ইত্তেফাক
চিকিৎসা ব্যয় চালাতেই নিঃস্ব পরিবার

চিকিৎসা ব্যয় চালাতেই নিঃস্ব পরিবার

*শুভর বয়স ছয় বছর, এক বছর আগে তার ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। এর পর থেকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি, দফায় দফায় কেমোথেরাপি দেওয়া আর বারবার গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার খরচ আর ঝক্কি সামলাতে ঢাকায় একটা বাসা ভাড়া নিয়ে শুভর চিকিৎসা করাচ্ছে তার পরিবার। ফলে চিকিৎসার ব্যয় বাড়ছে হুহু করে।* মা হেলেনা জানান, গ্রামের পুকুরের কাছে ছোট্ট একটা জমি এরই মধ্যে বিক্রি করেছেন তারা। এরই মধ্যে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তার স্বামী একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। তিন ছেলেমেয়ে তার। দুই ছেলেমেয়েকে বাড়িতে তার মায়ের কাছে রেখে এসেছেন। তাদের পড়াশুনার খরচও পাঠাতে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) যখন শুভর ক্যানসার ধরা পড়ে তখন চিকিৎসকরা বলেছেন, কাছে কোথাও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে। জামালপুর থেকে প্রতি সপ্তাহে এসে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এরপর ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ছেলের চিকিৎসা শুরু করেন, সেই সঙ্গে শুরু হয় পরীক্ষা, কেমো, রক্ত পরীক্ষা ও রক্ত দেওয়ার মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা। হেলেনা বলেন, ‘আমাদের আর কিছু নেই। আত্মীয়স্বজনরাও সহযোগিতা করছেন, তার পরও চিকিৎসার খরচ চালিয়ে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে—এ কথা শুধু শুভর পরিবারের নয়, বিএসএমএমইউতে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ভর্তি এবং আউটডোরে আসা সব শিশু রোগীর পরিবারের একই অবস্থা। এমন বাস্তবতার মধ্যে আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘ক্যানসার চিকিৎসা দুর্লভ নয়, দুর্বোধ্যও নয়’ প্রতিপাদ্য করে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিশু ক্যানসার দিবস। দেশে ৩০ বছর আগে শিশু ক্যানসার চিকিৎসা শুরু হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হলে শিশুরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, ৩৫ শতাংশ রোগী চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা করান না, কিংবা মাঝপথে বন্ধ করে দেন। অবস্থা পরিবর্তনে দেশের বিত্তবানদের শিশু ক্যানসার চিকিৎসায় সহযোগিতা এবং সরকারের পক্ষ থেকে আরও বেশি চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। গত মঙ্গলবার বিএসএমএমইউ ‘ই’ ব্লকের শিশু ক্যানসার বিভাগের সামনে বিছানা পেতে পরিবারসহ অপেক্ষা করতে দেখা যায় অনেক শিশুরোগীকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন ৭০-৮০ জন শিশুকে নিয়ে এখানে অভিভাবকরা অপেক্ষা করেন রক্ত পরীক্ষা, কেমো নিতে এবং তাদের বর্তমান অবস্থা জানতে। আর আউটডোরে ২০০ থেকে ২৫০ জন চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের রক্ত রোগ ও ক্যানসার বিভাগের ৩১ শয্যা সব সময়ই ভর্তি থাকে। একেকটি শয্যার জন্য থাকে দীর্ঘ লাইন। ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আবুবকর সিদ্দিক জানান, এই রোগীরা প্রথমে অনেক দিন জ্বরে ভুগে স্থানীয় চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা করান। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পর কয়েক মাসেও যখন জ্বর কমে না, তখন তারা শহরে আসেন। আর বিএসএমএমইউর শিশু ক্যানসার ও রক্তরোগ বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ওষুধ ও বিনা মূল্যে বিছানা এবং কমন কিছু কেমো সরবরাহ করা হয়। এই রোগের অ্যান্টিবায়োটিকের দাম বেশি, রোগভেদে দামি কেমোর সঙ্গে তাদের পরীক্ষা এবং থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিলিয়ে খরচের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যায়। *বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান* শিশু রক্ত রোগ ও ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশের মহাসচিব ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু দরিদ্রদের ক্যানসার চিকিৎসায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, উন্নত দেশে দরিদ্রদের ক্যানসার চিকিৎসায় স্পন্সর করেন বিত্তবানরা। একেকটি বেড একেক জন বিত্তবানের জন্য বরাদ্দ থাকে। সেই বেডের রোগীর চিকিৎসার ব্যয়ভার সম্পূর্ণ বহন করেন তিনি। আমাদের সরকারের যে বাজেট আছে তা দিয়ে সবার জন্য দামি ওষুধ সরবরাহ সম্ভব নয়। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ক্যানসার চিকিৎসায় ওষুধ ও কেমোর বাজেট প্রসঙ্গে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘পুরো অবস্থাটা আমি খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
Published on: 2024-02-14 22:10:53.044981 +0100 CET

------------ Previous News ------------