প্রথম আলো
দুদিনে গ্রেপ্তার ৮০০ ‘গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করি বলার পর পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে আসে’

দুদিনে গ্রেপ্তার ৮০০ ‘গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করি বলার পর পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে আসে’

ভোলার মো. বিল্লাল রাজধানীর মহাখালী এলাকায় বছর দুয়েক আগে একটি চায়ের দোকান দেন। দোকানে চা বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তিনি দোকানে চা বিক্রি করছিলেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠায়। পরে জরিমানার টাকা জমা দিয়ে বিকেলে আদালতের হাজতখানা থেকে ছাড়া পান বিল্লাল। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা দোকানে এসে জিজ্ঞাসা করেন, আমি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করি কি না। হ্যাঁ বলার পর পুলিশ আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।’বিল্লালের মতো অন্তত ৮০০ জনকে মঙ্গলবার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্যাস সিলিন্ডার রাস্তায় রেখে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাসহ নানা অভিযোগ আনা হয়। এসব ব্যক্তিকে সোম ও মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আদালতে জরিমানা দেওয়ার পর প্রত্যেকে ছাড়া পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রেস্তোরাঁর ভবনগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা না থাকায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিএমপির রমনা, লালবাগ, ওয়ারী, মতিঝিল, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা বিভাগ মোট ৫৬২টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বা  রেস্তোরাঁই ৪৫৫টি। এর বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রাখার দোকান ১০৪টি এবং তিনটি রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। এসব অভিযানের ঘটনায় মোট ৫টি নিয়মিত মামলা করেছে পুলিশ। আর ২২৯টি ঘটনায় ডিএমপি অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারায় অধর্তব্য মামলা দেওয়া হয়েছে।পুলিশ এভাবে রেস্তোরাঁর কর্মীদের ধরে নেওয়াকে হয়রানি হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেইলি রোডের আগুনের পর বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁর কর্মীদের যেভাবে গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, সেটি হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডারসহ দোকানের সরঞ্জাম রাখাসহ ডিএমপি অধ্যাদেশসহ আইনের পরিপন্থী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।মঙ্গলবার সিএমএম আদালত এলাকায় দেখা যায়, পুলিশ যেসব ব্যক্তিকে ধরে এনেছেন, তাঁদের স্বজনেরা বেলা ১১টার পর থেকে আদালত চত্বরে ভিড় করছেন। সেখানে লালন মিয়া নামের এক প্রবীণ বলেন, ৪০ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। সম্প্রতি তিনি মতিঝিলের কমলাপুর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ভাত বিক্রির দোকান দেন। সোমবার দোকান থেকে তাঁর কর্মী মোসলেমকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। মোসলেমকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আদালতের সামনে আসেন। লালন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তাঘাটে ভাত বেচতাম। আমার লগে ভাত বেচত মোসলেম। ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে। এই কোর্ট–কাছারি করা আমার মতো গরিব মানুষের জন্য হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়।’রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার আতিয়া রেস্তোরাঁ নামের একটি খাবারের হোটেলে দুই বছর ধরে ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে আছেন জাহাঙ্গীর আলম। সোমবার সন্ধ্যার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর স্বামীর সঙ্গে দেখা করার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার আদালতে আসেন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আসমা ও মেয়ে আয়েশা। বেলা সাড়ে তিনটার সময় আদালত চত্বরে আসমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে ব্যবসা করতেন আমার স্বামী। এখন হোটেলের ম্যানেজারি করেন। হোটেলের সামনে কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। এ জন্য পুলিশ আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে আসে।’
Published on: 2024-03-05 21:48:10.789132 +0100 CET

------------ Previous News ------------