মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি কর্মীরা শনিবার রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তারা বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে দিনভর তা-ব চালায়। তাদের হামলায় নিহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য। আহত হয়েছেন ৪১ জন। হামলায় পুলিশ ছাড়াও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। এ সময় কাকরাইল, পল্টন, রাজারবাগ, বিজয়নগরসহ আশপাশের এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুরের পর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হলেও সেটা শেষ হয় সন্ধ্যায়। বিকেলে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর পুলিশ ওই এলাকার আশপাশের অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে দুর্বৃত্তদের ধরার অভিযানে নামে। হামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় শতাধিক। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় ওই এলাকায় ছিল ভুতুড়ে পরিবেশ। থমথমে পরিস্থিতির মাঝেও দেখা গেছে বিজিবিসহ বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী রাজধানীতে টহল দিতে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখতে দুপুর ও সন্ধ্যায় মাঠে নামানো হয় বিজিবির ২১ প্লাটুন সদস্য।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে প্রধান বিচারপতির বাস ভবনেও হামলা চালানো হয়েছে। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও জাজেজ কমপ্লেক্সে আগুন দেয় তারা। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও আইডিইবি ভবনের গাড়িতে আগুন এবং ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ বক্স ভাঙচুর ছাড়াও খিলগাঁও বিশ্বরোড, কাকরাইল, রমনা পার্ক সংলগ্ন এলাকা, মগবাজার, মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপরে, কমলাপুর রেল স্টেশন এলাকায় একাধিক বাস, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেয়া হয় শাহজাহানপুরে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতেও। তাদের হামলায় ও মারধরে ২১ জন গণমাধ্যমকর্মীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে ১৩০ জন শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ৩৩ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের থেমে থেমে সংঘর্ষে পল্টন, কাকরাইল, বিজয় নগর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরও বেশ কয়েক জায়গায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর চালিয়েছে তারা।
বিএনপি কর্মীদের এমন তা-বের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছিল তারা ১০ লাখ লোক সমাবেশে আনবে। তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে পর্যন্ত হামলা চালিয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল যাচ্ছিল, সেই মিছিলে বিএনপি হামলা করে। শুধু হামলা করেই বিএনপি ক্ষান্ত হয়নি, তারা একাধিক বাস, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সমাবেশে তারা লাঠি এনেছিল। আইডিইবি’র তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আগুন লাগিয়ে দেয়। অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের ছোট বড় স্থাপনায় আগুন দেয়। এ ছাড়া কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়। জাজেজ কমপ্লেক্সেও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। মন্ত্রী আরও বলেন, একজন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক ছাত্রদল নেতা। তাকে কুপিয়ে মাথা ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। তার ফুটেজ আমাদের কাছে আছে।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে বিএনপির নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়েছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি নিলেও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ হাসপাতাল এবং রাষ্ট্রীয় অনেক ভবনে হামলা চালিয়েছে তারা। পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য পাল্টা অ্যাকশনে গিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিএনপির ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি তারা এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে থাকে এবং হরতালের নামে যদি কেউ নৈরাজ্য করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
তবে বিএনপি বলছে, তাদের নেতাকর্মীরা নয়; পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারশেল ছুড়ে পন্ড করে দেয়। এমন অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যৌথ হামলা চালিয়েছে। এর প্রতিবাদে রবিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দেন তিনি।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৩০ জন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার অস্ত্রোপচার করা হবে।
