সময় নিউজ
উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন খোদ মেয়র তাপসের, একহাত নিলেন স্থপতিরাও

উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন খোদ মেয়র তাপসের, একহাত নিলেন স্থপতিরাও

খাল দখল আর সবুজ নিধনে কংক্রিটে ঠাসা এখন ঢাকা। গত তিন দশকে রাজধানীর প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা গিলে খেয়েছে কংক্রিট। এজন্য বিভিন্ন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট স্থপতি আর পরামর্শকদের ওপর দায় চাপালেন খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র। যদিও মেয়রকে একহাত নিলেন স্থপতিরাও। বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউটের (বিআইপি) তথ্য বলছে, ১৯৯৯ সালে ঢাকার কংক্রিটের আচ্ছাদিত এলাকা ছিলো ৬৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০০৯ সালে যা ৭৭ দশমিক ১৮ ভাগ। ২০১৯ সালে সেই পরিসংখ্যান ৮১ দশমিক ৮২। বর্তমানে যা প্রায় ৮৫ ভাগ। অর্থাৎ ইট-পাথর যেন ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে সবুজ আর জল। রাজধানীর মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকা। বছর তিনেক আগেও এখানে ছিলো জলাধার। আবাসনসহ সরকারি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের বদৌলতে এখানে এখন কংক্রিটের জঞ্জাল। চোখের সামনে এমন উদাহরণ নতুন নয়, একটু সামনেই সড়ক সংস্কারে উজাড় হয়েছে মিরপুর রোডের সবুজ। ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডেরও একই হাল। এদিকে, গাবতলীতে জলাধার ভরাট করে অট্টালিকার পরিকল্পনাও একটি সরকারি সংস্থার। এমনকি হাতিরঝিলের পানি আর পান্থকুঞ্জের সবুজে হাত পড়েছে নানা প্রকল্পের। অন্যদিকে আধুনিকায়নের নামে ওসমানী উদ্যানও হারিয়েছে সবুজ আর পুকুর হারিয়েছে পানি। একের পর এক খাল দখল আর সবুজ নিধনে এখন কংক্রিটের নগর এই ঢাকা। ডিএসসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুল মান্নান বলেন, জলাধারগুলো বন্ধ করে সরকারি বিভিন্ন কোয়াটার আর বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ওয়ার্ডের ছয়টা পুকুরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুকুরটাও এরইমধ্যে ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সবুজায়ন এমনিতেই তিন শতাংশের এক শতাংশও নেই। কারণ, সবুজ আমরা বেমালুম ধ্বংস করছি। এটা হচ্ছে ধ্বংসাত্মক প্রবণতা। রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক পর্যায়ে অবকাঠামোর যে গুরুত্ব, সবুজ রক্ষায় সেভাবে নাই। গত কয়েক বছরে এই নগরের দাবদাহের চিত্র বলে দিচ্ছে, দীর্ঘদিনের ভুলের খেসারত কতোটা নির্মম হতে পারে। চলতি মৌসুমে হয়তো ছাপিয়ে যাবে সব রেকর্ড। তাহলে এই নগরের ভবিষ্যৎ কী? উন্নয়নের নামে একের পর এক প্রকল্প হলেও কতোটা পরিবেশবান্ধব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ ঢাকা দক্ষিণের নগরপিতা। যাদের পরামর্শে এসব প্রকল্প, সরাসরি তাদের দিকেই আঙুল তুললেন তিনি। যদিও স্থপতিরাও একহাত নিয়েছেন মেয়রের। ডিএনসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনের পরামর্শকরা সেক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থ। তারা বলে এক সময় সবুজায়ন হতে হবে আবার যখন প্রকল্প সাজায়, গাছ কেটে সাজায়। বলে জলাধার রক্ষা করতে হবে। কিন্তু যখন পরামর্শ দেয় তখন সেই জলাধারকে সংকুচিত করে সেখানেই খুঁটি বসায়।’ তবে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি পেয়ে আসছি খাল উদ্ধারের। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তব কোনো প্রকল্প দেখি নাই। সংখ্যা দিয়ে লক্ষ লক্ষ গাছ কাটা হচ্ছে। যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের সবুজায়ন ও জলাধার সংরক্ষণ ইত্যাদি তাগিদ দেয়ার মধ্যদিয়ে একটি সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিতের চেষ্টা করা হচ্ছে, সেগুলোকে বক্রদৃষ্টিতে বিভিন্নরকম মন্তব্যের মধ্য দিয়ে দায় মোচনের কোনো সুযোগ নাই।’
Published on: 2024-04-25 19:23:48.060134 +0200 CEST