিশ সোমালিয়ার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমর্থনে উপকূলরেখা বরাবর নজরদারি বাড়িয়েছে। তারা সোমালিয়ায় জলদস্যুতা কমাতে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি পরিচালনা করছে। অভিযোগ রয়েছে, জঙ্গি সংগঠন আল-শাবাব গ্রুপ সোমালিয়ার অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে জলদস্যুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তাদের ঠেকাতে কাজ করছে সোমালি পুলিশ ও আন্তর্জাতিক বাহিনী। এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ “এমভি জাহান মণি”। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেবার ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে জিম্মি নাবিকরা মুক্তি পায় বলে জনশ্রুতি আছে। ওই সময় কেনিয়া হয়ে সোমালিয়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল টাকাভর্তি দুটি ব্যাগ। তবে এবার কিভাবে উভয় পক্ষ মুক্তির বিষয়ে একমত হলো তা জানা যায়নি।
Published on: 2024-04-14 16:16:13.41153 +0200 CEST