বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, বরিশালবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রমে আমি মেয়র পদে জয়লাভ করেছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আশা-আকাঙ্খা নিয়ে আমাকে আপনাদের মাঝে পাঠিয়েছেন, ভোটের মাধ্যমে আপনারা আমাকে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রীর সেই আশা-আকাঙ্খা পূরণ করেছেন।
মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ভোটার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খোকন সেরনিয়াবাত আরও বলেন, বরিশাল নগরীর সকল ভোটার, জনগণ এবং আমার দলের সকল নেতাকর্মী যারা নির্বাচনে জড়িত ছিলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের ইশতেহারে আপনাদের প্রতি দেওয়া সকল অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবো।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে নগরীর সদর রোডের নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে খোকন সেরনিয়াবাত আরও বলেন, বরিশালে বসবাসরত শান্তিপ্রিয় নগরবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভোটে আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী যে আশা-আকাঙ্খা নিয়ে আমাকে আপনাদের মাঝে পাঠিয়েছেন। ভোটের মাধ্যমে আমাকে নির্বাচিত করে বরিশাল নগরবাসী প্রধানমন্ত্রী সেই আকাঙ্খা আপনারা পূরণ করেছেন। যেকারনে আমি সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মানুষের আসার প্রদীপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, নির্বচনী ইশতেহারের মাধ্যমে আপনাদের দেওয়া অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। এসময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় সাংগঠিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথসহ দলের বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন মেয়রকে অভিনন্দন
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী ছোট ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি। সোমবার রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তিনি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন বার্তায় বলা হয়, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ী হওয়ায় বরিশালের সর্বস্তরের জনগণ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা, বিভাগীয়, জেলা ও মহানগর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী এবং বরিশাল জেলা ১৪ দল ও বরিশাল প্রশাসনের সকল স্তরের সদস্যদেরকে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতার হাত আরও শক্তিশালী করতে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। এছাড়া পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ.কে.এম জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সিইসির মুখে ‘ইন্তেকালের’ কথা শুনে হতবাক ফয়জুল করীম
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের মুখে ‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন’ এমন কথার প্রতিক্রিয়ায় ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বললেন, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত বরিশাল সিটির পরাজিত মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। সোমবার দিবাগত রাতে বরিশালে হাতপাখার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রতিক্রিয়ায় ফয়জুল করীম বলেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, আমি ইন্তেকাল করলে হয়তো সিইসি’র কানে পানি যেতো। আমি রক্তাক্ত ও জখম হয়েছি, এতে সিইসি’র আশা পূরণ হয়নি। হয়তো ইন্তেকাল করলে তার আশা পূরণ হতো।’
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে তার উপর কীভাবে কারা হামলা করেছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন ফয়জুল করীম। এর আগে তার বড় ভাই চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করিম সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল ও খুলনার ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান এবং রাজশাহী ও সিলেটের ভোট বর্জন করেন। একইসঙ্গে আগামী শুক্রবার (১৬ জুন) জুমার নামাজের পর দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।
হামলাকারী আটক
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনায় মূলহোতা স্বপন মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটার দিকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন। ওসি বলেন, মূল হামলাকারী স্বপনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও প্রার্থী বা ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এর আগে সোমবার দুপুরে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালীন সময় প্রথমে কাউনিয়া এলাকায় লাঞ্ছিত ও পরে নগরীর চৌমাথা এলাকায় হাতপাখা মার্কার প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনিসহ কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হন।
তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির একটি অংশ দায়ী। কারণ ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময় বরিশালের কাউনিয়া এলাকার বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার ওপর চরমোনাই এলাকায় বসে হামলার ঘটনা ঘটেছিলো। ওই হামলার সাথে মুফতী ফয়জুল করীম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই হামলার প্রতিশোধ নিতেই সোমবার দুপুরে বিএনপির ওই নেতার ঘনিষ্ঠজনরা নৌকার ব্যাচ লাগিয়ে এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিইসির পদত্যাগ দাবি
সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙল মার্কার পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় আমি মনে করি তারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে জনগণের সাথে নাটক মঞ্চায়ন করেছে। অন্যদিকে ফলাফল পর্দার পিছনে বসে করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার জনগণের সাথে যে প্রতারণা করেছে, তা মেনে নিতে না পারার কারনে, আমি সিইসির পদত্যাগসহ এই প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখান করছি। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় নগরীর অক্সফোর্ড মিশনরোডস্থ লাঙল মার্কার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীর উপর যে ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে, আমি তার তীব্রনিন্দা জানিয়ে দ্রæত বিচারের দাবী করছি।
ভোট পড়েছে ৫১.৪৬ শতাংশ
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫১.৪৬ শতাংশ ভোট পরেছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর। সোমবার দিবাগত রাতে ফলাফল ঘোষণাকালে তিনি এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বরিশালে আমার সহকর্মীরা, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যরা, সাংবাদিকগণসহ সবার সার্বিক সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নগরীর ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৭ ভোটারের মধ্যে ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি কেন্দ্রে মোট ১ লাখ ৪২ হাজার ১৭৭ জন ভোট দিয়েছেন। যেখানে অবৈধ বা বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা মাত্র ৪২১টি। সেই হিসেবে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৫৬টি। আর এ হিসেবে ভোট প্রদানের শতকরা হার ৫১.৪৬ শতাংশ।
বিএনপির বহিস্কৃৃত ছয় কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচিত
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হয়েও নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ছয়জন প্রার্থী। তারা হলেন-নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক, ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ হুমায়ুন কবীর, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব মো. জিয়াউল হক, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মহানগরের সাবেক সহ-সভাপতি মো. ফিরোজ আহমেদ, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির এবং বরিশাল মহানগর আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ১০ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর চার নেতা চারটি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনিরুজ্জামান তালুকদার নির্বাচিত হয়েছেন।
Published on: 2023-06-13 10:43:36.682116 +0200 CEST
------------ Previous News ------------