ইত্তেফাক
টোকাই ভাড়া করে গাড়িতে আগুন, ককটেল নিক্ষেপ

টোকাই ভাড়া করে গাড়িতে আগুন, ককটেল নিক্ষেপ

*আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতোই ঘনিয়ে আসছে পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা ততোই বাড়ছে।  অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা বাড়ছে। ইতিমধ্যে অবরোধ ও হরতাল চলাকালে বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগকালে জড়িত বেশ কিছু মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে এক ডজনের মতো তরুণ ও কিশোর, যারা অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে দিয়ে বাসে অগ্নিসংযোগ ঘটানোর কথা স্বীকারও করেছেন।* এছাড়া গ্রেফতারকৃত আরও কয়েকজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, নির্বাচন ঘিরে পরিকল্পিত নাশকতা ও টার্গেট করে হামলা করার কথা। এছাড়াও গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও দেশব্যাপী মনিটরিং করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতার তথ্য পেয়েছেন। ইতিমধ্যে ‘টাইম ইনেশিয়েটেড আইইডি’ উদ্ধার করা হয়। এটি ব্যবহার করে বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এটার মধ্যে একটা ঘড়ি, পেট্রোল ও ব্যাটারি থাকে। টাইম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বাসের সিটে রেখে দিলে ৫ থেকে ৯ মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়ে দ্রুত গাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই সব ঘটনায় সরাসরি দলীয় নেতাকর্মীরা না জড়িয়ে টোকাই, মাদকাসক্ত ও বেকার তরুণদের বেঁছে নেওয়া হয়। প্রতি বাসে আগুন দিলে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পায়। বোমা হামলা করলে এক থেকে দুই হাজার টাকা পায়। টাকার লোভে এসব টোকাই, তরুণ-তরুণীরা নাশকতা করে আসছে। এমন পরিকল্পনা অনুযায়ীই গতকাল গাজীপুরে রেললাইন কেটে ফেলায় সেখানে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। একইভাবে খুলনার পাইকগাছায় বিচারকের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই দুটি ঘটনায় পুলিশ-র‌্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয় যে, পরিকল্পিতভাবে এসব নাশকতা ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ধরনের নাশকতা আরও বাড়বে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা আশংকা করছেন। তাদের কাছে এমন তথ্যও রয়েছে। শীর্ষ প্রশাসন থেকে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকে এই ধরনের নাশকতা রোধে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ দেশব্যাপী তৎপরতা বৃদ্ধির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে ৪৬ দিনে মোট ২৭৮টি যানবাহন ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সামনে বড় নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে, যা গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে ধরা পড়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সারাদেশে মাঠে নেমেছে র‌্যাব-পুলিশসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থা। সারাদেশে মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পূর্ব পরিকল্পনা হিসেবে গতকাল ভোরে গাজীপুরের ভাওয়ালে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেললাইন কেটে ফেলায় দুর্ঘটনায় পড়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। ভাওয়াল স্টেশনের অদূরে বনখড়িয়া এলাকায় ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। গতকাল খুলনায় আদালতের এজলাস কক্ষে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এটিকে ‘নাশকতা’ বলছে পুলিশ। বুধবার ভোরে পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই আগুনে এজলাস কক্ষে আসামিদের কাঠগড়া ও আইনজীবীদের বসার স্থান পুড়ে যায়। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করা হয়। মিছিল থেকে পুলিশকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ওসিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরে উপজেলার চাতরী চৌমুহনী এলাকার শশী কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় অবরোধকারীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। ১২ ডিসেম্বর সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে রাজধানীর গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের পাশে ‘বাহন পরিবহন’ নামক একটি বাসে আগুন লাগে। এরপর বেলা ১২টা ১৮ মিনিটে গুলিস্তান হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে পুলিশ বক্সের পাশে ‘সময় পরিবহন’ নামের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় মাগুরা সদরের কাচুন্দিতে একটি পিকআপে আগুন লাগে। সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রামে একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত, ৪৬ দিনে হরতাল-অবরোধকারীরা মোট ২৭৮টি যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন দেয়। এতে ২৭৪টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ১৭০টি বাস ১৭০টি, ৪৫টি ট্রাক, ২৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল ও ২৮টি অন্যান্য গাড়ি। বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি গতকাল শেষ হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব নাশকতায় যারা জড়িত তাদের নাম পেয়েছি। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনেক তথ্য পাচ্ছি। কি ধরনের অপরাধ হতে পারে, নাশকতা হতে পারে- গোয়েন্দারা নিয়মিত সেই তথ্য পাচ্ছেন। নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সামনে যে ধরনের সহিংসতা হতে পারে- সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে সারা দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও থাকছে, যাতে কেউ কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে না পারে। নিয়মিত সবকিছু মনিটরিং করা হবে। অতীতেও নাশকতা করে তারা কিছু করতে পারেনি, এবারও পারবে না। কঠোর হাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবো। অপরাধীদের কোন ছাড় দেবো না। র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে, পরিকল্পিত নাশকতা ততো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে দুর্বৃত্তদের। এটা রুখতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা তত্পরতা জোরদার করা হয়েছে। নাশকতা-সহিংসতাসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে র‌্যাব তৎপর রয়েছে।
Published on: 2023-12-13 22:14:42.822515 +0100 CET

------------ Previous News ------------