The Business Standard বাংলা
নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে ইইউ মিশন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান

নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে ইইউ মিশন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান

সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশন সোমবার (১০ জুলাই) সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশের উন্নতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঝুঁকি, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। দুই সপ্তাহের সফরের দ্বিতীয় দিনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে প্রতিনিধিদলটি। এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি), বাংলাদেশ পুলিশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিয়ষক উপকমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে ইইউ মিশন। সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করি।' হোয়াইটলি বলেন, তারা ইইউ মিশন এবং রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও কথা বলেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদ ভেঙে দেওয়া, বা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে স্পষ্ট করেছেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। কাদের বলেন, আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সফররত ইইউ মিশন বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করবে কি না তা মিশনের ওপর নির্ভর করছে। 'ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। তারা সেরাটা আশা করছেন,' বলেন কাদের। এদিকে, সফররত ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আগে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উভয়েই নিজ নিজ অবস্থানের সমর্থনে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সরকার পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। আগামী বুধবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। এর প্রতিক্রিয়ায় একই দিনে ঢাকায় পাল্টা সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের পৃথক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া আজ থেকে চারদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। নতুন ভিসানীতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং রাজনৈতিক নেতাসহ কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা হলে তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, সোমবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে ইইউ প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, প্রতিনিধিদল আসন্ন নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করে বলেন, সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন বড় ধরনের সংঘাত ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশের উন্নতির ইঙ্গিত দেয়। তিনি আরও বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করেন যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ একটি পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে পারে। তিনি বৈঠকে বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয় নিয়ে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন এবং জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভোট প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। জাতীয় নির্বাচনের সময় পুলিশের ভূমিকা কী হবে? ইইউ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা করেছে। চেলেরি রিকার্ডোর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি পুলিশ সদর দফতরে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বৈঠকে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠকটি নির্ধারিত থাকলেও এটি অতিরিক্ত আইজিপি দ্বারা পরিচালিত হয় এবং পুলিশ সদর দফতর এই পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। পুলিশ সদর দফতরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনার প্রাথমিক বিষয় ছিল আসন্ন নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ। প্রতিনিধিদলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতা বা হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ থাকবে না বলে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে চলার এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার জানান। তবে, বৈঠকে পুলিশের নিরপেক্ষতা এবং নির্দলীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ওই সূত্ররা মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো. মঞ্জুর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আলোকপাত করা হয়নি। বরং, প্রতিনিধিদল নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা ও খোঁজখবর করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব: আওয়ামী লীগ ইইউ'র ছয় সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির নেতারা। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপকমিটির নেতারা প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিএনপি ধ্বংস করেছে। বিএনপি দেশের নির্বাচনীব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, বলেন আওয়ামী লীগের নেতার। তারা প্রতিনিধিদলটিকে আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় দেশের কোথাও সুষ্ঠু ভোট হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ সম্ভব বলেও ইইউ প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন তারা। এর আগে একই দিন সকালে প্রতিনিধিদলটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিশনসমূহের মহাপরিদর্শক আসাদ আলম সিয়ামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে কোনো পক্ষই আলোচনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। পার্বত্য অঞ্চল পর্যবেক্ষণে রাখতে চায় ইইউ জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল ছয় সপ্তাহের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানায় ইইউ প্রতিনিধিদল। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইইউ প্রতিনিধিদলকে এ বিষয়ে সব রকমের প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'তারা নির্বাচনের আগে ছয় সপ্তাহ পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখতে চান। তারা নির্বাচনের সময়ে আসবেন। আমরা বলেছি, সেটি নির্বাচন কমিশন দেখবে।' পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের অনুরোধ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি যেহেতু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তারা এ বিষয়ের সঙ্গে জড়িত না থাকার কথা স্পষ্ট করেছেন। বাংলাদেশে গত দুই জাতীয় নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইইউ। এর আগে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ২০০৮ সালে একটি ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েন করা হয়েছিল। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রধান পর্যবেক্ষক এবং সদস্য আলেকজান্ডার গ্রাফ ল্যাম্বসডর্ফ ওই নির্বাচনের সময় ১৫০ জন পর্যবেক্ষকের নেতৃত্ব দেন এবং একটি প্রতিবেদন জমা দেন। ইইউ নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশনের দলটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং নির্বাচন-পূর্ব পরিবেশ মূল্যায়ন করতে ১৬ দিনের সফরে গত ৮ জুলাই ঢাকায় পৌঁছেছে। দেশের বর্তমান ও নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে প্রতিনিধি দলটি রোববার বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। রোববার ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনাসহ প্রতিনিধিদলটির প্রধান চেলেরি রিকার্ডো এবং তার দল এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে।
Published on: 2023-07-10 20:28:34.57504 +0200 CEST

------------ Previous News ------------