দৈনিক জনকণ্ঠ
বাবা-মা-স্বামীহারা সাথী, নেই চাল-ডাল কেনার টাকা

বাবা-মা-স্বামীহারা সাথী, নেই চাল-ডাল কেনার টাকা

সাথী আক্তার। সে একজন বুদ্ধিবন্ধী ব্যক্তি। শিশু বয়সেই বাবাকে হারান। আট বছর বয়সে হারান মাকে। বিয়ের এক বছরের মাথায় হারান স্বামীকে। তাকে আগলে রাখতেন যিনি তিনিও মারা গেছেন মাস ছয়েক আগে। এখন তার আপন বলতে কেউই নেই। একেবারেই অসহায়। সাথীর বাড়ি নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলায়। গ্রামের নাম ভরতের কান্দি। পুটিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। পিতার নাম সাইফুল ইসলাম। মায়ের নাম শেফালী বেগম। সাথীর দেড় বছরের সংসার। কোল জুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক সন্তান। আর্থিক অনটনে তাকেও ঠিক মতো খাওয়াতে পারেন না। নিজেরও চলতে কষ্ট হচ্ছে। আর্থিক সম্বল বলতে প্রতিবন্ধী ভাতাটুকুওই। সেই সঙ্গে আছে গ্রামের মানুষের সামান্য সহযোগিতা। তা দিয়ে চলে কোন রকমে জীবনযাপন। নেই নিজের একটি ঘর। যেটা আছে সেটাও নড়বড়ে। থাকেন অন্যের ঘরে। একটি ঘর পেলে হতো স্থায়ী ঠিকানা। সাথী আক্তার বলেন, আমার মা নেই, বাবা নেই। ঘর নেই, ট্যাকা নেই। নেই ঘরে চাইল-ডাইল। বাচ্চার দুধ নেই। খাওয়ার কষ্ট করি। প্রতিবেশী মিনারা বেগম বলেন, এক বছর আগে বিয়া হইছিল মেয়েটার। বাচ্চার ৭ দিন বয়সে বাপটা মারা গেছে। এর ঘর নেই। আরেক বাড়িতে থাকে। যিনি থাকার জায়গা দিছি তিনিও মারা গেছেন। চলবার কোন পথ নেই মেয়েটার। টাকাও গুণতে পারে না। চাল বাজারও করতে পারে না। বাচ্চাটা নিয়ে অনেক কষ্টে আছে। সন্তান কোলে নিয়ে নিজের ভাঙাচোরা ঘরের সামনে সাথী আক্তার। ছবি: জনকণ্ঠ আরেক প্রতিবেশি ইসরাত জাহান বীথি বলেন, সে (সাথী) একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে। জন্মের ২ বছর পর তার বাবা মারা যায়। আট বছর বয়সে মারা গেছে মা। কোনো অভিভাবক না থাকায় পাশের বাসার দূর সম্পর্কের নানী ইসমত আরা বেগম সাথীর দায়িত্ব নেন। এবং তার লালন পালন করেন। ২০২২ সালে সাথীর বিয়ে হয়। একটি ছেলে সন্তান হয় কিন্তু সন্তান জন্মের ৭ দিন পর তার স্বামী মারা যায়।  সে পুনরায় ইসমত আরা বেগমের কাছে আশ্রয় নেয়। গত মার্চ মাসে ইসমত আরা বেগমও মৃত্যুবরণ করেন। এমতাবস্থায় সাথী অসহায় এবং অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. জগলুল হায়দার ইকবাল বলেন, সাথী আমার গ্রামের পিতৃ-মাতৃহীন ও অকালে বিধবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী একজন মা। যার দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই। এক প্রতিবেশীর আশ্রয়ে ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনিও মৃত্যুবরণ করেছেন। সমাজের বিত্তবান ও দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পেলে সে তার অনাথ শিশুকে নিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারবে। পুটিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আমির হোসেন বলেন, সাথী আমার গ্রামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে। মা নেই, বাবা নেই- সে একেবারে অসহায়। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের যে প্রতিবন্ধী ভাতা পায় এটাই তার আয়ের একমাত্র উৎস। মানবিকভাবে আমি তাকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করি। এলাকার অনেক বিত্তবানরাও সহযোগিতা করে। আমরা যে সহযোগিতা করি তা দিয়ে তার দিনযাপন করা সম্ভব হয় না। বিত্তবানদের কাছে আমার আবেদন, এই অসহায় মানুষটার পাশে যেন একটু দাঁড়ায়।
Published on: 2023-09-13 11:46:40.441669 +0200 CEST