ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে মোংলা সমূদ্র বন্দর ও সংলগ্ন এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টির তীব্রতা ক্রমশ: বাড়ছে। তবে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে।
শুটকী মৌসুম শুরু হওয়ায় দুবলা জেলেপল্লীতে থাকা ১০ হাজার জেলে-বহদ্দার ট্রলারসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। শুকনো, আধা শুকনো ও কাচা মাছের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। রবি শস্য ও উঠতি পাকা ধানের ক্ষতির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। মৎস্য চাষিরা ঘের ভেসে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অপরদিকে, সুন্দরনসংলগ্ন শরণখোলার বলেশ্বর তীরে ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধের একাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে। প্রায় ৭০০ মিটার বাঁধের ব্লক ধসে বিলীন হয়েছে বলেশ্বর নদে। সম্প্রতি গত ১৮ অক্টোবর বলেশ্বরের ভাঙনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ বেড়িবাঁধের গাবতলা নামক স্থানে মূল বাঁধের নিচে ১০০ ফুট এলাকার বেশ কিছু সিসি ব্লকও নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
এছাড়া শরণখোলা উপজেলার বগী, ও মোরেলগঞ্জের আমতলা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। বাঁধের ব্লক ধসে বিলীন হচ্ছে নদীতে। এখানে ব্যাপক এলাকা জুড়ে বিশাল ফাটল ধরেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এ অবস্থা ‘মিধিলি’ নিয়ে এ এলাকার মানুষ খুবই চিন্তিত, উৎকণ্ঠিত।
‘মিধিলি’ মোকাবেলায় বাগেরহাটে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরি সভা অনুষ্টিত হয়েছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা: খালিদ হোসেন এর সভাপতিত্বে জুম অনলাইনে অনুষ্টিত এ সভায় জেলার সকল বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তা এবং সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ জনপ্রতিনিধি ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সকল ধরণের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির বিষয়ে মতামত গ্রহণ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জেলার ৪৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্টান প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করার কথা জানানো হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি উপলক্ষে ডিসি মোহা: খালিদ হোসেন বলেন, আমদের ৪৪৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ শিক্ষা প্রতিষ্টান প্রস্তুত রয়েছে। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়ন কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার ও পানিসহ চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সুন্দরবনের দুবল্লা জেলেপল্লীতে থাকা জেলেদের নিরাপদে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ
ক হাজার ৯২০ জন সিপিবি সদস্য এবং রেডক্রিসেন্ট, বিএনসিসিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের ৫০০ জন সদস্য প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন এনজিওকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের ভাষায়, দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগ কালিন এবং দুর্যোগ পরবর্তি সকল ধরণের সমন্বিত প্রস্তুতি আমরা গ্রহন করছি। মানুষ যত বেশিশী সচেতন হবে, ক্ষয় ক্ষতি তত কম হবে।
সিভিল সার্জন ডা: জালাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ১০ টি মেডিক্যাল টিম ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও কাজী নুরুল করিম জানান, দুবলা জেলেপল্লীতে শুটকী মৌসুম হওয়ায় বর্তমানে ১০ হাজার জেলে আছেন। তাদেরসহ সুন্দবনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে মনিটরিং করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা সদরসহ প্রতি উপজেলায় কুইক রেসপন্সটীম গঠন করা হয়েছে। এদিকে কোস্টগার্ডে ও নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপের ফলে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ সংলগ্ন এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। ‘মিধিলি’র প্রভাবে সাগর উত্তাল ও ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি বাড়ছে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ মজুমদার বলেন, চলতি মাসের শুরুতেই সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। বিভিন্ন চরে এ মৌসুমের প্রথম দফায় আহরিত মাছও শুকিয়েছেন জেলেরা। ঘুর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র ফলে শুকনো, আধা শুকনো ও কাচা মাছের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। শুঁটকির ক্ষতির পাশাপাশি সাগর উত্তাল থাকায় জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই দুর্যোগের কবলে পড়ায় এ পল্লীর জেলেরা আর্থিক ক্ষতিতে পড়বেন।
Published on: 2023-11-17 08:41:39.063516 +0100 CET
------------ Previous News ------------