যেন তারুণ্যের মহাসমুদ্র ! লাখ লাখ তরুণের উত্তাল তরঙ্গের যেন শুরু আছে শেষ নেই। বিএনপির মহাসমাবেশের মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে লাখো মানুষের সমাগম ঘটিয়ে শুক্রবার রাজধানীতে বিশাল সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠন- আওয়ামী যুবলীগ , আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দুপুর পর্যন্ত ভ্যাপসা গরম , বিকেলে মুষলধারে বৃষ্টি- এমন বৈরী আবহাওয়াও এই তিন সংগঠনের মিছিলের স্রো ত থামাতে পারেনি।
বিশাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বিএনপির এক দফার দাবির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে , আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা রাজপথে থেকেই সব ষড়যন্ত্র - চক্রান্তের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে। কোনো গায়েবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় , সংবিধান অনুযায়ীই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
‘ তারুণ্যের জয়যাত্রা ’ শীর্ষক লাখো মানুষের বিশাল শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুর কাদের বিএনপির এক দফা দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন , বিএনপির এক দফা পল্টনের কাদা পানিতে আটকে গেছে। বাংলার মাটিতে তাদের এক দফা কোনোদিন পূরণ হবে না।
বিএনপিকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন , এখন নাকি আপনারা রাস্তা বন্ধ করবেন , ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান নেবেন ? এটা করতে গেলে আমরাও আপনাদের চলার রাস্তা বন্ধ করে দেব। চোখ রাঙাবেন না , মস্তানি করবেন না , আমাদের শেকড় এ মাটির অনেক গভীরে। আগুন দিয়ে মানুষ মারার চেষ্টা করলে সেই হাত আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে , ভাঙচুরের চেষ্টা করা হলে সেই হাত ভেঙে দেওয়া হবে। কোনো চোখ রাঙানিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ভয় পান না , পরোয়া করেন না।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘ বিএনপি - জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ’ আওয়ামী যুবলীগ , আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে।
বেলা তিনটায় শান্তি সমাবেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই বেলা ১১টা থেকেই থেকেই বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট অভিমুখে মিছিলের ঢল নামে। কখনো প্রখর রোদ , আবার মুষলধারে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় , কলেজ এবং প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড থেকে অসংখ্য মিছিলের তোড়ে সমাবেশ শুরুর আগেই পল্টন , মুক্তাঙ্গন , জিপিও , বঙ্গবন্ধু এভিনিউ , গুলিস্তান , গোলাপশাহ মাজার হয়ে নগরভবন , দোয়েল চত্বর হয়ে সংসদ সচিবালয় রাস্তা , জাতীয় স্টেডিয়াম হয়ে নবাবপুর পর্যন্ত চতুর্দিকে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
এই তিন সংগঠনের লাখো তারুণ্যের শক্তির তীব্র স্রো তে শান্তির সমাবেশটি রীতিমতো বিশাল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। শুধু ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগই নয় , ঢাকার আশপাশেরসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও যুবলীগ , স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীও সমাবেশে যোগ দেয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ , ছাত্রলীগ , স্বেচ্ছাসেবক লীগ , যুব মহিলা লীগ , মহিলা আওয়ামী লীগ , শ্রমিক লীগের বিশাল বিশাল মিছিল এসে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হলে পুরো এলাকা রীতিমতো জনসমুদ্রের আকার ধারণ করে।
মাঝে বেলা তিনটার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি নামলেও নেতাকর্মীদের কাকভেজা হয়েই সমাবেশস্থলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে অসংখ্য ব্যানারের কারণে সমাবেশে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। বিএনপির সমাবেশের বিপরীতে মাত্র দেড় কিলোমিটার ব্যবধানে লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিত ঘটিয়ে রাজধানীতে বিএনপির বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তির প্রদর্শন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের নেতৃত্বে হাজার হাজার নেতাকর্মীর বর্ণাঢ্য মিছিল সবার নজর কাড়ে। রং - বেরঙের টুপি , গেঞ্জি , টি - শার্টসহ নানা রঙের পোশাক পরে ব্যানার , ফেস্টুন ও তিন সংগঠনের পতাকা নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে পুরো এলাকাই মহাসমাবেশে রূপ নেয়। সকাল থেকেই মঞ্চ থেকে দেশাত্মবোধক গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়। লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
