The Business Standard বাংলা
উচ্চ জন্মহার বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ?

উচ্চ জন্মহার বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ?

কোভিড-১৯ মহামারির পর বিশ্বে জন্মহার কমে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে বরং এর বিপরীত দৃশ্যপট দেখা গেছে — কোভিড-পরবর্তীসময়ে জন্মহার উল্লেখযোগ্যহারে বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে একটি বেবি বুম-এর সূচনা হয়। ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্থূল জন্মহার ছিল প্রতি ১,০০০ জনে ১৮ দশমিক ৮, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৩-এ। এছাড়া ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) ২ দশমিক ০৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ১৫। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, দেশে ১৪ বছরের কম বয়সী মানুষের জনসংখ্যা এক পার্সেন্টেজ পয়েন্ট বেড়ে ২০২২ সালে ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। জন্মহার ক্রমহ্রাসমুখী হওয়ার কারণে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইতালি ও ফ্রান্সের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলো যখন জনমিতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি সবার তুলনায় ভিন্ন। উচ্চ জন্মহার ও প্রজনন হার দেশের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত নানা পদক্ষেপের বিপরীত দৃশ্যপটের অবতারণা করেছে। মহামারির দরুন তৈরি হওয়া এ উচ্চ জন্মহারের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বৃহৎ অর্থনীতিগুলো। এর ফলে এ দেশগুলোর ক্ষয়িষ্ণু কর্মক্ষম জনসংখ্যার ওপর চাপ পড়তে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫–৪৯ বছর বয়সী) কিছুটা কমেছে। তা সত্ত্বেও এ ধরনের জনসংখ্যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মহামারি সময় জন্ম হওয়া শিশুরা দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা যায়, যা ৬০ বা তার বেশি বছর বয়সী ব্যক্তিদের সেবাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে বয়স্ক জনসংখ্যার এ অনুপাত গত বছর কিছুটা কমে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছিল। জাপান, চীন, ইতালি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলো যখন তাদের জনসংখ্যা হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন দেশে জন্মহার ও তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাবৃদ্ধি দেশের জন্য কল্যাণজনক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীন তার জনসংখ্যা কমতে দেখেছে। অন্যদিকে নিম্ন জন্মহার ও বয়স্ক জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি জাপানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। একইভাবে গত চার দশকের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে কম সংখ্যক শিশুর জন্ম হয়েছে। ইতালি ও ইউরোপীয় অন্যান্য দেশেও দেরিতে বিয়ে ও মাতৃত্বে অনীহার কারণে প্রজনন এবং জন্মহার কমে গেছে। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা হ্রাসের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে শ্রমশক্তির পরিমাণ কমে যেতে পারে, যার দরুন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি। জনসংখ্যার মিডিয়ান বয়সের সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক তরুণ। ২৬ দশমিত ৭ বছরের মিডিয়ান বয়সের বাংলাদেশের জনসংখ্যার সঙ্গে ভারতের তুলনা করা যায়। ভারতের জনসংখ্যার মিডিয়ান বয়স ২৭ দশমিক ৯ বছর। অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়ান বয়স অনেক বেশি — ৩৮ দশমিক ১ বছর থেকে ৪৫ দশমিক ৫ বছর। জনসংখ্যা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বাংলাদেশের উচ্চ কর্মক্ষম জনশক্তির সুবিধা স্বীকার করেন। তবে তিনি জোর দিয়ে এটাও বলেছেন, বাংলাদেশ মানসম্মত শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং তরুণ জনগোষ্ঠীকে মানবপুঁজিতে পরিণত করতে পারলেই কেবল এ সুবিধা নিতে পারবে। এছাড়া তিনি শিশু মৃত্যুহার, বাল্যবিবাহ, ও কম বয়সে গর্ভধারণের হার ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে নীতিনির্ধারকদেরকে বর্তমান নীতিমালা ও কর্মপ্রক্রিয়াকে ২০৩০ সালের জন্য নির্ধারিত বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে একীভূত করতে নতুন করে ভাবার আহ্বান করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি, কিন্তু দেশের জনগোষ্ঠী বর্তমানে দ্রুতগতিতে বয়স্ক হচ্ছে। 'বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের বয়স ১৫–২৪ বছর। এ তরুণদেরকে যদি আমরা সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই, তাহলে বৈশ্বিক দক্ষতা-চাহিদা মেটাতে তাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে দরকার হবে সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টিও নিশ্চিত করা,' বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মঈনুল। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা আর কেবল ১২ থেকে ১৩ বছর পাবে। কিন্তু মানবপুঁজি তৈরির জন্য দুই গুরুত্বপূর্ণ খাত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বাজেটে বরাদ্দ এখনো কম। আদতে এ বরাদ্দ নতুন বাজেটে মোট বাজেট ও জিডিপির সাপেক্ষে আরও কমেছে বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ড. মঈনুল। করোনাভাইরাস মহামারির সময় দেশের জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত দুটোই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সরকার নীতিমালা ঘোষণা করে এ দুই খাতের পরিস্থিতি উন্নয়নের কথা বলেছে। কিন্তু তার বিপরীতে এ দুই খাতের সরকারি চাকরিতেই সবচেয়ে বেশি পদ খালি। সরকারি তথ্যমতে সরকারি চাকরিতে মোট পাঁচ লাখ পদ খালি রয়েছে যার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ৫৭৪টি পদ শূন্য। