সময় নিউজ
সাড়ে ৩ বছরে ভৈরব সেতুর অগ্রগতি ১৩ শতাংশ!

সাড়ে ৩ বছরে ভৈরব সেতুর অগ্রগতি ১৩ শতাংশ!

দুই বছরে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও খুলনার ভৈরব সেতু সাড়ে ৩ বছরে হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ! এতে ক্ষুব্ধ দুই পাড়ের মানুষ। ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। সব জটিলতা নিরসন করে দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করে নতুন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার আশা সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের। খুলনা মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা ভৈরব নদের দুই পাড়ের মানুষের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ২০১৯ সালে একনেকে পাস হয় ভৈরব নদের ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প। কার্যাদেশের পর ২০২০ সালের নভেম্বর শুরু হয় এ সেতুর নির্মাণকাজ। যা পরবর্তী দুই বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এরইমধ্যে পার হয়ে গেছে সাড়ে তিন বছর। এরই মধ্যে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। চার বছরে নানা অজুহাতে কাজ বন্ধ হয় চার থেকে পাঁচবার। একমাস ধরে ফের বন্ধ রয়েছে নির্মাণ কাজ। এখন পর্যন্ত সেতু নির্মাণে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ। যেখানে দিঘলিয়া প্রান্তে ৯টি পিয়ার আর শহর প্রান্তে দুটি পিয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে দুই পাড়ের মানুষের নদী পারাপারে ভোগান্তি বেড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলাতিকে দুষছেন তারা। দিঘলিয়ার এক কলেজশিক্ষক বলেন, ‘খুলনার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমাদের স্বপ্নের এক সেতু এটা। এ সেতুর জন্য আমরা জমি দিয়েছি। কিন্তু কাজের গতি দেখে তো মনে হচ্ছে না এ কাজ শেষ করার কোনো ইচ্ছা আছে কর্তৃপক্ষের। বছরের পর বছর কেটে যায়, কাজ এগোয় না। আর আমাদের ভোগান্তিরও শেষ হয় না।’ দিঘলিয়ায় কৃষি কাজ করেন সুলতান। তিনি বলেন, ‘এই সেতু নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিলো। আমরা প্রতিদিন আমাদের কৃষিপণ্য নিয়ে সহজে এই ব্রিজ পার হয়ে শহরে যেতে পারতাম। এখন আমাদের কষ্ট আর ভোগান্তি নিয়ে ট্রলারে যেতে হয়। এতে খরচ আর অর্থ দুটোই বাড়ে।’ চাকরির জন্য সপ্তাহে ৬ দিন শহর থেকে দিঘলিয়ায় যেতে হয় শাহেদ নেওয়াজ নামে আরেকজনের। তিনি বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে দেখছি কখনও একটু কাজ হয় আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে কাজ চলতে পারে না। মোটর সাইকেলে করে প্রতিদিন শহর থেকে গ্রামে আসতে হয়, আসার পথে ট্রলারে পারাপারে নানা ভোগান্তি হয়। সেতুটা হয়ে গেলে আমাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক এসএম নাজমুল বলেন, ‘কাজ শুরুর পর থেকে আমাদের জমি ঠিকভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এখনও আমরা জমি বুঝে পাইনি শহর প্রান্তে। ফলে আমরা ঠিকভাবে কাজ করতে পারছি না। সেইসঙ্গে সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়েছে। আমরা নতুন করে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি। আশা করি, নতুন নির্ধারিত সময়ে আমরা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারব।’ এদিকে কাজের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধীরগতির কথা জানিয়ে তাদেরকে সতর্ক করার কথা জানায় সড়ক বিভাগ। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। দিঘলিয়া প্রান্তে আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জমি বুঝিয়ে দিয়েছি। আর শহর প্রান্তে আমরা জমি বুঝে পাওয়ার জন্য শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব। এছাড়া রেলওয়ের সঙ্গে আমাদের জমি হস্তান্তর কার্যক্রম অনেকটা এগিয়েছি। আর একটা সভা হলেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরও ধীরগতি রয়েছে। তাদের কাজের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা সেই গতিতে কাজ করেনি। আমরা তাদের বারবার সতর্ক করেছি। কাজের গতি না বাড়ালে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ এক দশমিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব সেতুর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
Published on: 2024-04-26 02:43:14.096593 +0200 CEST