‘ শেখ হাসিনা ভয় নাই , আমরা আছি লাখো ভাই ’, জামায়াত - শিবির - রাজাকার , এই মুহূর্তে বাংলা ছাড় ’, ‘ শেখ হাসিনা সরকার , বার বার দরকার ’ আর দলীয় প্রতীক নৌকার গগণবিদারী স্লোগানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই এলাকা ছিল প্রকম্পিত। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মুখেই ছিল সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আগামী নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান। শান্তি সমাবেশে বিএনপি - জামায়াত জোট সরকারের আমলে উল্লাপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার পূর্ণিমার আর্তনাদ , নড়াইলে তারুণের সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিএনপি - জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে কুপিয়ে হত্যার শিকার আজাদ শেখ রুবেলের ভাই সাজ্জাদ শেখের খুনিদের বিচার দাবি এবং জিয়াউর রহমানের আমলে মাত্র দুই মিনিটের প্রহসনের রায়ে ফাঁসিতে হত্যার শিকার পরিবারদের নিয়ে গঠিত ‘ মায়ের কান্নার ’ আহ্বায়ক কামরুজ্জামান খান লেনিনের সেই সময়ের ভয়াল মর্মন্তুদ ঘটনা উপস্থিত লাখো তরুণের মনকে নাড়া দেয়।
আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম ন্ড লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী , কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক , শাজাহান খান , মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম , অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম , ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন , অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক , আবদুর রহমান , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ , আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম , সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন , মির্জা আজম , দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া , স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেসবাহুল হক সাচ্চু , ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমূখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন যৌথভাবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল , স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনাম। শান্তি সমাবেশ থেকে তিন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা যৌথ ঘোষণা উত্থাপন করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। যৌথ ঘোষণার মধ্যে রয়েছে - বিএনপি - জামায়াতের দেশবিরোধী অশুভ চক্রান্ত - ষড়যন্ত্র , অগ্নিসন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ মাথানত না করা , ছাত্র - জনতা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সব অপশক্তির অশুভ তৎপরতা মোকাবিলা , সংবিধানের আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন - অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা , মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জঙ্গিবাদ - সাম্প্রদায়িকতামুক্ত উন্নত - সমৃদ্ধ আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ছাত্র ও যুব সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার।
শান্তি সমাবেশে নেতারা যা বলেন ॥ প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন , যত লাফালাফি , মস্তানি করেন Ñ কাজ হবে না। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন অনেক দূরে চলে গেছে। ওটা পাবেন না। রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে পারবেন না। আন্দোলনের রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন। আন্দোলনে পারবেন না। পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনে তো আপনারা আসবেনই না।
ওবায়দুল কাদের তার পরিচিত ‘ খেলা হবে ’ স্লোগান ধরে বলেন , খেলা হবে তারেকের বিরুদ্ধে , তাদের ভোট চুরির বিরুদ্ধে , ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে , ভুয়া তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে ও ভুয়া এক দফার বিরুদ্ধেও খেলা হবে। তিনি বলেন , বিএনপির এক দফা দাবি নয়া পল্টনের কাদা - পানিতে আটকে গেছে। তারেক রহমান লন্ডন থেকে বলছে , আর এখানে ফখরুল - আমীর খসরুরা বলে গণভবন ছেড়ে দিতে হবে। গণভবন কি তোমার বাবার ? জনগণ শেখ হাসিনাকে গণভবনে বসিয়েছেন। জনগণ যতদিন চাইবেন ততদিন শেখ হাসিনা গণভবনে থাকবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন , চোখ রাঙাচ্ছেন ? চোখ রাঙানোর দিন শেষ। শেখ হাসিনাকে গণভবন থেকে বের করবেন ? আমরা চেয়ে চেয়ে কী ললিপপ খাব ?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন , তারেক রহমান ফখরুলদের বলে টাকার কোনো অভাব হবে না ! তারেক রহমান তোমার বাবা দম্ভ ভরে বলেছিল Ñ মানি ইজ নো প্রবলেম। কোথায় তোমার বাবা ? তুমি তো ক্ষমতা দেখো নাই। ফুলের ভেতরেও সাপ আছে।
