ইত্তেফাক
পার্বত্য সীমান্ত দিয়ে আসা অস্ত্র যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে

পার্বত্য সীমান্ত দিয়ে আসা অস্ত্র যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে

*পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসছে অবৈধ অস্ত্র। এসব অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। যাচ্ছে সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের হাতে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।* যদিও সেনাবাহিনীর প্রতিনিয়ত অভিযানের ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ভারতের মণিপুর রাজ্যে গত কয়েক মাসে প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে ২ হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও বাকি ৪ হাজার অস্ত্র এখনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, লুট হওয়া এ কে সিরিজের এসব আধুনিক অস্ত্রের মধ্যে বেশির ভাগই অত্যাধুনিক রাইফেল ও পিস্তল। এগুলো সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার আশঙ্কার কথাও বলেছেন অনেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ পর্যালোচনা সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা সরেজমিনে ঘুরে এলাকার মানুষ, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় সেনাবাহিনীর সরব উপস্থিতির কারণে অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারপরও বিভিন্ন ফাঁকফোকর গলিয়ে অপরাধীরা নিয়ে আসছে অস্ত্র-মাদক। ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও চট্টগ্রাম এরিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে স্থিতিশীল নিরাপত্তা বজায় রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এই দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপত্তার পাশাপাশি বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণসহ আর্তমানবতার সেবায়ও কাজ করছে। নিজস্ব উদ্যোগে কাউকে দূরের হাসপাতালে নিতে হলেও সেই কাজ করে যাচ্ছে। অতিসম্প্রতি কুকি চিনের সঙ্গে সেনাসদস্যদের গোলাগুলি হয়। এতে কুকি চিনের আস্তানা ধ্বংসসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। এই আস্থানায় তারা জঙ্গিদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। একই সঙ্গে তারা অস্ত্র সরবরাহ করে আসছিল। তবে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার হয়েছে। ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়কের কাজ সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড শুরু করেছে। দিনরাত কাজ হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩১৭ কিলোমিটারের কাজ শেষ হওয়ার পথে। এই সড়ক কক্সবাজারে গিয়ে মিলবে। এই সড়কের কাজ শেষ হলে সীমান্ত এলাকার অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এত কিছুর মধ্যেও পার্বত্য এলাকায় বছরে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের নামে থাকা চারটি গ্রুপ। এই চাঁদার টাকা তারা বিদেশে পাচার করে, অস্ত্র কেনে এবং সংগঠনের সদস্যদের দেওয়া হয়। তবে সেনাবাহিনীর কঠোর মনিটরিংয়ের কারণে চাঁদাবাজিও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সীমান্ত এলাকায় এখন নীরবে চাঁদাবাজি হচ্ছে। বেশির ভাগ চাঁদা আসে ঠিকাদার, কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। চাঁদা দিয়েও কেউ তা স্বীকার করে না। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হলে সেনাসদস্যদের উপস্থিতি বাড়লে তিন জেলা পুরো নিরাপত্তার আওতায় আসবে। তখন এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা এলাকাবাসীর। পার্বত্য এলাকার বাসিন্দারা জানান, আগে তারা উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে সঠিক মূল্য পেতেন না। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এখন পরিবহন ব্যয় কমেছে। পাশাপাশি সঠিক মূল্যও পাচ্ছেন। পুলিশের এক হিসেবে দেখা গেছে, গত আট মাসে ২ হাজার ৭৮৫টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর অর্থাৎ চার মাসে ৭৮৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের বেশির ভাগই ঘটে ঢাকা, গাজীপুর, ফরিদপুর, কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়। ভারতের মণিপুর রাজ্যে লুট হওয়া অস্ত্র এসব খুনোখুনিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। মণিপুরের সীমান্তের কাছাকাছি যেসব জেলা আছে, তাদের সতর্ক থাকতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। যাতে এসব লুট হওয়া অস্ত্র সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।
Published on: 2023-12-03 22:15:15.355903 +0100 CET

------------ Previous News ------------