করোনা মহামারির তিনবছর পর এবার ঈদকেন্দ্রিক রেকর্ড কেনাকাটা হয়েছে সারাদেশে। একদিকে তীব্র দাবদাহ, অন্যদিকে মার্কেটগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকির মতো চ্যালেঞ্জ থাকার পরও রমজানের শুরু থেকে ক্রেতাদের ঢল ছিল মার্কেটগুলোতে। ব্যবসায়ীরা ঈদের চাঁনরাত পর্যন্ত বেচাকেনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কাপড়-চোপড় ও অন্য পণ্যসামগ্রী নিয়ে প্রস্তুতি রেখেছেন। তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে মার্কেটে ছুটে আসছেন সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের মতে, ঈদের এই কেনাকাটায় চাঙ্গা হয়েছে দেশের খুচরা অর্থনীতি। ঈদকে ঘিরেই রেমিটেন্সের জোয়ারে ভাসছে আর্থিক খাত।
শুধু রমজান মাসেই ২৫০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার সংকট কেটে যাচ্ছে এবং শক্তিশালী হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। আগামী জুন মাস নাগাদ দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে দিন দিন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, ঈদ উৎসব ঘিরে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবাতাস বইছে। অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা এবং বাজার সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবারের ঈদে অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ায় ক্রমে বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি। উৎসব কেন্দ্রিক এই বাণিজ্য দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে। মহামারি করোনা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হওয়ার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নতুন করে চাপের মুখে পড়ে দেশের অর্থনীতি। তবে ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রির কারণে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে আবার গতি ফিরে এসেছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি এবং ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের বড় উৎসব রোজার ঈদ। এই ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা সারাবছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। করোনা মহামারির তিন বছর পর এবার রেকর্ড কেনাকাটা হয়েছে সারাদেশে। বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটসহ সারাদেশে আরও কয়েকটি অগ্নিকা-ের মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু ঈদের বেচাবিক্রি সারাদেশে ভাল হয়েছে। সব ক্ষতি সামলে নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো, আমিন হেলালী জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছরে রেকর্ড ছাপিয়ে এবার বেচাবিক্রি আরও বেড়েছে। সর্বস্তরের মানুষ ঈদ উৎসবে শামিল হচ্ছেন। প্রবাসী ভাইবোনেরা আত্মীয় স্বজনের কাছে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। এর ফলে আমাদের ডলার সংকট কেটে যাচ্ছে। এ কারণে ঈদ খুচরা অর্থনীতিকে যেমন চাঙ্গা করছে ঠিক তেমনি আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে শক্তিশালী করবে। আমরা আশা করছি, আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা তৈরি হয়েছে। সেই তুলনায় আমাদের রপ্তানি ও বিনিয়োগ ও আমদানি পরিস্থিতি ভাল। তীব্র দাপদাহ, অগ্নিঝুঁকি কিছুই ক্রেতাদের থামাতে পারেনি। মানুষ মার্কেটে যাচ্ছে এবং শপিং করছে। অর্থনীতির জন্য এটা স্বস্তিদায়ক বিষয়।
জানা গেছে, উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। বিশেষ করে মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনমান উন্নত হচ্ছে। বাড়ছে তাদের ভোগ্যব্যয় ও কেনাকাটা। ফলে বাজার অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ ঈদের কেনাকাটায় সাধারণত ব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে। ঈদের অর্থনীতিতে পোশাক, জুতা, ভোগ্যপণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্সের মতো শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় বাণিজ্য হবে দেড় থেকে দুই লাখ কোটি টাকার ওপরে।
এর বাইরে আরও অনেক রকম পণ্যের কেনাকাটা ও লেনদেন হবে ঈদকে ঘিরে। যার পরিমাণ হবে প্রায় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা। করোনার প্রকোপ না থাকায় এবার অনেকেই বাড়তি কেনাকাটা করছেন। এছাড়া প্রতিবছর ঈদে রেমিটেন্সের পরিমাণ আরও বাড়ছে। সব মিলিয়ে ঈদে প্রায় দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসায়-বাণিজ্য হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ ব্যবসায়ীদের অন্যান্য সংগঠন। ঈদের অর্থনীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু করোনার কারণে গত তিনবছরে ঈদের অর্থনীতিতে অস্বস্তি ছিল। তবে এ বছর প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন। এখন করোনা নেই। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদের কেনাকাটা করছেন। বৈশ্বিক সংকটের কারণে এবার সব ধরনের পণ্যের দাম একটু বেড়েছে। এরপরও মানুষ কেনাকাটা করছেন। এর ফলে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে।