তিনি বলেন , কিছু সময় আমেরিকার কংগ্রেসম্যানকে টাকা খাওয়ায়। তাদের দিয়ে চিঠি লেখায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করার। এই দুঃসাহস তারা পায় কোথায় ? তারেক রহমান এত টাকা পায় কোথায় ? আজ সারাদেশে একই স্লোগান উঠেছে - ‘ গলি গলি ম্যা শোর হ্যায় , তারেক রহমান চোর হ্যায়। ’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে ওবায়দুল কাদের বলেন , আপনারা হতাশ হবেন না। কারো চোখ রাঙানি শেখ হাসিনা পরোয়া করেন না। তিনি প্রয়োজনে জীবন দেবেন , তার পরও বাংলাদেশের উন্নয়ন - অগ্রগতি ব্যাহত হতে দেবেন না। সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণের আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের তিনি বলেন , মাথা গরম করবেন না। শৃঙ্খলা রাখবেন। আওয়ামী লীগের মঞ্চে শৃঙ্খলা থাকবে , সবাই উঠবে কেন ? আমরা ক্ষমতায় , আমরা কেন গ ন্ড গোল করতে যাব। যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে এসেছেন , সেভাবেই ফিরে যাবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন , কারা কারা লন্ডনে যাচ্ছেন , তারেক রহমানের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন - নমিনেশনের জন্য , ভবিষ্যতে ব্যবসার জন্য টাকা লেনদেন করছেন তারেক রহমানের সঙ্গে। আমরা খবর রাখছি। সে - ই ( তারেক রহমান ) তো আসতে পারবেন না। আপনাদের নমিনেশন দেবে কীভাবে ? তিনি বলেন , তারেক জিয়া লন্ডন থেকে ফরমায়েশ দিচ্ছেন। এখানে মির্জা ফখরুল , আমীর খসরুরা লাফালাফি করছেন। তোমরা ও তারেক জিয়া কিছুই করতে পারবে না। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন পেয়ে গেছ ? এটা বহুদূর। সেটার নাগাল আপনারা পাবেন না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন বলেন , মুচলেকা দেওয়া তারেক রহমান হলেন মির্জা ফখরুলের নেতা। এই নেতা কেউ মানে ? তারেক রহমানকে ধরবে বাংলাদেশের মানুষ। লন্ডন থেকে যতই আস্ফালন করছে , ততই মানুষ তার ওপর ক্ষেপছে। তারেক , ফখরুল , খসরুরা আইন মানেন না। তারেক কথায় কথায় সুপ্রিম কোর্টকে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন। আমরা তার বিচার চাই। এত অহংকার ভালো নয়। আর কারা ঘন ঘন লন্ডনে যান , তারেক রহমানের হাতে ডলার তুলে দেন ; আমরা জানি। সময় হলেই সব প্রকাশ হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম - লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন , বাংলার মানুষ সামনের দিকে এগুতে চায়। শেখ হাসিনার কাফেলা এগিয়ে যাবে। যারা বাধা দিতে আসবে তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এগিয়ে যাবেন শেখ হাসিনা। এগিয়ে যাবে বাংলার মানুষ।
সভাপতিম ন্ড লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুুর রাজ্জাক বলেন , তারুণ্যের এই উচ্ছ্বাস প্রমাণ করে বিএনপি অতীতের মতো এবারও সফল হবে না। আগামী নির্বাচন সংবিধান মোতাবেক হবে। সংবিধান মোতাবেক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান থাকবেন। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। যারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে দেশের জনগণই তাদের রূখে দেবে।
যুব ও তরুণ সমাজের উদ্দেশ্যে সভাপতিম ন্ড লীর আরেক সদস্য শাজাহান খান বলেন , বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা তখন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। এখন শেখ হাসিনার নির্দেশে তোমাদের বিএনপি - জামায়াত অপশক্তির কবর রচনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সভাপতিম ন্ড লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন , আজকে লাখো তারুণ্যের সমাবেশ ঘটিয়ে একটা মহড়া হলো , আসলটা ছাড়া হয়নি। তিনি আরও বলেন , শেখ হাসিনার দিকে চোখ তুলে তাকালে চোখ রাখা হবে না। আজ তারুণ্য জেগেছে। আজ যুবলীগ , ছাত্রলীগ , স্বেচ্ছাসেবক লীগ মাঠে আছে।
সভাপতিম ন্ড লীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন , বিএনপির আবার আগুন - সন্ত্রাস করতে চায়। আমরা আওয়ামী লীগের সৈনিক , শেখ হাসিনার কর্মী নিশ্চয় আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি - জামায়াতকে হটিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাব।
সভাপতিম ন্ড লীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন , শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্জনকে তারা নস্যাৎ করতে চায়। তারা দেশকে পেছনের দিকে , ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়। তাদের প্রতিহত করতে হবে। পরিষ্কার কথা কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
সভাপতিম - লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন , এই সমাবেশ থেকে পরিষ্কার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে এসেছি , নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী , ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারকারী , দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান এখন লাদেন রহমানে পরিণত হয়েছে। এদের রুখতে হবে। আগামী নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হবে। উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন , আপনারা প্রস্তুত আছেন ? এ সময় সবাই হাত তুলে প্রস্তুতির কথা জানান।
সভাপতিম - লীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন , বিএনপি সন্ত্রাস - নৈরাজ্য করে শত শত মানুষ হত্যা করেছিল। তারা আবার মাঠে নেমেছে। ১০ দফা , ২৩ দফা , ৩১ দফা দিল। এখন নাকি এক দফা ? সেটা কি ? শেখ হাসিনার পদত্যাগ ! তিনি বলেন , জনগণ শেখ হাসিনাকে ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতা দিয়েছে। দিবা স্বপ্ন দেখে লাভ নেই।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন , বিএনপি - জামায়াত যখন সমাবেশ করে তার আগের দিনে বিশেষ কোনো রাষ্ট্রদূতের অফিসে গিয়ে বৈঠক করেন। কেন , কী কারণে প্রত্যেকটা মিটিংয়ের আগে বিশেষ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করতে হয় ? এর কারণ একটাই , বিএনপি এখন বিদেশী ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক হিসেবে খেলছে।
