The Business Standard বাংলা
ক্র্যাক প্লাটুনের নতুন ফর্মুলা ইলেকট্রিক ভেহিকেল: লক্ষ্য পোল্যান্ড বিজয়

ক্র্যাক প্লাটুনের নতুন ফর্মুলা ইলেকট্রিক ভেহিকেল: লক্ষ্য পোল্যান্ড বিজয়

পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়বে রেসিং ট্র্যাক 'অটোড্রোম সুয়োমচিন (Autodrom Slomczyn)'। আগস্ট মাসের ২৭ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত এখানেই অনুষ্ঠিত হবে পোল্যান্ডের প্রথম ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতা। ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছে পোল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্মুলা স্টুডেন্ট ক্লাবগুলো। চেক রিপাবলিক থেকে স্পেন, ইতালি থেকে অ্যান্ডোরা, ইউরোপের বহু দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতায় নিজেদের গাড়ি নিয়ে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের ছাপ রেখেছে পিকে মেকপাওয়ার বা পিজিরেসিং টিমের মতো অভিজ্ঞ দলগুলো। তবে অন্যান্য দলগুলোও একেবারে পিছিয়ে নেই। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'টিম ক্র্যাক প্লাটুন', যারা ২০১৯ সালে দেশের প্রথম ইলেকট্রিক ফর্মুলা ভেহিকেল নিয়ে ফর্মুলা স্টুডেন্ট জাপানে অংশগ্রহণ করেছিল। এ বছর তারা তাদের নতুন ইলেকট্রিক ভেহিকেল 'সিপি-ই২৩' নিয়ে পাড়ি জমাতে চায় পোল্যান্ডে, বিদেশের মাটিতে আবারো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চায় লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে। নতুন ইলেকট্রিক ভেহিকেল গাড়িটির নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ পর্যন্ত দলটির সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন ক্র্যাক প্লাটুনের টিম ক্যাপ্টেন শেখ তকী তাহমিদ। *প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি* প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্য নিয়ে টিম ক্র্যাক প্লাটুন কাজ শুরু করেছিল প্রায় এক বছর আগে থেকে। কাজ সম্পন্ন করার জন্য ক্লাবটিতে রয়েছে চারটি সাব-টিম: মেকানিকাল টিম, ইলেকট্রিকাল টিম, ডিজাইন টিম এবং বিজনেস টিম। চারটি দলের মধ্যেই তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়। শুরুতেই মেকানিকাল টিম আর ইলেকট্রিকাল টিম গাড়ির সাসপেনশন নিয়ে কাজ শুরু করে। সাসপেনশন হলো টায়ার, স্প্রিং, শক অ্যাবজর্বার দিয়ে তৈরি এমন এক ব্যবস্থা যেটি গাড়ির সাথে এর চাকার সংযোগ দেয়। গাড়ির সাসপেনশনের হিসাব-নিকাশ করে সাসপেনশন পয়েন্ট বের করার পর গাড়ির অন্যান্য অংশ নিয়েও একইভাবে হিসাব-নিকাশ করা হয়। এরপর প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ডিজাইনার টিম গাড়ির পুরো অংশের থ্রিডি মডেল ডিজাইন করে। ডিজাইন শেষ করার পর ডিজাইনগুলোকে বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে সিমুলেশন করে দেখা হয়। অ্যারোডাইনামিক্সের বিষয়গুলো ঠিকঠাক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। যদি না থাকে তবে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে আবারো সিমুলেশন করে দেখা হয়। এভাবে গাড়িটিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় নিখুঁত ডিজাইনে আনা হয়। গাড়ির মূল ডিজাইন হাতে পাওয়ার পর শুরু হয় গাড়ির পার্টস তৈরির কাজ। এক্ষেত্রে ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতাগুলোর নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড মেনে চলতে হয়। গাড়ির পার্টস তৈরির সময় বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হয়, বিশেষ করে কোন ম্যাটারিয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হবে সেটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট পার্টস থাকে, যেগুলো ব্যবহার করা আবশ্যক। বাংলাদেশে থাকার ফলে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হয় তাদেরকে। কারণ পার্টসের লভ্যতা। ১৩ ইঞ্চি টায়ার হুইল কিংবা শক অ্যাবজর্বারের মতো অনেকগুলো পার্টসই বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে পার্টসগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের বাইরে থাকা