যায়যায়দিন
১৫ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৪ বার

১৫ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৪ বার

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যখন দেশের মানুষ দিশেহারা তখন দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। যার প্রভাব এখনো রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর ওপর। সবশেষ ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে ফের ইউনিট প্রতি সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বাড়ানো হলোÑ যা চলতি বছরের মার্চ থেকেই কার্যকর হবে। এ নিয়ে বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের মেয়াদে গ্রাহক পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১৪ বার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ১২ বার। এর আগে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে ৫ শতাংশ হারে বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। যা পরদিন (১ মার্চ) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ১৪ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ টাকা ৩৫ পয়সা। শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর (প্রথম ধাপ) ক্ষেত্রে ৪ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে হয় ৪ টাকা ৮৫ পয়সা। ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের (দ্বিতীয় ধাপ) ক্ষেত্রে ৬ টাকা ৩১ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের (তৃতীয় ধাপ) ৬ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের (চতুর্থ ধাপ) জন্য ৬ টাকা ৯৯ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের (পঞ্চম ধাপ) জন্য ১০ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের (ষষ্ঠ ধাপ) ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকের বিল ১২ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা করা হয়। এছাড়া সেচ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তার বাতিসহ অন্যান্য বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে সরকার। কৃষিতে ব্যবহৃত সেচযন্ত্রের বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪ টাকা ৮২ পয়সা, যা ৩১ জানুয়ারি বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৪ টাকা ৫৯ পয়সা। শিক্ষা, ধর্মীয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা ৬৪ থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৭ পয়সা করা হয়। পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্পে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ৯ টাকা ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৮৮, রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পে ৮ টাকা ৪৯ থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৯১, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের ক্ষেত্রে ৮ টাকা ৪২ থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৮৪, বাণিজ্যিক ও অফিস ফ্ল্যাটে ১১ টাকা ৩৬ থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯৩ এবং নির্মাণ শিল্পের বিদ্যুতের দাম ১৩ টাকা ২৩ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩ টাকা ৮৯ পয়সা। এ নিয়ে ২০২৩ সালের দুই মাসে তিন দফা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে লাইফলাইন গ্রাহকের ইউনিটপ্রতি খরচ বেড়েছে ৬০ পয়সা, ৭৫-৬০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম বেড়েছে ৬৬ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত। এছাড়া তিন দফায় ইউনিটপ্রতি খরচ বেড়েছে সেচের বিদ্যুতে সর্বোচ্চ ৬৬ পয়সা; শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দাতব্য ও হাসপাতালের ক্ষেত্রে ৯৫ পয়সা; রাস্তার বাতির জন্য ১ টাকা ২১ পয়সা; ব্যাটারি চার্জিংয়ে ১ টাকা ২০ পয়সা; বাণিজ্যিক অফিসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬৩ পয়সা ও নির্মাণ শিল্পের জন্য ১ টাকা ৮৯ পয়সা। এদিকে বর্তমান সরকারের টানা ১৫ বছরের মেয়াদে গ্রাহক পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আর পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ১২ বার। অবশ্য মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াটে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। ২০১০ সালের মার্চে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখন গড় বিদ্যুৎ বিল বেড়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ৯২ পয়সা। পরের বছর (২০১১ সাল) গ্রাহক পর্যায়ে দুই দফায় ৫ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এতে বিদ্যুতের গড় দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪ টাকা ৬৭ পয়সা। এভাবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কয়েক দফা বাড়ে বিদ্যুতের দাম। মাঝে ২০১৮-২০১৯ এ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। এরপর ফের ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের দাম সব পর্যায়ে বাড়ানো হয়। তখন পাইকারিতে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ১৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সবমিলে ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাস পর্যন্ত ১৪ বছরে বিদ্যুতের দাম ১৩ বার বাড়ানো হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণকে অন্ধকারে রেখে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সরকার উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনেছে। আবার কিছু ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার জন্য উৎপাদন না করেও বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট থেকে তুলে নিচ্ছে। ভর্তুকির নামে এক ধরনের লীলাখেলা, অনেকটা জাদুর ভেলকির মতো একদিক দিয়ে নিয়ে আরেক দিকে বের করা। তবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যে কোনো দেশে জ্বালানির ওপরেই বিদ্যুতের দাম ওঠানামা করে। কাজেই ওটার সঙ্গে আমাদের সমন্বয় করতে হবে, এছাড়া উপায় নেই। বিদ্যুতের দাম নিচের লেভেলে ইউনিট প্রতি ৩৪ পয়সা থেকে ৭০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। যাযাদি/ এস
Published on: 2024-02-28 04:51:32.683375 +0100 CET

------------ Previous News ------------