সময় নিউজ
ফি বছর লাগানো কোটি কোটি টাকার গাছ যায় কোথায়?

ফি বছর লাগানো কোটি কোটি টাকার গাছ যায় কোথায়?

চলমান দাবদাহে তীব্র গরমের আঁচ গায়ে লাগতেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে গাছ লাগানোর হাঁকডাক। প্রতিবছর ঢাকঢোল পিটিয়ে লাগানো হয় লাখ লাখ গাছ। কিন্তু প্রশ্ন হলো ফি বছর রোপণ করা এতো এতো গাছ যায় কোথায়? বাস্তবতা হচ্ছে, কোটি টাকা খরচ করে গাছ রোপণ করা হয় ঠিকই; কিন্তু বাঁচিয়ে রাখার জন্য নেয়া হয় না ন্যূনতম কোনও যত্ন। সীমাহীন অবহেলায় গলা টিপে টিপে গাছের এমন হত্যাযজ্ঞ চললেও যেনো কারো নেই কোনো দায়, নেই কোনো জবাবদিহিতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সবুজ ঘিরে এমন নাটক বন্ধ না হলে মুক্তির আর কোনো পথই খোলা নেই। ২০২০ সালে রাজধানীর বাংলামোটরে রোপণ করা হয়েছিল একটি গাছ। বয়সের হিসেবে গাছটি চার বছর পার করে ফেলেছে। কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই ইট-পাথরের ভাঁজে লাগানো গাছটি এখনো টিকে আছে; এক প্রকার ধুকে ধুকে বেঁচে থাকার মতো। ওই সময়ই 'সময় সংবাদ' চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, বৃক্ষ রোপণের নামে রাজধানীতে চলা নৈরাজ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো চার বছরের ব্যবধানে কতোটুকু বদলেছে পরিস্থিতি? সবুজ বন্ধু গাছের সামগ্রিক চিত্র দেখার আগে নজর দেয়া যাক চার বছর আগে অর্থাৎ প্রায় একই সময়ে একই এলাকায় লাগানো অন্যান্য গাছের দিকে। তবে গাছের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। পরিচর্যার অভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অনেক আগেই। গাছ রোপণে কোথাও নেই কোনো পরিকল্পনা। পথের ধারে মাটির কিছুটা অস্তিত্ব মিললেই পুঁতে দেয়া হয় গাছ। করা হয় না মাটির পরিমাণ কিংবা গাছের প্রজাতি নিয়ে কোনোরূপ বাছবিচার। এ যেনো তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়! কথা ছিলো বিভিন্ন ফাঁকা জায়গার মতো সবুজে ভরে উঠবে ফুটওভার ব্রিজও। সেই লক্ষ্যে লাগানো হয় দৃষ্টিনন্দন গাছও। কিন্তু ধুকে ধুকে নিঃশেষ হওয়া গাছের খালি টব এখন রূপ নিয়েছে দৃষ্টিদূষণের কারণ হিসেবে। এতো গেলো বৃক্ষ রোপণ কিংবা যত্নআত্তির বিষয়; কিন্তু এর বাইরেও উন্নয়ন কিংবা প্রয়োজনের অযুহাতে এ শহর থেকে এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি সবুজ নিধন। বিনিময়ে বিক্ষিপ্ত ও অপরিকল্পিতভাবে কিছু গাছ রোপণ করা হলেও সেখানেও নেই কোনো যত্নের ছোঁয়া। একটি আদর্শ নগরীতে সবুজের প্রয়োজন অন্তত ২০ ভাগ, যদিও ঢাকায় আছে মাত্র ৮ ভাগ। এর মধ্যে আবার সমৃদ্ধ আর পরিবেশবান্ধব গাছ মাত্র ২ ভাগ। পরিণাম, এ নগরীতে গত সাত বছরে তাপমাত্রা বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন বলেন, এক সময় বড় বড় গাছ ছিল। পরে তা কেটে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ছোট ছোট গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলোও তো ঠিকমতো অক্সিজেন দিচ্ছে না। এর ফলে বাতাসে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, কার্বন-ডাই অক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে। এ অধ্যাপকের মতে, ঢাকায় এতোদিন যা গাছ লাগানো হয়েছে অধিকাংশই পরিকল্পনা ছাড়া। যার পরিণাম আজকে সবাই ভোগ করছে। এমন অবিচারের কারণ হিসেবে দিনের পর দিন কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা ও জবাবদিহিতার অভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণে ফেরার প্রতিশ্রুতি সংশ্লিষ্ট দফতরের। অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন প্রশ্ন রেখে বলেন, আগের বছর শুনি দুই লাখ বা তিন লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরের বছরও শুনি একই কথা। তাহলে আগের বছর যে গাছগুলো লাগানো হয়েছে, সেগুলো গেল কোথায়? মানে হচ্ছে, আগের বছর যে এক লাখ গাছ লাগানো হয়েছে, তা মারা গেছে। এ বছর একই জায়গায় আবার গাছ লাগানো হবে। এ বিষয়কে নাটকের সাথে তুলনা করলেন এ উদ্যানতত্ত্ববিদ। তিনি বললেন, দাবদাহে প্রাণ-প্রকৃতির এ ছন্দপতন থেকে মুক্তির জন্য বিকল্প নেই সবুজ বিপ্লবের।
Published on: 2024-04-26 10:00:27.934651 +0200 CEST