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে মোট শূন্যপদের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৭৯০টি। 'দলমত নির্বিশেষে আমরা সবাই মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত। কিন্তু শিক্ষা মানে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে না পারা গোল্ডেন এ-প্লাস নয়। এছাড়া মানসম্মত শিক্ষার বিষয়টিও আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ,' বলেন সিপিডি'র ডিস্টিংগুইশড ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 'শিক্ষার মান বাড়াতে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া উচিত। এ খাতে মোট বাজেটের ২৫–৩০ শতাংশ ব্যয় করা উচিত,' বলেন তিনি। তিনি জানান ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ বরাদ্দ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অধ্যাপক মাঈনুল মনে করেন, ভবিষ্যতে দেশে ও বিদেশে প্রয়োজনীয় দক্ষতার চাহিদা মেটাতে তরুণ জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করতে নীতিমাল ও কার্যপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা ও সংশোধন করার কথা ন্যাশনাল পপুলেশন কাউন্সিল-এর। কিন্তু গত ১২ বছরে শক্তিশালী এ কমিটি একটি বৈঠকেরও আয়োজন করতে পারেনি। উদীয়মান অনেক দক্ষতার পাশাপাশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়াও বর্তমানে একটি চমৎকার দক্ষতা। জাপানসহ আরও অনেক দেশে এ খাতে কর্মসংস্থানের ভালো সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন এ অধ্যাপক। ২০২৩ সালের সার্বিক কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ সারা পৃথিবীতেই অনিশ্চিত। তবে বেশকিছু খাত আছে যেগুলোতে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে কোন চাকরির চাহিদা বেশি আর আগামীর চাকরির বাজার কেমন হতে পারে — এ বিষয়গুলো নিয়ে ধারণা রাখলে তা সঠিক দক্ষতা অর্জন এবং চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। নিজেদের গবেষণায় লিংকডইন গত চার বছরে বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি লাভ করা ১০০টি কাজের তালিকা তৈরি করেছে। এটির 'জবস অন দ্য রাইজ'-এর তালিকায় সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন কর্পোরেট চাকরির মধ্যে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল যোগাযোগ, সেলস গ্রোথ অ্যান্ড কাস্টমার অ্যাঙ্গেজমেন্ট ইত্যাদি। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম-এর ফিউচার অভ জবস ২০২৩-এ বলা হয়েছে, টেকসইতা ও পরিবেশ সম্পর্কিত চাকরিগুলোরও বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা দেখা যাচ্ছে। এটির মতে, কিছু সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে চাকরির চাহিদা বাড়বে। ভারতে যেসব চাকরি ব্যবাসয়িক প্রবৃদ্ধির ওপর আলোকপাত এবং নতুন ভোক্তা আকর্ষণের চেষ্টা করে সেগুলোর চাহিদা বাড়ছে। লিংকডইন-এর তথ্য অনুযায়ী, এসব চাকরির মধ্যে আছে সেলস ডেভেলপমেন্ট, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এবং চাহিদা তৈরি। ভারতে চাহিদা বাড়তে থাকা চাকরি নিয়ে লিংকডইন-এর তৈরি করা তালিকায় এ ধরনের চাকরির সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ১০টি চাকরি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল লার্নিং অ্যান্ড মেশিন লার্নিং স্পেশালিষ্ট, সাসটেইনেবিলিটি স্পেশালিষ্ট, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিস্ট, ইনফরমেশন সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট, ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা অ্যানালিস্ট অ্যান্ড সায়েন্টিস্ট, রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রোটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ার, এগ্রিকালচার ইকুইপমেন্ট অপারেটর, ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্পেশালিষ্ট। এসব প্রবণতার সঙ্গে বাংলাদেশে পর্যবেক্ষণ করা পরিস্থিতর মিল রয়েছে। দেশে ব্যাংকিং খাত তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছে এবং অন্য শিল্পগুলো বিশেষ দক্ষতার চাহিদা জানান দিচ্ছে। শাখাবৃদ্ধি ও কাজের পরিধি বাড়ার কারণে গত বছর ব্যাংকখাতে স্থিতিশীল নিয়োগ দেখা গেছে। তবে এ খাতের স্টেকহোল্ডারেরা বলছেন, তারা দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদেরকে নিয়োগ দেওয়ার পর প্রায়ই তাদেরকে বাড়তি প্রশিক্ষণের জন্য বিনিয়োগ করতে হয়। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদানের জন্য শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য দূর করার ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাদের আলাদা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের জন্য সফটওয়্যার শিল্পে কর্মসংস্থানের দারুণ সুযোগ রয়েছে — আগামী বছরগুলোতে এ শিল্পে কয়েক মিলিয়ন চাকরি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উভয় বাজারের জন্য স্থানীয় দক্ষতার চাহিদা মেটানোর জন্য এ পার্থক্য দূর করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন দেশের সফটওয়্যার খাতের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাসেল টি আহমেদ। শ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং উচ্চ আয়ের স্তরে পৌঁছাতে তিনি বাড়তি ও নতুন দক্ষতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 'বর্ধিষ্ণু তরুণ জনগোষ্ঠী তখনই কেবল আমাদের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হবে যখন তারা উচ্চশিক্ষিত ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে এবং ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে,' নিজের পর্যবেক্ষণ জানান অধ্যাপক ড. মাঈনুল। বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এর সোনালি সময়টুকু শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই মানবপুঁজি তৈরির জন্য জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।
Published on: 2023-06-24 18:14:14.130859 +0200 CEST

------------ Previous News ------------