সহজ শর্তে বাংলাদেশকে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা (প্রতি ডলার ১০৬ টাকা ধরে) ৩১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। মেট্রোরেল নির্মাণসহ অন্য প্রকল্পেও এই ঋণ ব্যবহার করা যাবে।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে ২০২৩-২০২৭ মেয়াদে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নমনীয় ঋণ সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট সই হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী চুক্তিতে সই করেন। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের পক্ষে সই করেন কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হি সুং উন। মেট্রোরেল রুট-৪ প্রকল্পে সমঝোতা চুক্তিও সই হয়। এতে সই করেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান এবং কোরিয়া সরকারের পক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক অ্যান্ড ফাইন্যান্স মিনিস্টার কিসুন ব্যাং।
ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ডের আওতায় এই বড় অঙ্কের ঋণ মিলবে। এর আওতায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হবে। এই ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্টের আওতায় যেসব ঋণ চুক্তি সই হবে সেগুলোর বাৎসরিক সুদের হার হবে শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৪০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর। তবে প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বার্ষিক সুদের হার শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ শতাংশ এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২৫ বছর। এক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড ৭ বছর।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ( ইআরডি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, কোরিয়ার ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) অর্থায়নে ২০২৩-২০২৭ মেয়াদে ৩০০ কোটি ডলারের নমনীয় ঋণ সহায়তার আওতায় বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় যে সকল ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে তার প্রতিটির বার্ষিক সুদের হার হবে মাত্র ০.০১% থেকে ০.০৫%। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৪০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর।
কোরিয়া সরকার কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে নমনীয় ঋণ সহায়তা দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে কোরিয়া সরকারের ৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার ঋণে ১৭টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া ৬১ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ডলারের ৭টি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে। কোরিয়া সরকার এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রায় ১৪৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার নমনীয় ঋণ মঞ্জুর করেছে, যা তার উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং কোরিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (লাইন-৪) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ প্রকল্প সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রেলওয়ের বাস্তবায়নে ‘'রিপ্লেসমেন্ট অ্যান্ড মডার্নাইজেশন অব সিগনালিং অ্যান্ড ইন্টারলকিং সিস্টেম অব স্টেশনস অব ইশ্বরদী-পার্বতীপুর সেকশন অব ওয়েস্ট জোন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে বিআরটিসির জন্য সিএনজি সিঙ্গেল ডেকার বাস কেনার একটি প্রকল্পে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার ঋণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং কোরিয়া সরকারের পক্ষে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান হী-সুং ইয়ুন ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
Published on: 2023-05-04 14:10:21.404906 +0200 CEST
------------ Previous News ------------