প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কটির উন্নয়ন করা হয়। পরে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় জনসাধারণের জন্য। এতে এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধুলার একটা জায়গা পায়। খোলা হাওয়ায় একটু সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি হয় এলাকাবাসীর জন্য। তবে পার্কটিতে ঢোকার জন্য এখন টাকা লাগে। ভেতরে রাইড বসিয়ে চলছে ব্যবসা।
এ দশা পুরান ঢাকার চকবাজারের ওয়াটার ওয়েক্স রোডের বশিরউদ্দিন সরদার পার্কের। এটি পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে। মাত্র পাঁচ কাঠা আয়তনের পার্কটি ছাড়া এ ওয়ার্ডে আর কোনো পার্ক বা খেলার মাঠ নেই। ওয়ার্ডটিতে অন্তত আড়াই লাখ মানুষের বসবাস।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পার্কটিতে রাইড বসিয়ে টাকা আয়ের খাত বানিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। এতে সাধারণ মানুষ আর পার্কটি ব্যবহার করতে পারছেন না। গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে রাইডগুলো বসানো হয়েছে।২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সির জাহাঙ্গীর আলম বাবুল প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা রাইড বসিয়েছেন, তাঁদের তিনি বলেছেন, সিটি করপোরেশন অনুমতি নিয়ে যেন তাঁরা এ কাজ করেন। সিটি করপোরেশন থেকে তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র বলছে, পার্কটি সংস্কারের সময় একটি গণশৌচাগার ও চারতলা একটি কফি শপ তৈরি করা হয়। গণশৌচাগার ও কফি শপ পরিচালনার জন্য তারা ইজারা দিয়েছে। রাইড বসানোর জন্য কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি।
পার্কটির গণশৌচাগার ও কফি শপ ইজারা নিয়েছেন ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবুল হোসেন। তবে তাঁর সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও চকবাজার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদপ্রত্যাশী ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তানভীরসহ কয়েকজন আছেন বলে জানালেন তিনি।
গত রোববার বিকেলে পার্কটিতে বসে কথা হয় আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চারতলায় ২৫ লাখ টাকা খরচ করে সাজসজ্জা করেছেন, কিন্তু ক্রেতা পাচ্ছেন না। পার্কে রাইড বসানো নিয়ে তাঁরা করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা অনুমতি দিয়ে দেবে বলে দাবি করেন আবুল হোসেন।সরেজমিন দেখা যায়, পার্কের ভেতরে চারটি রাইড বসানো হয়েছে। শিশু-কিশোরদের প্রতিটি রাইড ব্যবহার করতে হলে ৩০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পার্কটি খোলা রাখা হয়। এ পুরোটা সময় উচ্চ স্বরে গান বাজানো হয় বলে আশপাশের বাসিন্দারা জানান। তাঁরা বলেন, বেলা তিনটার আগপর্যন্ত পার্কের প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়। ফলে তাঁরা পার্কটি ব্যবহার করতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাসিন্দা বলেন, ‘এই তো এক চিলতে জায়গা, সেখানেও মানুষের লোভের থাবা!’
সরেজমিন আরও দেখা যায়, কফি শপের জায়গায় খাবারের হোটেল দেওয়া হয়েছে। সেটির নাম ‘মেজবানী দম খিচুড়ি ও বিরিয়ানি’। হোটেলের কর্মচারীরা চারতলা ভবনটির ছাদে থাকেন।
এ বিষয়ে ইজারাদার আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গণশৌচাগারটি কেউ ব্যবহার করেন না। তাই বন্ধ রাখা হয়েছে। এলাকায় শ্রমজীবী মানুষই বেশি থাকেন। তাঁরা বেশি দাম দিয়ে খাবার খেতে চান না। তাই চারতলা ভবনটিতে চালু করা কফি শপেও তাঁরা ক্রেতা পাচ্ছিলেন না। এ জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। গণশৌচাগার ও কফি শপ চালিয়ে পুঁজি না ওঠায় পার্কে রাইড বসিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পার্কের উন্নয়নকাজ করার আগে সেখানে রিকশার গ্যারেজ ছিল। পাশেই ছিল গণশৌচাগার। তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জায়গাটি উদ্ধার করে পার্ক করার উদ্যোগ নেন। কাজ শেষে ২০২১ সালের এপ্রিলে বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস পার্কটি উদ্বোধন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কফি শপের ইজারার মেয়াদ গত বছরের অক্টোবর এবং গণশৌচাগারের ইজারা মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়। এরপর নতুন করে দরপত্র দেওয়া হয়। ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবুল হোসেন আবার এটির ইজারা পেয়েছেন। তবে ইজারার পুরো টাকা না দেওয়ায় তাঁকে এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পার্কের পুরো জায়গা দখল করে রাইড বসানোর বিষয়টি তাঁরা জানেন না। এমনটি হয়ে থাকলে তাঁরা মেয়রের সম্মতি নিয়ে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাবেন।
Published on: 2024-02-15 10:36:32.02626 +0100 CET
------------ Previous News ------------