The Business Standard বাংলা
ছোট দলের প্রধানরা কেন ‘আশীর্বাদ’ চান আওয়ামী লীগের?

ছোট দলের প্রধানরা কেন ‘আশীর্বাদ’ চান আওয়ামী লীগের?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাসও বাকি নেই। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও ১৬টি ছোট দল এবার কোনো জোটে যোগ দেয়নি। প্রধানদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল এই দলগুলোর অধিকাংশই আগের নির্বাচনগুলোতে নিজস্ব শক্ততে বলার মতো কোনো সাফল্য পায়নি । নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জোটে না থাকা এবার নির্বাচনে যাওয়া এই ১৬ দলের প্রধানদের অধিকাংশই বিগত নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন। তবে এবার বিএনপি নির্বাচনে না আসায় এই দলগুলোর আশা, কিছু আসনে আওয়ামী লীগ তাদেরকে ছাড় দেবে। তবে দলগুলোর ইতিহাস বলছে, তাদের নিয়ে লেখার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা নেই। এই ১৬টি দলের মধ্যে সাতটি দলের প্রধান গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। একজনও জিততে পারেননি। এই সাতটি দলের প্রধানরা ২০১৮ সালের নির্বাচনে একসঙ্গে ভোট পান ৬০ হাজার ৮৯৩টি। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিএনপির সঙ্গে জোট করে চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে নির্বাচন করে একাই পেয়েছিলেন ৪৪ হাজারের বেশি ভোট। আর বাকি ৬ জনের মোট ভোট ১৬ হাজার ৫১২। ওই আসনে ইবরাহিমের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৫৭ ভোট। ইবরাহিমের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অতীত-ইতিহাসও বলার মতো নয়। ইবরাহিম তার দলীয় প্রতীক নিয়ে ২০০৮ সালে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করে পেয়েছিলেন মাত্র ৬৮৮ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেননি। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এবার চট্টগ্রাম-৫ ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে লড়বেন। কোনো জোটবদ্ধ দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তার জন্য এবার কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অপেক্ষা করছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুস সালামের। আর চট্টগ্রাম-১৬ আসনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তবে ইবরাহিম এবার তার দলকে নিয়ে উচ্চাশাই পোষণ করছেন। সম্প্রতি তিনিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'তগুলো আসনে আমরা প্রার্থী দিয়েছি, তার বেশ কয়েকটিতেই আমরা জয়ের স্বপ্ন দেখছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের বেশ কয়েকজন প্রার্থীই জয়লাভ করবেন।' ২০০৮ সালে কল্যাণ পার্টি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ওই নির্বাচনে দলটি ৩৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২১ হাজার ৬০৯টি ভোট পায়। আর সব প্রার্থী তাদের জামানত হারান। কল্যাণ পার্টি ছাড়াও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন দলের প্রধানরা অংশ নিয়েছিলেন। *বড় আশা* গত নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে মাত্র ৫০টি ভোট পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ। এবারেও তিনি একই আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এবার বিএনএফ সভাপতির আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবুল কালাম আজাদ ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকেই 'ফাঁকা মাঠে' সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ ঢাকা-১৭ আসনে কোনো প্রার্থী না দেয়নি; আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এবারের নির্বাচনে আজাদ ছাড়াও আরও ৫৪ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনএফ। *ভোট কম, আত্মবিশ্বাস বেশি* বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বুলবুল) ২০১৮ সালের নির্বাচনে একজন প্রার্থী দিয়েছিল। দলের সভাপতি এসকে জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী তার নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১-এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেবার ২২৮ ভোট পেয়েছিলেন। হারিয়েছেন জামানতও। এবার সভাপতির নিজের নির্বাচনী এলাকায় তিনিসহ পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। তবে চট্টগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে জুলফিকার আশা করছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি জয়ী হবেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলে আমি আমার আসনে জয়লাভ করব এবং বাকি চারটি আসনে আমাদের প্রার্থীরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।' বাকি দলগুলোর মধ্যে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ২০১৮ সালে চাঁদপুর-৫ আসন থেকে নির্বাচন করে মাত্র ৩ হাজার ৫৭২ ভোট পান। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি পান মাত্র ১ হাজার ২০ ভোট। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। রফিকুল এই আসনে ২০০৮ থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য। ১৯৯৬ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে কখনও জিততে না পারলেও আসন্ন নির্বাচনেও চাঁদপুর-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মোজাদ্দেদী। এদিকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএ মতিন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারী দুজনেই এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে তরিকত ফেডারেশনের প্রধান, জাপা প্রার্থী শফিউল আজম চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ারের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী আওয়ামী লীগের জোট থেকে নির্বাচন করে ২০১৪ থেকে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজী প্রথমবারের মতো মানিকগঞ্জ-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত মানিকগঞ্জ-১ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ১ হাজার ২৬০ ভোট পেয়েছিলেন। এবার মানিকগঞ্জ-১ আসনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সালামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ১৬টি দলের প্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে সফল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। নিজের দলকে তিনি একাধিকবার জয় এনে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবেও তিনি জয়ী হয়েছেন। কাদের সিদ্দিকী এবার টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অনুপম শাহজাহান জয়। শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণসহ বিভিন্ন কারণে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না জাকের পার্টি, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন) এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রধানরা। *প্রথমবার নির্বাচন করছেন যারা* বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রধানরা এবার দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নেবেন। এদের মধ্যে বিএনএমের  ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ফরিদপুর-১ আসন থেকে ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। তখন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ৩৯৩ ভোট। তবে নির্বাচনে তিনি হেরে যান। বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন দল থেকে চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু প্রথমবারের মতো নিজ দলের প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ইমদাদুল হকও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিগত নির্বাচনগুলোতে কোনো জয়ের রেকর্ড না থাকলেও আসন্ন নির্বাচনে এনপিপি ১৪২ জন প্রার্থী দিয়েছে। শেখ সালাউদ্দিন সালু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর যদি কোনো সমঝোতা হয়, তাহলে দেখা যাবে কী হয় না হয়।' প্রয়াত মুফতি আমিনীর ছেলে এবং ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত এবারের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে লড়বেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মো. শাহজাহান আলম। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন মো. আব্দুল হামিদ। এদিকে প্রথমবারের মতো তৃণমূল বিএনপির সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসন থেকে এবারে নির্বাচন করবেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ তার প্রতিদ্বন্দ্বী। শমসের মবিন চৌধুরী ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন এবং ২০০৯ সালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৫ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। পরে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হন। এরপর ২০১৯ সালে তিনি বিকল্পধারা ছেড়ে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে চেয়ারপারসন মনোনীত হন।
Published on: 2023-12-12 08:42:59.658033 +0100 CET

------------ Previous News ------------