ইত্তেফাক
কীভাবে মিলতে পারে সমাধান?

কীভাবে মিলতে পারে সমাধান?

*রাজধানীর বেইলী রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামে সাততলা ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডের পর নানা ধরনের ত্রুটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস তিন দফা নোটিশ দিলেও কাজ হয়নি। এগুলো তদারকির দায়িত্ব আসলে কার? কীভাবেই বা মিলতে পারে সমাধান? ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ও বুয়েটের শিক্ষক সমাধানের সূত্র দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।* তিন জন বিশেষজ্ঞই বলেছেন, ঢাকা শহরে যে কয়েক লাখ ভবন সেগুলো পরিদর্শন করে ত্রুটি বের করতে সরকারি দপ্তরের কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রয়োজন অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মতো তদারকি। যে কারণে গার্মেন্টস সেক্টরের বিরুদ্ধে এখন আর কোনো অভিযোগ নেই। রানা প্লাজা ও তাজরিন গার্মেন্টেস দুর্ঘটনার পর গার্মেন্ট মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধি ও বিদেশি ক্রেতাদের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স। যাদের তদারকিতে কাজটা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন জায়গায় অযোগ্য, অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজদের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা শহরের ব্যবস্থাপনা বলতে গেলে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। একটা শহরে কত ধরনের কর্তৃপক্ষ আছে। কেউ দায়িত্ব নিয়ে কাজটা করছে না। তিতাস, রাজউক, ওয়াসা, পুলিশ, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর যাদের যা দায়িত্ব তারা তা পালন করছে না। ফলে দিন দিন শহরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।’ এই অধ্যাপকের মতে, ‘এখন ঢাকা শহরের যে অবস্থা তাতে কোনো কর্তৃপক্ষই এককভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজটা করতে পারবে না। এত ভবন তদারকির সুযোগও তাদের নেই। ফলে এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা টাস্কফোর্স করতে হবে। একটি ভবন করতে হলে যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিতে হয়, তাদের এই টাস্কফোর্সে রাখা যাবে না। টাস্কফোর্সের অধীনে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। এখন বিশেষজ্ঞরা কীভাবে কাজটা করবেন? বিশ্বের অন্য দেশের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তদারকিতে নিযুক্ত করতে হবে। অবশ্যই ঐ প্রতিষ্ঠানের দক্ষ জনবল থাকতে হবে। যেভাবে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের গার্মেন্টস খাত।’ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান বলেন, ‘যে কোনো কাজ করার আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। একজন আরেক জনের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি থার্ড পার্টিকেও নিযুক্ত করতে হবে। যাদের জবাবদিহিতা থাকবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঢাকা শহরের এই লাখ লাখ ভবন তদারকি করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। পাশাপাশি আজ তদারকি করে চলে আসলে কালই আবার তারা অনিয়ম শুরু করবে। ফলে তাদের নিয়মিত দেখভাল করতে হবে। এতে দ্রুত সমাধান পাওয়া যাবে।’ থার্ড পার্টিকে কীভাবে কাজে লাগানো যাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক একটি এলাকা একটি কোম্পানিকে দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তদারকি করবে। তারা নিয়মিত পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবে। তাহলে এক ধরনের জবাবহিদিতা থাকবে। যখন যেখানে যার ত্রুটি পাওয়া যাবে, তখনই তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকে রিফর্ম করতে হবে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে রিফর্ম হলেও ফায়ার সার্ভিসে হয়নি। তাদের হয়তো কিছু যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি আগুন তো শুধু বাংলাদেশে লাগে না, সারা বিশ্বেই লাগে। একটি উন্নত দেশকে আমরা ফলো করতে পারি। তাদের গুড প্র্যাকটিস কী সেটাও ফলো করতে পারি। সবমিলিয়ে আগে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা।’ নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘আবাসিক ভবনের চেয়ে বাণিজ্যিক ভবনের নিরাপত্তা আরও বেশি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বেইলী রোডের ভবনটিতে সেটা ছিল না। এখানে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন সবার দায় আছে। কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। এখন কীভাবে সমাধান আসতে পারে? প্রথমত প্রত্যেককে দায় নিতে হবে। ব্যবসায়ীর দায় আছে, জনগণেরও দায় আছে। সবাইকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দ্রুতই রাজধানীর ভবনগুলোকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব।’ কীভাবে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে যে ভবনগুলো আছে, সেগুলোকে দুইটা ভাগ করতে হবে। প্রথমত, আবাসিক ও দ্বিতীয়ত বাণিজ্যিক। এবার বাণিজ্যিক ভবনগুলোর মধ্যে বহুতল ভবনগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। সেই কাজ যদি সরকার একা না করতে পারে তাহলে থার্ড পার্টি এখানে যুক্ত করা যেতে পারে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল সাবজেক্টের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়কে একেকটা এলাকা তদারকির জন্য দেওয়া যেতে পারে। আবার এখন অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে, যাদের এই ধরনের তদারকির সক্ষমতা আছে। তাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে। মূল কথা হলো, সদিচ্ছা নিয়ে কাজটা শুরু করতে হবে।’
Published on: 2024-03-03 01:20:00.725528 +0100 CET

------------ Previous News ------------