যেভাবে সংঘর্ষের সূত্রপাত ॥ সংঘর্ষের সূত্রপাত কাকরাইলে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে চলবে- এই শর্তে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। তবে পূর্বঘোষিত সমাবেশ শুরুর আগেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বিএনপি। হঠাৎ করে হামলা শুরু করে বিএনপির কর্মীরা। বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ কর্মী বহনকারী বাস কাকরাইল পৌঁছালে বিএনপি কর্মীরা তা আটকে দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা নেমে এলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ এসে বাসটিকে যাওয়ার পথ সুগম করে দিলে বিএনপি কর্মীরা বাসে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে।
বেলা একটার দিকে বিএনপি কর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়। এখান থেকে ধীরে ধীরে কাকরাইল, পল্টন, শান্তিনগর, আরামবাগ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরাই প্রথমে সরকারি স্থাপনায় হামলা করে। বিএনপি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করার কথা দিয়েছিল। ডিএমপি কমিশনারের কাছ থেকে তারা এমন শর্তেই অনুমতি নিয়েছে। হঠাৎ করে বেলা ১২টার পর থেকে তারা একটি বাসে হামলা চালানোর পর পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে গেলে তারা প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে ও জাজেস কোয়ার্টারের সামনে (বিচারকদের বাসভবন) হামলা চালায় । এ সময় তারা আইডিবি ভবনের সামনে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা অডিট ভবনে ঢুকে পড়ে এবং আগুন দেয়। অপর একটি গ্রুপ হঠাৎ প্রধান বিচারপতির বাাড়িতে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাছের ডাল ভেঙে ও হাতের লাঠি দিয়ে নামফলক, গেটে হামলা চালায়। তারা ভেতরে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এর মধ্যে কাকরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয় বিএনপির অনুসারীরা। পুলিশ বাধা দিতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংর্ঘষ বাঁধে।
এই ঘটনার রেশ ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। বিএনপি সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক দফায় টিয়ারশেল ছোড়া হয়। দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিএনপির সমর্থকরা। বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এর আগে হাইকোর্ট মাজারের সামনে হামলায় মো. সুজন (২৬) নামে এক যুবলীগ কর্মী আহত হন।
পুলিশ জানিয়েছে, দুপুরের দিকে কাকরাইলে রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সামনে বৈশাখী পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুর করে বিএনপি কর্মীরা। বাসযাত্রী নাসিরকে হাসপাতালে নিয়ে মো. মুক্তা জানান, বৈশাখী বাসে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবক হামলা
চালায়। এতে বাসে থাকা নাসির আহত হন। একই সময় মগবাজারে বলাকা পরিবহনে হামলা চালানো হয়। এতে আহতরা হলেন বিএম রাজু কামাল (৫০) ও মো. সুমন (৩৫)। দুপুর সাড়ে বারোটা ও ১টার দিকে তাদের দুজনকে আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। বিএম রাজু কামালের সহকর্মী আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা সবাই এসেনসিয়াল ড্রাগসে চাকরি করি। রাজু এসেন্সিয়াল ড্রাগসের ভা-াররক্ষক পদে চাকরি করেন। এদিন কোনো বাস না পেয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি বলাকা বাস পেয়ে আমরা তাতে উঠে পড়ি। হঠাৎ বিএনপির কর্মীরা আমাদের বাস ভাঙচুর শুরু করেন। এতে কামাল ভাই গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাই। বর্তমানে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার চিকিৎসা চলছে।
অপরদিকে মগবাজারে বাসে আহত সুমন বলেন, আমরা বাসে করে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যাচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে বিএনপির কর্মীরা আমাদের বাসে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেড আর বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষের কারণে বলাকা পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে রামপুরা সড়ক দিয়ে চলে যেতে চায়। কিন্তু মৌচাক মোড়ের ঠিক ওপরেই লাঠি হাতে একদল যুবক বাসের গতিরোধ করে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় আতঙ্কিত যাত্রীরা বাস থেকে হুড়োহুড়ি করে নেমে যায়। একপর্যায়ে তারা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এক পুলিশ সদস্য নিহত ॥ বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তার নাম আমিরুল ইসলাম। এ সময় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নিহত আমিরুল মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার সেকেন্দার আলী মোল্লার ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুরের দিকে দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছোড়া একটি ইট নিহত কনস্টেবলের মুখে লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২২ জন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জন পুলিশকে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় ঢামেক হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক এক পুলিশ সদস্যকে মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে ফকিরাপুল চার রাস্তার মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে তিনি গুরুতর আহত হন। বিকেল ৪টার দিকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আনেন এক যুবক। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, মৃত অবস্থাতেই ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। আমরা ইসিজি করার পর নিশ্চিত হয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেছি। তার লাশ ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মর্গে রাখা হয়েছে। ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা রায়হান রাবদি নামে এক যুবক জানান, বিকেলে ফকিরাপুল মোড়ে পুলিশের ওপর যখন হামলা হয়, তখন ওই পুলিশ সদস্যসহ ৪ পুলিশ একটি ভবনে ঢুকে পড়েন। ভয়ে তাদের সঙ্গে তিনিও ভবনটিতে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকে ওই পুলিশ সদস্য বাইরে বের হলে তার ওপর হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এ সময় পুলিশ সদস্যকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তার মাথায় আঘাতে লাগে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তা পড়ে যান। পরে সেখান থেকে তিনি ও অন্য পুলিশের সহায়তায় গুরুতর আহত ওই পুলিশ সদস্যকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এএসআই সামাদ, নায়েক আব্দুর রাজ্জাক, পুলিশ কনস্টেবল আসাদুজ্জামান, কাইয়ুম ও আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ বিষয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, কারা হামলা করেছে, এখনো তা চিহ্নিত করা যায়নি। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আগুন ॥ বিকেল সোয়া ৩টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পাশে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানান, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও ৭টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের গেটসহ একাধিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক জানান, আগুনের ঘটনা তারা জানতে পেরেছেন। খবর পাওয়া মাত্র হেডকোয়ার্টার এবং খিলগাঁও এলাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের মোট চারটি গাড়ি দুই ইউনিটে ভাগ হয়ে রওনা করে। তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি।
কয়েক সাংবাদিক আহত ॥ বিকেলে নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিএনপি সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকদের ওপর। এ সময় কালবেলার ক্রাইম রিপোর্টার রাফসান জানি মোবাইল দিয়ে হামলার ভিডিও করছিলেন। এতেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর হামলে পড়ে। তাকে লাঠি ও গাছের ডাল দিয়ে পেটানো শুরু করে। বাঁচার জন্য রাফসান দৌড় দিলে তাকে ধাওয়া করে পেটানো হয়। ১২তলা ভবন পর্যন্ত পেটাতে পেটাতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হামলাকারীরা রাফসানের মোবাইল ফোন ও আইডিকার্ড ছিনিয়ে নেয়।
এ সময় সেখান থেকে জিটিভির কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তার মাথায় বড় জখম ছিল। তার সারা শরীরেও জখম। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ সময় গ্রিন টিভির বিশেষ প্রতিনিধি রুদ্র সাইফুল্লাহ ও ক্যামেরা পার্সন আরজু এবং ঢাকা টাইমসের স্টাফ রিপোর্টার সালেকিন তারিনসহ আরও বেশ কয়েক সাংবাদিক বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত ও আহত হয়েছেন বলে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা
এ তথ্য জানান। এ ছাড়াও নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে পথচারীসহ অন্তত বিশজন আহত হয়েছে। পরে তাদের ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢামেকে চিকিৎসা নিতে আসা আহতরা হচ্ছেনÑ নাসির (২৫), সুজন (২০), নওয়াব আলী (৬০), জাফর (৩০), কালাম (৫৫), আলামিন প্রধান (২৫), রাফিন (২২), মারুফ (৪৬), এবিএম রাজু (৪৫), হুমায়ুন কবির (৩৫), লিয়ন (২২), আকলিমা (৩৫), সজীব হোসেন (২৬), সালেক (৩০), সজীব ভূঁইয়া (৩০), রাফসান জানি (৩০), মাসুম (৩২), বিল্লাল (২৫), রুবেল (২৫), কালাম (৩৮), নান্নু (৩৫), আকরাম (২০), মানিক (৩৫), রফিকুল ইসলাম (৩০), রাজু আহামেদ (৩৫), কবির (২৫), নয়ন (২৬), এমদাদুল (২৭), আনোয়ার (৪০), জমি (৩৪), হিয়া (২০), রাসেল (১৮), রোকসানা (৪২), রোমান (২৮), আরিন (৫২)।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, বেলা ১১টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩৫ থেকে ৪০ জন আহত হয়ে এসেছেন। আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি। অনেককে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এক ঘণ্টায় ৩ বাসে আগুন ॥ এদিন বিকেলে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িসহ তিনটি বাস ও পুলিশের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে কাকরাইল, মালিবাগ ও কমলাপুরে এসব ঘটনা ঘটে।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। একই সময়ে কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, বিকেলে মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা বাসে ও কমলাপুরে বিআরটিসি বাসে আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বাস দুটি পুড়ে গেছে। কীভাবে আগুন লেগেছে, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে কাকরাইল মোড়ে একটি বাসে আগুন দেয় হামলাকারীরা। ডিএমপির রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, কাকরাইল মোড়ে একটি বাসে আগুনের ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে যাই।
সর্বশেষ সন্ধ্যায় শাহজাহানপুরে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তা নিভাতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া সেগুনবাগিচায় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
গুলিতে আহত জামায়াত কর্মী ঢামেকে ॥ এদিকে আরামবাগ এলাকায় মো. নবাব আলী (৬০) নামের এক জামায়াত কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন বলে দাবি জামায়াতের। শনিবার দুপুর সোয়া একটার দিকে গুলিবিদ্ধ নবাব আলীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। বর্তমানে তিনি ঢামেকে চিকিৎসাধীন।
গুলিবিদ্ধ নবাব আলী বলেন, ‘বাগেরহাটের ফকিরহাট থেকে ঢাকায় সমাবেশে এসেছি। মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় আমার ডান পায়ে গুলি লাগে। এরপর সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আসেন।
চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে র্যাব ॥
রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
শনিবার সন্ধ্যায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক ভিডিও বার্তায় একথা বলেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও আক্রমণ চালায়। তারা গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
তাদের হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য হতাহত হয়। তারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ করে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাড়িতেও হামলা করে। বিভিন্ন সমাবেশে দায়িত্ব পালনরত গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর তারা হামলা চালায়। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন সড়কে স্থাপিত সিসিটিভিও ভাঙচুর করে।
তিনি বলেন, যেসব লোক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম কর্মীসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র্যাব। র্যাব ফোর্সেসের গোয়েন্দারা গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে।
ছাত্রদল নেতা কুপিয়ে মেরেছে পুলিশ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ নয়াপল্টন, কাকরাইল ও নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটের দিকে আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে প্রবেশ করেন তারা। এ সময় তিনি বলেন, ঢিল ছুড়ে রা¯তায় ফেলার পর এক ছাত্রদলের নেতা পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল ১০ লাখ লোক তারা হাজির করবে। ডিএমপি কমিশনারের কাছে তারা জানিয়েছিল, একদিকে তারা নাইটিঙ্গেল মোড় অন্যদিকে ফকিরাপুল পর্যন্ত এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে দেখলাম তারা আসতে আসতে প্রধান বিচারপতির বাসভবন পর্যন্ত এসেছে। ঘটনার সূত্রপাত সেখানে। এ সময় আওয়ামী লীগের একটি মিছিল যাচ্ছিল। তাদের ওপর হামলা চালায়। সেখানে তারা দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তো পুলিশ আর নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না। পুলিশ তার কাজ করেছে। তাদেরকে ডিসপাস করে দিয়েছে।