অগ্নিঝুঁকি কিংবা দাপদাহ থামাতে পারেনি কেনাকাটা ॥ এবার রমজানে দুদফায় পুড়ে যায় বঙ্গবাজার ও ঢাকার নিউ সুপার মার্কেট। এতে করে আশপাশের আরও বেশ কয়েকটি মার্কেটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সরকারি- বেসরকারি নানা উদ্যোগে সেখানকার ব্যবসায়ীরা আবার নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। পুনরায় চালু করেছেন দোকান। এছাড়া তীব্র দাপদাহে এবার মানুষ ভীষণ কষ্টে পড়লেও ঈদ উৎসব পালনে শেষ পর্যন্ত সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে মার্কেটে ছুটে যাচ্ছেন। কিনে আনছেন নতুন পোশাক। এ কারণে ব্যবসায়ীরা হতাশ নন। তারা নতুন স্বপ্ন ও আশা নিয়ে বাণিজ্যিক কর্মকা- পরিচালনা করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হাফেজ হারুন জনকণ্ঠকে বলেন, আগুন ও তীব্র দাপদাহ এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় মার্কেটে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দিকে নজর দিচ্ছি। দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। এই ঈদে সবাই সাধ্যমতো শামিল হতে চায়। আর এ কারণে ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন এবং সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন। ফলে ঈদের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। তিনি জানান, এবার পোশাকসহ অন্য সামগ্রীর দাম তুলনামূলক একটু বেড়েছে। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বেচাকেনা না হলেও গত কয়েক বছরের তুলনায় ভাল হবে বলে আশা করছি।
এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় সব বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোতে গভীর রাত অবধি পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে বাড়ছে ঈদের অর্থনীতির আকার। ঈদের কেনাকাটায় ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বোনাস রয়েছে। এক কোটি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরও প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বোনাস থাকবে ঈদের কেনাকাটায়। এ পরিমাণ টাকার সবই ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি এপ্রিল মাসে রেকর্ড রেমিটেন্স এসেছে দেশে।
১৪ দিনে এসেছে ৯৫ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার ডলারের রেমিটেন্স। বাংলাদেশী মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১০ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। প্রতিদিন আসছে প্রায় ৭ কোটি ডলার। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, ঈদ সামনে রেখে রেকর্ড রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। তাদের বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়াস কাজে আসছে। এভাবে রেমিটেন্স এলে চলতি মাসে আড়াই বিলিয়ন বা ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
ঈদ সামনে রেখে রেমিটেন্স আরও বেশি পরিমাণে আহরিত হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত প্রবাসীরা নিজেদের আপনজনদের কাছে ঈদ উৎসব পালনে বাড়তি টাকা পাঠাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, আগামী তিন মাস পর্যন্ত রেমিটেন্সের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোজার ঈদের পরই শুরু হবে কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি। সেই সময়ও প্রবাসীরা বিপুল অংকের রেমিটেন্স পাঠাবেন। এর ফলে ডলার সংকট কেটে বাড়বে রিজার্ভ। দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়াতে হলে এখন ডলারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
ঈদকে ঘিরে সেই ডলার সংকট কাটবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যবসায়ীরা সারাবছর এই সময়ের জন্য মুখিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বিনিয়োগ করছেন। করোনার কারণে বিধিনিষেধের মুখে গত তিনবছর ব্যবসায়ীরা সেভাবে মুনাফা করতে না পারলেও এবার তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ অনেক বাড়াচ্ছেন। ফলে রিজার্ভ শক্তিশালী হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য যখন চাপের মুখে তখন ঈদের কারণে আমরা ডলার পাচ্ছি। এটা সবচেয়ে ভালো দিক।
