ইত্তেফাক
নাশকতাকারীরা শনাক্ত হয়নি পুলিশের হাতে ২০০ ফুটেজ

নাশকতাকারীরা শনাক্ত হয়নি পুলিশের হাতে ২০০ ফুটেজ

*তেজগাঁও রেল স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় ঢাকা জিআরপি থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) খালেদ মোশারফ। মামলায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের আসামি করা হয়েছে। নাশকতায় জড়িতদের শনাক্ত করতে দুই শতাধিক ভিডিও ফুটেজ যাচাই -বাছাই করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, পারিবারিক ও হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য জানায়।* মা-মেয়েকে জানালা দিয়ে নামিয়ে দিয়ে নিজে পুড়ে মরলেন খোকন: এ ঘটনায় নিহত অপর দুই যাত্রীর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এরা হলেন আব্দুর রশিদ ঢালি ও খোকন মিয়া। আব্দুর রশিদ ঢালি নেত্রকোনা পৌর বিএনপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি ছিলেন। খোকন মিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায়। নারায়ণগঞ্জের ক্রোনী গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্সটাইলে প্রিন্টিং শাখায় অ্যাসিসট্যান্ট অপারেটর হিসাবে চাকরি করতেন। বৃদ্ধা মা ও এক শিশুকন্যাসহ ট্রেনে নারায়ণগঞ্জের কর্মস্থলে ফিরছিলেন। তেজগাঁও রেল স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন থামার পর তিনি তার বৃদ্ধা মা ও শিশু সন্তানকে নিরাপদে নামিয়ে দেন। এরপর লাগেজ নিতে গিয়ে তিনি আর ট্রেন থেকে নামতে পারেননি। খোকনের চাচাতো ভাই মো. জিলহজ্জ বলেন, ট্রেনটি তেজগাঁও রেল স্টেশনে থামার পর জানালা দিয়ে খোকন তার মাকে বাইরে বের করে দেন। এরপর জানালা দিয়েই তার মেয়েকে মায়ের কোলে দেন। কিন্তু ধোঁয়ায় বগিটি আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় নিজে আর বের হতে পারেননি। । এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান জানান,  রাতে স্বজনরা মর্গে এসে  খোকনের পরিচয় শনাক্ত করে। এতে মনে হচ্ছে এটি খোকনেরই মরদেহ। তবুও ময়নাতদন্ত শেষে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পর স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।  অপরদিকে গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে আব্দুর রশিদ ঢালির ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। তার লাশ গ্রহণ করেন বড় ছেলে মামুন। নেত্রকোনা পৌর সদরের নাগড়া পাড়ায় আব্দুর রশিদের বাড়ি। পৌর সদরে বড়বাজারে তার কাপড়ের দোকান রয়েছে। তার স্ত্রীর নাম কেয়া। দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক ছিলেন। গতকাল বাদ আসর নেত্রকোনা বড়বাজার জামে মসজিদে জানাজা শেষে পৌরসভার সরকারি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয় :ঢাকা জেলার রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হতে পারে। আগুন লাগার সময় যাত্রীরা কেরোসিনের গন্ধ পেয়েছিলেন। এ ঘটনায় পরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আগুন দেওয়া বগিতে থাকা বেশ কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আগুনের সময় তারা কেরোসিনের গন্ধ পেয়েছিলেন। তবুও সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে। চলন্ত ট্রেনে নিরাপত্তায় তিন জন পুলিশ ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তবে তারা সব সময় এক জায়গায় বসে থাকেন না। ট্রেনের ভেতরে তারা রানিং অবস্থায় থাকেন। পুলিশের হাতে দুই শতাধিক ভিডিও ফুটেজ:নাশকতার ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও থানা-পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পিবিআই ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমসহ (সিটিটিসি) বিভিন্ন ইউনিট মাঠে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত দুই শতাধিক সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবির তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার গোলাম সবুর বলেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাবের আগে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ঘটনার পর উত্তরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা এখনো সন্দেহভাজন কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি, চেষ্টা চলছে। সম্ভাব্য সব ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছি। আগুন কোন এলাকায় লাগানো হয়েছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে সিসিটিভি ফুটেজে। তিনি বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত আমরা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে কোনো আগুন বা ধোঁয়ার আলামত পাইনি। তবে, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাব এলাকার ভিডিও ফুটেজে আগুনের আলামত স্পষ্ট দেখা গেছে। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দৃশ্যমান হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন স্টেশনটির মাস্টার, লাইনম্যান ও সিগন্যালম্যান। ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর এটি স্পষ্ট মনে হয়েছে যে, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উঠে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দেওয়া হয় ট্রেনটিতে। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই ট্রেনটি ধীর গতিতে স্টেশন ত্যাগ করে। এদিকে রেলের নাশকতার ঘটনায় রেল মন্ত্রণালয় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। এর অংশ হিসাবে তদন্ত কমিটি গতকাল তেজগাঁও রেল স্টেশন ও কমলাপুরে রেল ইয়ার্ডে রাখা পুড়ে যাওয়া ট্রেনটি পরিদর্শন করেছে। এছাড়া ঘটনার দিন ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, ইঞ্জিন ক্রু, টেকনিশিয়ান, পরিচালক ও অ্যাটেনডেন্সদের পৃথক বক্তব্য গ্রহণ করবে।
Published on: 2023-12-21 01:13:03.268415 +0100 CET

------------ Previous News ------------