সমকাল
রমনা বটমূলে বোমা হামলা: দুই মামলা ঝুলছে ২৩ বছর

রমনা বটমূলে বোমা হামলা: দুই মামলা ঝুলছে ২৩ বছর

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলা ২৩ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। সাক্ষীদের হাজির করতে না পারায় এর বিচার থমকে আছে। মামলার ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। একই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ঢাকার বিচারিক আদালতে রায় দিলেও আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) আবেদন হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে ১০ বছর। কবে নাগাদ নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়ার সব ধাপ সম্পন্ন হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘রমনার বটমূলে হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. আলী রেজা সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য রয়েছে। আগামী মাসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, ওই বেঞ্চের একজন বিচারক আগে আইনজীবী হিসেবে এ মামলার কাজে ছিলেন। তাই তিনি শুনানি করতে পারেননি। এ কারণে হয়ত কিছুটা সময় লেগেছে। তবে এবার শুনানি হবে। রাষ্ট্রপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে। ২৩ বছর আগে ২০০১ সালে পহেলা বৈশাখের ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ঘটনাস্থলে দুটি শক্তিশালী বোমা পুতে রাখা হয়। পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে তা বিস্ফোরণ ঘটায় আসামিরা। বিস্ফোরণে ১০ জন প্রাণ হারান এবং অন্তত ১১ জন আহত ও পঙ্গু হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা করে। এর প্রায় সাড়ে সাত বছর পর ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর দুই মামলারই অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ নেতাকর্মী এ দুই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। এরমধ্যে হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চারজন এখনো পলাতক। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছে আসামিরা এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ডেথ রেফারেন্স আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ পর্যন্ত হাইকোর্টের ৬টি বেঞ্চে বিভিন্ন সময় মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত হলেও তা নিষ্পত্তি হয়নি। সবশেষ হত্যা মামলার নথি দেড় বছর বেঞ্চ গঠনের নির্দেশনার জন্য প্রধান বিচারপতির দপ্তরে ‘ফাইলবন্দি’ ছিল। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুযায়ী মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. আলী রেজা সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়। জানতে চাইলে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ওই বেঞ্চে নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শামীম খান সমকালকে বলেন, ‘গত মাসে মামলাটি শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালত ঈদের চলমান ছুটি শেষে মামলাটি উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি জানান, মামলাটি শুনানির জন্য পেপারবুক থেকে অন্যান্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে, রমনা বটমূলে হত্যা মামলার বিচার হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকলেও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যাচেষ্টা এবং একই হামলায় তিনজন নিহতের ঘটনায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সরকার। ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে মুফতি হান্নানসহ তার আরও দুই সহযোগীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। *বিস্ফোরক মামলা:* হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে দীর্ঘদিন বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ থমকে ছিল। ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর ২০২১ সালে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের তৎপরতায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ওই ট্রাইব্যুনালেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে দ্রুত বিচার আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বেশি থাকায় গত বছরের মার্চে বিস্ফোরক মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর সপ্তম আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে ওই আদালতে মামলার বিচার থমকে আছে। জানতে চাইলে ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘সাক্ষী না আসায় মামলার শুনানি হচ্ছে না। আরও দু–তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। নয়তো আসামিরা এর সুযোগ নিতে পারে।’ তিনি জানান, শিগগিরই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার পাশাপাশি আসামিদের ৩৪২ ধারা পরীক্ষার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগ নেবে।
Published on: 2024-04-14 08:51:22.140716 +0200 CEST