The Business Standard বাংলা
আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন

আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন

অন্য দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ২০১৭ সাল থেকে এপর্যন্ত ২,৫৫৫ জন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। এরমধ্যে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই ৪৯৮ জন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন- যা এসময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নাগরিকত্ব ত্যাগের ঘটনা। আর সর্বনিম্ন, বা ১২০ জন ছিল ২০১৭ সালে। আর ২০২২ সালে নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন ৪২৫ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে নাগরিকত্ব নিতে ৪৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিকত্ব-ত্যাগের আবেদন করে, যা সরকার অনুমোদন করেছে।  যদিও এসব আবেদনের বড় অংশই ২০২১ ও ২০২২ সালে করা। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন করে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী যাচাইবাছাই করে সেগুলো অনুমোদন করা হয়। *নাগরিকত্ব কেন পরিত্যাগ করা হচ্ছে?* স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রয়েছে, যেখানে নাগরিকত্ব পেতে অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হয়। বাংলাদেশিরা ওইসব দেশের নাগরিকত্ব পেতে বা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য স্বদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করছেন। তারা আরো জানান, যারা দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করছেন, তাদের বেশিরভাগের লক্ষ্য বিদেশে উন্নত জীবনযাপন উপভোগ করা। আবার অনেকে বিবাহজনিত কারণে, বা বিদেশি নাগরিককে বিয়ের পর স্বামী/স্ত্রীর দেশে স্থায়ী হচ্ছেন। এছাড়া রাজনৈতিক কারণেও কেউ কেউ বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। অনেকে লেখাপড়া, চাকরি নিয়ে বিদেশে গিয়ে স্থায়ী হচ্ছেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. শাহ এহসান হাবিব টিবিএসকে বলেন, বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ নাগরিকত্ব ত্যাগ করছে। ফলে কারণগুলো সরলভাবে বলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে নাগরিকত্ব নিচ্ছেন, তারা যেসব বিষয় বিবেচনা করেন, ইউরোপ বা অন্য দেশে  নাগরিকত্ব গ্রহণকারীরা  হয়ত সেসব বিষয় বিবেচনা করেন না। তবে মোটা দাগে কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশে মানসম্মত লেখাপড়া ও কর্মসংস্থানের অভাব। দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা রাজনীতিবিদদের এক অংশ তাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠাচ্ছেন। "ওইসব শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষ করে বিদেশেই কাজে যোগ দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে সেখানে স্থায়ী হতে দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করছেন"- বলছিলেন তিনি। এছাড়া দেশে পেশাজীবীদের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। ফলে অনেকে বিদেশে গিয়ে স্থায়ী হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তিগত সুবিধা মানুষের ভৌগলিক দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। যে কারণে মানুষ পরিবার বা স্বজনদের থেকে দূরে থাকতে অস্বাচ্ছন্দবোধ করছে না। *যেসব দেশের নাগরিকত্ব নেওয়া হয়েছে বেশি* স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন, তারা সবচেয়ে বেশি নিয়েছেন জার্মানির নাগরিকত্ব। এরপরেই অষ্ট্রিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারতের নাগরিকত্ব পেতে দেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন অন্যেরা। একইসময়ে, বতসোয়ানা, নেপাল, ইতালি, ইউক্রেন, লিথুনিয়া, শ্রীলংকা, স্পেন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, বুলগেরিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, নরওয়ে, জিম্বাবুয়ে, মিয়ানমার, সাইপ্রাস, ইরানের নাগরিকত্ব নিয়েছেন অনেকে। তারা তাদের বাংলাদেশি পার্সপোর্ট সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দিয়েছেন। জার্মানি এ বছরের শুরু থেকে নতুন অভিবাসন আইন কার্যকর করেছে। যেখানে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভিন দেশের দক্ষ কর্মী পেতে জার্মান সরকার এ সিদ্ধান্ত  নিয়েছে। জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক এ বিষয়ে টিবিএসকে বলেন, "গতবছর পর্যন্ত জার্মানিতে নাগরিকত্ব নিতে অন্য দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হত। নতুন অভিবাসন আইন, যা গত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে সেখানে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশিরা নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে পাসপোর্ট জমা দিচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, সিংহভাগ বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছে। এসব আবেদনকারী ভবিষ্যৎ জটিলতার ভয়ে নিজের দেশের পাসপোর্ট সারেন্ডার করছে"। *নাগরিকত্ব ত্যাগের নিয়ম* কেউ যদি বাংলাদেশের ত্যাগ করতে চান- তাহলে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। যে দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে, সে দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের এ সংক্রান্ত চিঠি, প্রমাণপত্র বা অফার নোট জমা দিতে হবে। নাগরিকত্ব পরিত্যাগের জন্য ৫ হাজার টাকার চালান এবং যে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা হবে, সেদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সুপারিশ জমা দিতে হয়। আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে- তার পিতামাতা উভয়ের স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ৪৪টি দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা দিয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো গেজেট প্রজ্ঞাপন এখনও প্রকাশ হয়নি। এর আগে আরও ৫৭টি দেশের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা দিয়েছে সরকার। এর অর্থ হচ্ছে ১০১টি দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিরা দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা পাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই ১০১ দেশে নাগরিকত্ব নেওয়া মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তবে কতজন বাংলাদেশির দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে তার সঠিক হিসাব সরকারের কাছে নেই।
Published on: 2023-03-11 09:54:41.604415 +0100 CET

------------ Previous News ------------