সময় নিউজ
ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ, গারো পাহাড়ে দাবানলের আশঙ্কা

ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ, গারো পাহাড়ে দাবানলের আশঙ্কা

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শেরপুরের গারো পাহাড়ে পল্লী বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগে হুমকিতে পড়েছে বন ও বন্যপ্রাণী। এই পাহাড়জুড়ে একটা সময় নানা প্রজাতির গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালীসহ পশুপাখির অবাধ বিচরণ ছিল; সেখানে ছিল পরিবেশের ভারসাম্যও। তবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে সঞ্চালন লাইনগুলোতে প্লাস্টিকের কভার না থাকায় গাছের ডালের সঙ্গে সংঘর্ষে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট হয়ে যে কোনো সময় গহীন অরণ্যে দাবানলের সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ওই এলাকার বনরক্ষা এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য করার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গারো পাহাড়ের বিস্তর এলাকাজুড়ে বনভূমি বেদখল করে নিজেদের আবাসস্থল গড়েছেন স্থানীয়রা। আর তাদের এই অবৈধ দখলকে পাকাপোক্ত করতে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে জমির মালিকানার কোনো প্রকার দলিল ছাড়া শুধু মাত্র ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র জমা রেখেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। পরিবেশবাদীরা জানান, শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে গারো পাহাড়। কয়েক বছর ধরে অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য দখল হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের একরের পর একর জমি। বন হারাচ্ছে নিজস্ব রূপ। পল্লী বিদ্যুতের দেয়া খোলা তারে উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনগুলো বনের একপ্রান্ত থেকে চলে গেছে অন্য প্রান্তে। এগুলো থেকে দেয়া হয়েছে অবৈধ দখলদারদের বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ। সঞ্চালন লাইনগুলোতে প্লাস্টিকের কভার না থাকায় গাছের ডালের সঙ্গে সংঘর্ষে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট হয়ে বনের গাছপালায় যে কোনো সময় আগুন লেগে বিরাট দাবানলের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। গান্ধিগাঁও গ্রামের মজিবর রহমান জানান, বনে সামান্য কিছু জমি ছাড়া বেশিরভাগই খাস। এই খাস জমির বাসিন্দারাও পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ। জমির দলিল-দস্তাবেজ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নিয়ম না থাকলেও বেশিরভাগ বাসিন্দা জাতীয় পরিচয়পত্র আর ছবি জমা দিয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ। ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি এলাকা নকশী বাসিন্দা রমেতা রাকসাম জানান, বিদ্যুৎ নেয়ার সময় আমরা কোনো কাগজপত্র দেইনি। শুধুমাত্র আমাদের ছবি আর জাতীয় পরিচয়পত্র জমা নিয়েছে, সঙ্গে চার হাজার করে টাকাও দিয়েছি আমরা। আমরা বনের জায়গায় থাকি, জমির মালিকানার কাগজ কোথায় পাবো। এ দিকে পরিবেশবাদী সংগঠনের দাবি, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বনভূমিতে অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বন্যপ্রাণীরাও নিজেদের আবাসস্থল হারিয়ে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। ফলে প্রাণীশূন্য বন প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য হারিয়ে পরিণত হয়েছে উপশহরে। তাই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বনকে রক্ষা করে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য করার দাবি জানান পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন। এ বিষয়ে শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা থাকায় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে এমন কাজ করা হয়েছে। তবে, বন বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে অবৈধ সব বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সরকারি খাস জমি উদ্ধারের সহযোগিতার কথাও জানান তিনি। এ দিকে বনবিভাগের বালীজুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া সময় সংবাদকে জানান, পল্লী বিদ্যুতের কাভারবিহীন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন যে তারগুলো বনের ভিতর দিয়ে গেছে সেগুলো থেকে যেকোনো সময় শটসার্কিটের মাধ্যমে বনে আগুন লেগে যেতে পারে। বনে একবার আগুন লাগলে তা দাবানলেও রূপ নিতে পারে। যা বনের জন্য এমনকি বন্যপ্রাণীর জন্যও মারাত্মক হুমকির কারণ। অতিদ্রুত বনের ভেতর থেকে প্লাস্টিকের কাভারবিহীন সঞ্চালন লাইনগুলো সরিয়ে নিরাপদ তার ব্যবহার করতে পল্লী বিদ্যুৎকে অনুরোধ করেন তিনি। জেলায় ১৯ হাজার ২৭৫ একর বনভূমির মধ্যে দুই হাজার ৩৭ একর বনভূমি বেদখল হয়ে আছে।
Published on: 2024-04-28 02:22:36.68479 +0200 CEST