ভেন্ডরদেরকে ডিজাইন পাঠানো হলে তারা ডিজাইন অনুযায়ী সেগুলো প্রস্তুত করে পাঠিয়ে দেয়। অন্যদিকে, বডি ফ্রেম মূলত বাংলাদেশে নিজেরাই তৈরি করে নেয় 'টিম ক্র্যাক প্লাটুন'। এটি ছাড়াও গাড়ির ম্যাটারিয়াল নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেই ম্যাটারিয়াল কতটা দৃঢ়, কতটা চাপ সহ্য করতে পারে, কিংবা কতটুকু তাপমাত্রা গ্রহণ করতে পারে, সেগুলোও হিসাব করা হয়। এর সাথে যুক্ত হয় পার্টসটি নির্মাণ করতে কেমন খরচ হতে পারে সেই হিসাব। পার্টসের দাম, অ্যাভেইলেবিলিটি এবং ম্যানুফ্যাকচারেবিলিটির ওপর ভিত্তি করে কোনো পার্টস বানানো হবে নাকি আমদানি করা হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। সমস্ত পার্টস জোড়া দেওয়ার পর তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ ফর্মুলা স্টুডেন্ট কার। তবে তখনো সব কাজ শেষ হয়ে যায়নি। ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতার ডাইনামিক ইভেন্টগুলোতে (স্কিডপ্যাড, স্প্রিন্ট, অ্যাকসেলারেশন, এনডিউর‍্যান্স অ্যান্ড ফুয়েল ইকোনমি) গাড়িটির বেশ কিছু বিষয় পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রতিটি আলাদা আলাদা ইভেন্টে গাড়িটি কেমন পারফর্ম করছে তা টেস্ট রানের মাধ্যমে মিলিয়ে দেখা হয় আদৌ ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে কিনা। যদি না করে থাকে, তবে পার্টসের সমস্যা খুঁজে বের করে, সেটির সমাধান করে বারবার টেস্ট রানের মাধ্যমে গাড়িটিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী আদর্শ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এভাবেই পোল্যান্ড প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা হয়েছে 'সিপি-ই২৩'-কে। *'সিপি-ই২৩'-এর কলকব্জা* ১৩ ইঞ্চি ব্যাসের চাকা দিয়ে তৈরি সিপি-ই২৩ ছুটতে পারে ঘণ্টাপ্রতি ১২০ কিলোমিটার গতিতে, যার মূলে রয়েছে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। এতে রয়েছে ব্রেক সিস্টেম প্লজিবিলিটি ডিভাইস (বিএসপিডি)। যদি চলন্ত গাড়িতে ভুল করে একসাথে ব্রেক এবং অ্যাকসেলারেটর চাপ দিয়ে দেওয়া হয়, তখন গাড়ির যেন ক্ষতি না হয়, তাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির মোটর বন্ধ করে ফেলে বিএসপিডি। এছাড়াও এতে ব্যবহার করা হয়েছে ইনসুলেশন মনিটরিং ডিভাইস, যার মাধ্যমে গাড়িতে কোনো ইলেকট্রিক গোলযোগ হয়েছে কিনা তা দেখা যাবে। গাড়িটিতে নিজেদের তৈরি করা RTDS (Ready to Drive Sound), TSAL (Tractive System Active Light), BOTS (Brake over Travel Switch),  AMS (Accumulator Management System)-এর মতো ডিভাইসও যুক্ত করেছে ক্র্যাক প্লাটুন। সিপি-ই২৩ ইলেকট্রিক গাড়ি হওয়ায় এর পাওয়ারট্রেইন (ক্ষমতা উৎপাদনকারী যন্ত্র) কমবাসশন ইঞ্জিনের চেয়ে আলাদা। গাড়িটি চলার মূলশক্তি আসে এর মোটর এবং ব্যাটারি থেকে। মোটর থেকে আসা শক্তি ডিফারেনশিয়াল গিয়ারবক্সে পৌঁছে যায় এবং সেখান থেকে গাড়ির হুইলগুলোর মধ্যে সমানভাবে ছড়িয়ে যায়। এভাবেই গাড়িটি চলার শক্তি পায়। ফর্মুলা স্টুডেন্ট পোল্যান্ডে ক্র্যাক প্লাটুনের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো স্ট্যাটিক ইভেন্টে সফলভাবে উৎরে যাওয়া। এই ইভেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে বিজনেস প্ল্যান প্রেজেন্টেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন প্রেজেন্টেশন এবং কস্ট রিপোর্ট [সম্পূর্ণ প্রজেক্টের খরচের হিসাব]। মূলত পুরো গাড়িটি কতটা কস্ট ইফেক্টিভ উপায়ে তৈরি করা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই স্ট্যাটিক ইভেন্টে মূল্যায়ন করা হয়। মোট ১০০০ পয়েন্টের ৩২৫ পয়েন্টটই রয়েছে স্ট্যাটিক ইভেন্টে। একজন বিনিয়োগকারীর সামনে ঠিক যেভাবে কোনো বিজনেস আইডিয়া পিচ করা হয়, ঠিক একইভাবে স্ট্যাটিক ইভেন্টেও পুরো গাড়িটির নির্মাণ প্রকল্প এর খরচ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপস্থাপন করা হয়। কোনো পার্টস কেনা হয়েছে নাকি নিজেরাই উৎপাদন করা হয়েছে তার হিসাব থেকে শুরু করে টুলিং কস্ট বা লেবার কস্ট পর্যন্ত সবকিছুই এখানে উল্লেখ থাকে। একই সাথে গাড়ির ডিজাইন দেখিয়ে কোন পার্টস তৈরিতে