ইত্তেফাক
উত্তরে শীতের দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত

উত্তরে শীতের দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত

*চার দিন পরেই পৌষ শুরু। হেমন্তের বিদায়লগ্নে এসে  দেশের সর্ব-উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শৈত্যপ্রবাহ। প্রায় সারা দেশে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারদিক। উত্তরের হিমেল বাতাসে রাতে বাড়ছে শীতের শিরশিরে অনুভূতি। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে এক বেলা। মাঝনদীতে আটকা পড়ছে ছোট-বড় ফেরি। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামে তীব্র শীতের দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।* আবহাওয়াবিদরা জানান, আজ সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে পারে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশ ঢেকে যাবে ঘন কুয়াশায়। আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলেও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাতাসে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে ও বৃষ্টির কারণে ভূপৃষ্ঠে মাটির আর্দ্রতা বৃদ্ধি ও ভারতের হিমালয় পর্বতের পাদদেশ থেকে আগত শীতল বাতাসের কারণে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বেশির ভাগ জেলা ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে দিয়েছিল যা পরদিন শনিবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গতকাল রোববার সকাল ৬টার সময় কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল সারা দেশ। একাধিক জেলায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের আলো দেখা যায়নি। গতকাল রাতে সবচেয়ে ঘন কুয়াশা বিরাজ করেছে ঢাকা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে। আজ সোমবার সকালে ঢাকা শহরে কুয়াশা থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। রাতে মহাসড়কগুলোতে দৃষ্টিসীমা ১০০ থেকে ৩০০ মিটারের নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আজ রাতেও যোগাযোগে দুর্ঘটনার প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, সারা দেশে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। দুই-এক দিনের মধ্যেই আরও হ্রাস পেতে পারে রাতের তাপমাত্রাও। রাজধানীতেও ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমে শীত বাড়তে পারে। মেঘ পুরোপুরি কেটে যাওয়ার পর বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে দেশের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকায় পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৮-১২ কিলোমিটার। গতকাল রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনেই তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুরে এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে সাড়ে ৪ ডিগ্রি। সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। আমাদের প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর বৃষ্টির মতো টিপটিপ করে ঝরা কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথগুলো। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে ঝরছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালবেলা সড়কের যানবাহনগুলো চলেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঘন কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছে কাজের সন্ধানে। বেলা ১১টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। রাজধানী ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৭ দশমিক ৬  ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুরা নিদারুণ দুর্ভোগে পড়েছে। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, সর্দি, কাশিসহ নানা রকম রোগ বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। নিতান্ত দরিদ্র মানুষেরা শীতের কাপড়ের সংকটে পড়েছেন। ঘন কুয়াশার কারণে গম, পেঁয়াজ, আলুসহ শীতকালীন নানা রকম ফসলে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এতে চাষিদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় জানান, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত নিউমোনিয়া আক্রান্ত বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছেন। লালমনিরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ শীতজনিত রোগীদের সেবা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
Published on: 2023-12-11 01:08:42.423435 +0100 CET

------------ Previous News ------------