ঢাকাট্রিবিউন
একদিকে বয়কটের ডাক, অন্যদিকে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকের ঢল

একদিকে বয়কটের ডাক, অন্যদিকে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকের ঢল

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বাংলাদেশিদের একটি অংশ ভারত বয়কটের ডাক দিয়ে আসছেন। এই বয়কটের ডাকে শামিল হতে দেখা গেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাদেরও। দলটির একাধিক নেতা প্রকাশ্যে ভারত বয়কটের ডাক দিয়েছেন। বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যে পাল্টা মন্তব্যও করতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের। এমনকি বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বিষয়টি নিয়ে যখন অনলাইন ও রাজনীতির মাঠে ব্যাপক আলোচনা, তখন ভারতে বাংলাদেশিদের প্রবেশের এক ভিন্ন চিত্র সামনে এসেছে। ভ্রমণ ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য প্রতিবেশি দেশটি অসংখ্য বাংলাদেশিদের অন্যতম পছন্দ। বছরজুড়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। তবে সম্প্রতি ঈদ-উল-ফিতর ও বাংলা নববর্ষের লম্বা ছুটিতে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটক প্রবেশের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতের ইমিগ্রেশন দপ্তর বলছে, গত ৮-১৪ এপ্রিল শুধু বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়েই স্থলপথে গড়ে রোজ ১০ থেকে ১২ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেছেন। এছাড়া আকাশপথে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই বা চেন্নাইয়ের ফ্লাইটে কিংবা পেট্রাপোল ছাড়াও হিলি, ডাউকি বা আখাউড়ার মতো অন্য স্থলসীমান্তগুলো দিয়েও প্রতিদিন ভারতে প্রবেশে করেছেন আরও কয়েক হাজার বাংলাদেশি। সব মিলিয়ে সড়ক, বিমান ও রেলপথে ঈদের ছুটিতে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, সারাবছরই বাংলাদেশ থেকে মানুষ ভারতে গেলেও গত এক সপ্তাহে যে হারে মানুষ প্রবেশ করেছে তা আগে কখনোই দেখা যায়নি। কিছু অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের “ভারত বয়কট” প্রচারণার পটভূমিতে এই পরিসংখ্যান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ভারতের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “লম্বা এই ছুটি আর উৎসবের মৌসুমে বাংলাদেশিদের ভারতে আসার ঢল এটাই প্রমাণ করে যে দুই দেশের মানুষে-মানুষে সম্পর্ক (পিপল-টু-পিপল কনট্যাক্ট) পুরোপুরি অটুট রয়েছে, বরং তা দিনে দিনে নতুন উচ্চতায় আরোহণ করছে।” ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আসলে এবারে ঈদের অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে ভিসার আবেদনের সংখ্যা যেভাবে বেড়ে গিয়েছিল, তাতে আমরা বুঝতেই পারছিলাম ঈদ আর নববর্ষের জোড়া ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে আমাদের মিশনগুলোর কর্মকর্তারা রাতদিন এক করে এই সব আবেদন প্রসেস করেছেন এবং এত অল্প সময়ের মধ্যে এরকম হাজার হাজার ভিসা বোধহয় আমরা আগে কখনো দিইনি।” কলকাতার সদর স্ট্রিট এলাকার এক হোটেল মালিক বলেন, “গত বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের এলাকার সবগুলো হোটেলই পুরোপুরি সোল্ড আউট। আর এর মধ্যে ৯০% অকুপেন্সিই বাংলাদেশিদের।” প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “ভারত বয়কট” ট্রেন্ড চালু হওয়ার পর গত ২০ মার্চ গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর ফেলে দিয়ে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সে সময় তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় 'বয়কট ইন্ডিয়া' প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে। ভারতীয় পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ রয়েছে। ভারতীয় পণ্য বয়কটের এ ঢেউ দৃশ্যমান। সুতরাং জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে বিএনপি ভারতীয় পণ্য বর্জনের এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছে।” এরপর গত ২৩ মার্চ এক সভায় রাজনৈতিক কোনো ইস্যু না পেয়ে বিএনপি ভারত–বিরোধিতা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “পাকিস্তান আমল থেকে যে অপপ্রচার শুনেছি, কোনো রাজনৈতিক ইস্যু যখন থাকে না, তখন একটাই ইস্যু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিয়ে আসে। আগে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আনত আর এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনে। সেটা হচ্ছে ভারত–বিরোধিতার ইস্যু।”
Published on: 2024-04-16 10:44:47.45204 +0200 CEST