প্রথম আলো
একের পর এক কর্মক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে আরও অসহায় পরিবারগুলো

একের পর এক কর্মক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে আরও অসহায় পরিবারগুলো

গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে দিনমজুরি করে সংসার চলছিল না মহিদুল ইসলামের (৩২)। সন্তানের জন্মের পর খরচ আরও বেড়ে যায়। তাই দুই বছরের বেশি সময় আগে জীবিকার সন্ধানে স্ত্রী নার্গিস খাতুনকে (২৬) নিয়ে গাজীপুরে আসেন মহিদুল। একমাত্র শিশুসন্তানকেও রেখে আসেন মহিদুলের মা–বাবার কাছে। নার্গিস কাজ নেন একটি পোশাক কারখানায়। আর মহিদুল কাজ নেন পাটকলে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডারের চাবি খুলে বেরোনো গ্যাস থেকে লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে এই কর্মক্ষম দম্পতিও রয়েছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কর্মক্ষম আটজন রয়েছেন। তাঁরা সবাই শ্রমজীবী ছিলেন। বাকি ছয়জনের মধ্যে চারটি শিশু, একজন ষাটোর্ধ্ব বয়সী নারী এবং একজন কোনো শ্রমে নিয়োজিত ছিলেন না। মারা যাওয়া শিশুরাও শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান। শ্রমজীবী কর্মক্ষম মানুষগুলোর মৃত্যুতে পরিবারগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে।সিরাজগঞ্জের মহিদুল ইসলামের ভাই শাহিনুর খান আক্ষেপ করে বলছিলেন, বেঁচে থাকার জন্য শিশুসন্তানকে গ্রামে রেখে গাজীপুরে গিয়েছিলেন তাঁর ভাই-ভাবি। সেই অভাব আর গেল না, ভাই-ভাবি লাশ হয়ে গ্রামে ফিরলেন। তাঁদের তিন বছর বয়সী সন্তান সাজিদ কিছুই বুঝতে পারছে না। তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল। ১৩ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈরের তেলিরচালা এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় ৩৬ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে ৩৪ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১৪ জন। ছয়জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।*স্ত্রী ও ২৪ দিন বয়সী সন্তানের কী হবে * গাজীপুরের আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মারা যান ইয়াসিন আরাফাত (২১)। তিনি পেশায় বাসচালকের সহকারী। স্ত্রী রুমি খাতুন ও ২৪ দিন বয়সী সন্তান মো. হোসাইনকে নিয়ে কালিয়াকৈরে থাকতেন। ইয়াসিনের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়। আজ বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে কথা হয় ইয়াসিনের বড় ভাই আবদুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেড় বছর আগে রুমি খাতুনকে বিয়ে করেন ইয়াসিন। বিয়ের পর ছোট্ট একটি বাসা নিয়ে কালিয়াকৈরে বসবাস করছিলেন। কয়েক দিন আগে তাঁদের একটি সন্তানের জন্ম হয়। ইয়াসিনের মৃত্যুতে স্ত্রী ও সন্তান অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। আবদুল কাদের বলেন, ইয়াসিন ছিলেন তাঁর একমাত্র ভাই। ভাইয়ের অসহায় স্ত্রী-সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর আর্থিক সামর্থ্য তাঁর নেই। ইয়াসিনের স্ত্রী রুমির বাড়ি চট্টগ্রামে। রুমিও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এ পরিস্থিতে ইয়াসিনের স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে, ভেবে পাচ্ছেন না আবদুল কাদের।*আরও যাঁরা কর্মক্ষম ছিলেন * গাজীপুরে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের একজন সোলাইমান মোল্লা (৪৫)। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তাঁর পরিবার জানায়, তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। তাঁর বড় ছেলে গ্রামে কৃষিকাজ করেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত মশিউর রহমান (২২) পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন। স্ত্রী শাহানা খাতুন ও তিন বছর বয়সী এক সন্তানকে নিয়ে থাকতেন কালিয়াকৈরে। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে। গাজীপুরের আগুনে তাঁর শরীরের ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে তিনি মারা যান। এ ছাড়া দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আরিফুল ইসলাম (৩৫) ছিলেন একজন পোশাককর্মী, মনসুর আলী (৩৫) ছিলেন রাজমিস্ত্রি এবং জহিরুল ইসলাম (৪০) মাছের ব্যবসা করতেন।
Published on: 2024-03-20 13:39:18.60856 +0100 CET

------------ Previous News ------------