দেশের ২৫ লাখ দোকানে হচ্ছে ঈদের কেনাকাটা ॥ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, ঈদে সারা দেশের ২৫ লাখ দোকানে কেনাকাটা চলছে। মুদি দোকান থেকে শুরু করে এসব দোকানের মধ্যে কাপড়ের দোকান, শো-রুম ও ফ্যাশন হাউসগুলোও রয়েছে। এসব দোকানে বছরের অন্য সময় প্রতিদিন ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও রোজার মাসে সেটি তিনগুণ বেড়ে হয় ৯ হাজার কোটি টাকা। ওই হিসাবে রোজার এক মাসে এই ২৫ লাখ দোকানে ঈদ পোশাক থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য বিক্রি হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় পোশাকের বাজারে।
পোশাকের দোকানেই ঈদের কেনাকাটা এবার ৮০ হাজার থেকে এক লাখ কোটি কোটি টাকার বেশি। শুধু তাই নয়, ঈদ ঘিরে অর্থনীতির সব খাতেই গতি ফিরে আসে। ঈদের মাসে যেমন সারাদেশের শপিংমল বা মার্কেটগুলো গতিশীল হয়-তেমনি সারাদেশের কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, দেশীয় বুটিক হাউসগুলোয় বাড়ে কর্মচাঞ্চল্য ও আর্থিক লেনদেন। বিপুল অর্থ ব্যয়ের কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতিশীলতা আসে। ব্যাংকিং খাতে লেনদেন বাড়ে ব্যাপক হারে। এদিকে মানুষের চাহিদা পূরণে বাজারে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছেপেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের অনলাইন বাজার। রোজার আগে অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রভাব থাকে। আর রোজা শুরুর পর থাকে আরেক ধরনের। রোজার আগে অর্থনীতি সচল থাকে ভোগ্যপণ্যকেন্দ্রিক। এ মাসে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রোজা শুরুর প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই মূলত শুরু হয় রোজাকেন্দ্রিক অর্থনীতি। কেননা রোজার জন্য পণ্য আমদানি কার্যক্রম অনেক আগেই শুরু করতে হয় ব্যবসায়ীদের। এছাড়া করোনা না থাকায় এবার রাজনৈতিক দলসহ নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইফতার পার্টির আয়োজন করছে।
এটিও অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বাড়তি এই অর্থ যোগ হবে। এবার ঈদ বাজারকে ঘিরে দেশের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা ও গতিশীল হচ্ছে। এদিকে, রাজধানীর প্রধান প্রধান বিপণিবিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন নগরবাসী। ঢাকার নিউমার্কেট, গাউসিয়া এবং বসুন্ধরা শপিংমলে গিয়ে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। জমে উঠেছে শপিংমল, ফ্যাশন হাউস ও বিপণিবিতানগুলো। বাদ পড়ছে না ফুটপাতও। বাংলার আবহে তৈরি ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শার্ট, থ্রিপিস ও শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা। বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন ক্রেতা বাড়ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপস্থিতিতে তারা সন্তুষ্ট।
একই অবস্থা মৌচাক মার্কেটেও। এখানে থ্রি-পিস, শাড়ি, গহনা, বোরকা আর শিশুদের কাপড়ের দোকানে ভিড় লক্ষণীয়। বেইলি রোডের ইয়েলো, আর্টিসান, সাদাকালো, অঞ্জনস ছাড়াও নাভানা মার্কেটের সব দোকানেই ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে এবার দাম নিয়ে তাদের কিছুটা অভিযোগ রয়েছে। শান্তিনগর থেকে মার্কেট করতে আসা শামীমা নাসরীন জানান, এবার পোশাকের দাম একটু বেশি রাখা হচ্ছে। মূল্য বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে মগবাজার আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী মোর্শেদুল ইসলাম জানান, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। একদিকে ডলার সংকট অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো পোশাকের বাজারেও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, তবে এটা ঠিক অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো বাংলাদেশে জিনিসপত্রের দাম কম। পোশাকের দামও সেই তুলনায় কম রাখা হচ্ছে।
ঈদের আগে ও পরে মার্কেটে কড়া নিরাপত্তায় ব্যবসায়ীরা ॥ এবার অগ্নিঝুঁকি, চুরি, ডাকাতি ও অন্যান্য নাশকতারোধে ব্যবসায়ীরাই মার্কেটে কড়া নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্যবসায়ীরা। সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হাফেজ হারুন বলেন, মার্কেট ও শপিংমল ব্যবসায়ীদের সম্পদ। এ কারণে ঈদের আগে ও পরে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ও পাহারায় নিরাপত্তা রক্ষীর দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া শপিংমলে-অনিয়ম- পেলে-মার্কেট-কমিটির-বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা চাই সবাই আইন মেনে ব্যবসা করুক এবং ভোক্তাগণ যেন ন্যায্যমূল্যে পণ্য পান। শপিংমলগুলোতে অনিয়ম পেলে মার্কেট কমিটিকে দায়ী করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Published on: 2023-04-18 19:52:36.641092 +0200 CEST
------------ Previous News ------------