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন , আমাদের এক দফা শান্তি ও নির্বাচন। আমরা আছি আমরা থাকব। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করব। সারাদেশে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে থাকব।
সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন , লাখো তারুণ্যের এই গণজোয়ার দেখে বিএনপি - জামায়াত , ফখরুল সাহেবদের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন , বিএনপি রাজনৈতিক দল নয় , সন্ত্রাসী দল হিসেবে স্বীকৃত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করে একশ ’ বছর ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করেছিল খালেদা - তারেকরা। এসব ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে দেশের তরুণ সমাজ প্রস্তুত।
নিপীড়নের শিকার পূর্ণিমার কথা শুনে শিহরিত লাখো তরুণ ॥ শান্তি সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন ২০০১ সালে বিএনপি - জামায়াতের নিপীড়নের শিকার পূর্ণিমা রানী শীল। ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ব দেলুয়া গ্রামের ১৪ বছর বয়সী এই কিশোরী পূর্ণিমা।
লাখো তারুণ্যের সমাবেশে ২২ বছর আগে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন , তারেক রহমান আজ কোথায় ? তিনি কেমন করে বলেন মানবতার কথা ? তার কি লজ্জা হয় না ? তিনি আরও বলেন , তারেক রহমান বাংলাদেশের জন্য একটা চর্ম রোগ। তিনি নারী ছাড়া বোঝেন না। এই এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় হলো তাদের ঝাড়ু মেরে পাকিস্তানে পাঠানো।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে পূর্ণিমা রানী আরও বলেন , আমি ঘরে ঘরে পূর্ণিমা দেখতে চাই না। আমাদের মান ইজ্জত দিয়ে দিনের পর দিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমরা আর চাই না এমন জীবন। বিএনপি - জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে শত শত সংখ্যালঘু পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। ওই ঘটনার পর আমি আরেক মা ( শেখ হাসিনা ) পেয়েছি , শত জনমেও তার ঋণ শোধ করতে পারব না। আগামী নির্বাচনেও এ সন্ত্রাসী দলগুলোকে ব্যালটের মাধ্যমে ‘ না ’ বলুন।
শান্তি সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় ২০ জুলাই খুলনায় তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ যোগ দিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে খুন হওয়া নড়াইলের পিরোলী ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী আজাদ শেখের ভাই সাজ্জাদ শেখকে। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজাদ শেখ বলেন , সেদিন খুলনার সমাবেশ শেষে সবাই ঘরে ফিরেছিল কিন্তু আমার ভায়ের লাশ এসেছে। আমার ভায়ের ছোট দুইটা সন্তান। একটা ছেলের বয়স মাত্র এক বছর। সে এখনো জানে না বাবা কী জিনিস। তারা আমার ভাবিকে বিধবা করেছে। আমার মা - বাবাকে করেছে সন্তানহারা। আর আমি হারিয়েছি ভাই। যারা স্বজন হারান তারাই শুধু জানেন , স্বজন হারানোর যন্ত্রণা। ১৯৭৫ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বজন হারিয়েছিলেন। আমরা এই অপরাজনীতি আর দেখতে চাই না। তিনি দ্রুত ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জিয়াউর রহমানের প্রহসনের বিচারের হত্যাকা ন্ডে র শিকার হাজার হাজার সেনা পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘ মায়ের কান্না ’ আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লেলিন। তিনি বলেন , মায়ের কান্না শেষ হয়নি। খুনি জিয়া নাটক করে সামরিক অফিসারদের হত্যা করেছিল। জিয়ার নির্দেশে বিমানবন্দরে লালবাহিনী নামানো হয়েছিল। এক মিনিটের নাটকের বিচারে ১৪ সেনা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছিল। আমি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করছি।
শান্তি সমাবেশ থেকে পাঁচ দফা যৌথ ঘোষণা ॥ ‘ বিএনপি - জামায়াতের হত্যা , ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের ’ প্রতিবাদে ডাকা শান্তি সমাবেশ থেকে পাঁচ দফা ঘোষণা দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৫টায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু এ যৌথ ঘোষণা দেন। দফাগুলো হলো - ১. ছাত্র - তরুণ - যুবসমাজকে সংঘটিত আগুন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য প্রতিহত করব এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সক্রিয় থাকব। ২. বাংলাদেশ বিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। ৩. মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকব। ৪. শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করব। ৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বদা সোচ্চার থাকব এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকব।
Published on: 2023-07-28 20:44:59.85967 +0200 CEST
------------ Previous News ------------