ক্ষণে ক্ষণে তারা ঢিল ছুড়েছে, আগুন দিয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ করেছে। তারা সবাই হাতে লাঠি নিয়ে এসেছে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ভেতর তিনটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। সেখানেও পুলিশ ধৈর্যসহকারে মোকাবিলা করেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালেও আগুন দিয়েছে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছে। বেশকিছু সরকারি- বেসরকারি স্থাপনায় আগুন দিয়েছে। জাজেজ কমপ্লেক্সে আগুন দিয়েছে।
পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রথমে তারা ঢিল ছুড়েছে, সে যখন পড়ে গিয়েছে, তখন ছাত্রদলের নেতা তাকে নৃশংসভাবে পিটিয়েছে, তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মাথা ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। এই দৃশ্য আমাদের সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছে। আসলে তাদের একটি ঘোষণা ছিল তারা একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে, ২০১৪ সালে যেমনটি করেছিল। তবে আমাদের পুলিশ সদস্যরা চরম ধৈর্যসহকারে মোকাবিলা করেছে। আগামী দিনেও করবে। তারা আগামীকাল হরতাল ডেকেছে।
বাস পোড়াচ্ছে। তবে আমরা নিশ্চয়তা দিতে চাই, যেই অগ্নিসংযোগ করবে, ভাঙচুর করবে, আমরা ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে আহত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২২ জন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অলিতে-গলিতে পুলিশ ॥ বিএনপির তা-ব নিয়ন্ত্রণে আনার পর পুলিশ আশপাশের অলিগলিতে অবস্থান নেয়। বিকেলেই জলকামান, এপিসি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য সম্মিলিতভাবে অ্যাকশনে যায়। টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, ফাঁকা গুলি আর লাঠিচার্জ করে রাজপথ দখলে নেয় পুলিশ। সন্ধ্যার পর অলিগলিতে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী অবস্থানের কারণে দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে নয়াপল্টনের মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। তারা রাতে বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়। সংঘর্ষও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে।
সন্ধ্যার পর রাজধানীর কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, মতিঝিল, বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক, ফকিরাপুল, এজিবি কলোনি, সরকারি কোয়ার্টার, রাজারবাগ ও খিলগাঁও-শাহজাহানপুর এলাকায় অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে শতাধিক লোককে আটক করা হয়। পথচারীদের মধ্য থেকেও অনেককে সহিংসতার অভিযোগে আটক করা হয়। কারও কারও মোবাইল ফোন তল্লাশি করে আটক করতে দেখা গেছে পুলিশকে। সুযোগ পেলেই গলি থেকে বের হয়ে ঢিল ছুড়ছেন নেতাকর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা ধাওয়া দিচ্ছে পুলিশ। ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন গলি থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলির শব্দ ভেসে আসে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির উপ-কমিশনার আবু ইউসুফ বলেন, পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। অনেককেই আটক করা হয়েছে। তবে সংখ্যাটা নিশ্চিত করে পরে জানানো হবে। সর্বত্রই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ডিএমপি কমিশনার পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন। গোয়েন্দা উইংগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
কাকরাইলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ॥ এর আগে রাজধানীর কাকরাইলে শুক্রবার রাতে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর ওই ভবনে অভিযান চালিয়ে বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে কাকরাইলের একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। তিনি জানান, রাতে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীরা যেন কোনো ধরনের অঘটন ঘটাতে না পারে এজন্য পুলিশ কাকরাইল ও তার আশপাশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ওই নির্মাণাধীন ভবনের সামনে আসামাত্র ১৫ থেকে ২০টি ককটেল পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করা হয়।
গোয়েন্দা প্রধান জানান, কাকরাইলের ওই ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, ভবনটিতে কয়েকশ নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। ভবনের ভেতরে রড, লাঠি, ককটেল, চাল, ডাল ও ইটভাঙা পাওয়া যায়। পরে সেখান থেকে প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
Published on: 2023-10-28 20:00:14.673701 +0200 CEST
------------ Previous News ------------