যায়যায়দিন
কদর বাড়ছে সাধারণ ভোটারের

কদর বাড়ছে সাধারণ ভোটারের

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নিলেও ভোটের লড়াই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে নিজেদের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। শরিকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে তাদের ভোটের লড়াইয়ে নামানো যায় কিনা তা নিয়েও চলছে নানা চিন্তা-ভাবনা। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটারের ভোটেই জয়ের জন্য মুখ্য হয়ে উঠেছে। ফলে প্রার্থীদের কাছে তাদের কদর বাড়ছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা জানান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বেশিরভাগ প্রার্থীই সাধারণ ভোটারদের ততটা গুরুত্ব দেননি। তারা দলীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সে ছক পুরোপুরি পাল্টে গেছে। ক্ষমতাসীন পক্ষে দল মনোনীত প্রার্থীর বাইরে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ফলে দলীয় ভোটের একটি বড় অংশ তাদের নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। এ পরিস্থিতিতে কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে সাধারণের ভোটে এগিয়ে থাকতে হবে। এছাড়া এবারের নির্বাচনে জাল ভোট ও ব্যালট ছিনতাইসহ সব ধরনের অবৈধ তৎপরতা চালানোর সুযোগও ক্ষীণ হয়ে আসবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি আসনেই যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হবেন, তাই সব ভোটকেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পোলিং এজেন্ট থাকবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী তার পক্ষে জাল ভোট দেওয়ানোর চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্ট তাতে বাধা দেবে। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় ব্যালট ছিনতাই কিংবা ভোট গণনায় কোনো ধরনের কারচুপি অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কিংবা স্বতন্ত্র প্রতিপক্ষ কারও পক্ষেই সাধারণ ভোটারের পর্যাপ্ত ভোট না পেয়ে জয়ী হওয়ার সুযোগ থাকছে না। এদিকে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়ায় দলীয় ও স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতাই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে অনেকেই ভোটের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও শিগগিরই মাঠে নামার তোড়জোড় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কে কার আগে দলের নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে টানতে পারেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে সারা দেশে ভোটের মাতাল হাওয়া বইছে। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কেউ কেউ তাদের দুয়ারে এলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের মধ্যে কারও দেখা মেলেনি। তবে এবারের দৃশ্যপট অনেকটাই ভিন্ন। প্রার্থীরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট চাইতে শুরু না করলেও ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তাদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজখবর নিচ্ছেন। অন্যদিকে মাঠপর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় জানা গেছে, গত দুই টার্মে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকায় তাকে ছাড়া অন্য কারও পক্ষে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালানোর সুযোগ ছিল না। বরং দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট না চেয়ে নিশ্চুপ থাকলেও দলীয় সাজা পাওয়ার শঙ্কা ছিল। তাই দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও তার পক্ষে ভোট চাইতে হয়েছে। তবে এবার দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি হাইকমান্ড থেকে অনুমতি দেওয়ায় সে পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেছে। বিগত সময় যেসব নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর নিজস্ব লোকজন নিয়ে পৃথক বলয় গড়ে তুলেছিলেন, তারা এবার দলীয় মনোনয়ন পেলেও অনেকে তাদের এড়িয়ে চলছেন। বরং ওই প্রার্থীর বিপক্ষে যিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার পক্ষে অনানুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর এ বিষয়টি আরও প্রকাশ্য রূপ নেবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের মাঠকর্মীরা। নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্য নেতাদের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার অনুমতি দিয়ে ভোটের লড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার যে কৌশল নিয়েছে, তা জাদুমন্ত্রের মতো কাজে লেগেছে। প্রার্থীরা নিজেদের তাগিদেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট সংগ্রহ করার চেষ্টা করবেন। এতে বিগত সময়ের চেয়ে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার প্রবণতা কমবে। যদিও অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা অনেকে মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে টানা কঠিন হবে। কেননা, ভোটে দল মনোনীত প্রার্থী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী যে-ই জয়ী হোক না কেন, এর ফল আওয়ামী লীগের ঘরেই উঠবে। তাই নিরপেক্ষ ভোটারদের একটি বড় অংশের ভোটবিমুখ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নেওয়া আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলের নমনীয় মনোভাবের সুযোগ নিয়ে এখন তারা নিজ নিজ আসনে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে চান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সুযোগ অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। দল মনোনীত প্রার্থী পেশিশক্তি প্রদর্শন করে ভোটে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করলে নির্বাচনের আগেই সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটবে। এতে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা দুষ্কর হবে। স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে মনোনয়ন চেয়ে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে দলের অনুমতি ছাড়া কোনো নেতা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন না, এমন ঘোষণার তিনি বিরোধিতা করেছেন। তার ভাষ্য, ‘দল ইতোমধ্যে দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার অনুমতি দিয়েছে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। সে কারণে দলীয় অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না পাল্টা প্রশ্ন রাখেন তিনি। একইভাবে চট্টগ্রাম-১ আসনের মতো চট্টগ্রামের ৯টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়তে ১০টি আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৭ হেভিওয়েট নেতাসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ১৩ নেতা। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যাযাদি/ এস
Published on: 2023-12-01 06:22:33.671427 +0100 CET

------------ Previous News ------------