কত খরচ করা হয়েছে, তাও উপস্থাপন করতে হয়। এছাড়াও কোথা থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে তাও জানাতে হয় এখানে। ক্র্যাক প্লাটুনের অর্থ যোগানের পেছনে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পার্টস ডিজাইন থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ গাড়িটি নির্মাণ করতে যে খরচ হয়, তার বেশিরভাগটাই উঠে আসে এখান থেকে। আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান ক্র্যাক প্লাটুনকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকে। যেমন: ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা ক্র্যাক প্লাটুনকে সিপি-ই২৩-এর ব্যাটারিসহ আরও বেশ কিছু পার্টস সরবরাহ করে সহযোগিতা করেছে; টিই কানেক্টিভিটির কাছ থেকে এসেছে বেশ কিছু ইলেকট্রনিক পার্টস। এছাড়াও টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্টস, জিকেএন অটোমোটিভের মতো কোম্পানিও পার্টস পাঠিয়েছে। কেবল পার্টস সরবরাহই নয়, বিভিন্ন টেকনিকাল পরামর্শও দিয়ে থাকে এই বিদেশি সহযোগীরা। ডিজাইন আর ম্যানুফ্যাকচারিং ঠিকভাবে করা হচ্ছে কিনা, সেটি যাচাই করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে থাকে তারা। এছাড়াও কোনো সমস্যা দেখা দিলেও তাদের কাছে সমস্যা জানিয়ে পরামর্শ চাওয়া যায়। ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতার আরেকটি অন্যতম প্রধান খরচের খাত হলো লজিস্টিক ও পরিবহন খাত। বিদেশে যাওয়া-আসা এবং থাকার খরচের পাশাপাশি জাহাজে করে গাড়িটি পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া বেশ ব্যয়বহুল একটা ব্যাপার। অনেক সময় গাড়ি তৈরির চেয়ে এসকল আনুষঙ্গিক খরচই আরও বেশি হয়ে যায়, যেমনটি হয়েছে এবারের পোল্যান্ড যাত্রার ক্ষেত্রেও। ইতিমধ্যেই গাড়িটি নির্মাণ করতে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়েছে তাদেরকে। অন্যান্য বিষয়ের খরচ কীভাবে উঠে আসবে, তা নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দলটির প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। বাংলাদেশের একমাত্র দল হিসেবে প্রতিযোগিতাটির ডাইনামিক ইভেন্টে যেন ক্র্যাক প্লাটুন অংশগ্রহণ করতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন টিম ক্যাপ্টেন শেখ তকী তাহমিদ। *পরবর্তী লক্ষ্য* ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতা থেকে পুরস্কার নিয়ে আসা মুখের কথা নয়। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা, বিনিয়োগ আর অধ্যবসায়। তকী জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'তারা ১৩ বছর চেষ্টার পর অবশেষে পুরস্কার জিতেছিল। ক্র্যাক প্লাটুনও যে হঠাৎ করেই পুরস্কার জিতে আসবে এমন নয়, তবে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমাদের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার জন্য।' তকীর মতে, ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে বহুদিন সময় দিয়ে, বিনিয়োগ করে, পরিশ্রম করেই এদিকে সফলতা আসবে। তাই আগামী ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতাগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে অভিজ্ঞতা বাড়াতে চান তিনি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সামান্য রিসোর্স নিয়েই বাকি প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশ ভালো করায় অনেকেই প্রশংসার চোখে দেখে তাদেরকে। এছাড়া এ কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও টেকনিকাল সাপোর্ট দিতে উৎসাহিত হয় বলে জানান তকী। তার আশা, বাংলাদেশের সরকার, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও গাড়ি নিয়ে উৎসাহীরা একযোগে বাংলাদেশের অটোমোটিভ শিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ফর্মুলা স্টুডেন্ট ক্লাব শুরু করার আহ্বান জানান তিনি। 'আমরা সবাই একসাথে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বাংলাদেশের অটোমোটিভ শিল্প বাস্তব রূপ লাভ করুক। গাড়ির গায়ে লেগে থাকুক লাল-সবুজের পতাকা।'
Published on: 2023-07-24 07:11:28.14492 +0200 CEST

------------ Previous News ------------