The Business Standard বাংলা
দেশের আবাসন খাতে যেভাবে প্রবৃদ্ধি আনছেন বিদেশি ক্রেতারা

দেশের আবাসন খাতে যেভাবে প্রবৃদ্ধি আনছেন বিদেশি ক্রেতারা

বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো বিভিন্ন বিদেশি ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহ ২০২২ সালে ২১৬টি আবাসিক ফ্ল্যাট কিনতে প্রায় ৩২১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এতে চাপের মধ্যে থাকা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দুই হাজার ৫৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ধরনের দুই হাজার ৪৮৬টি ফ্ল্যাট কিনেছেন বিদেশিরা। দেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের এ ক্রয়প্রবণতাকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা এ খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদায়ক হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশে আবাসিক সম্পত্তি কিনতে ডলারে অর্থ পরিশোধ করতে হয় যা সরাসরি এ খাত এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। শান্ত হোল্ডিংস-এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার শিহাব আহমেদের মতে, যেসব বিদেশি নাগরিকদেরকে কাজ বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় থাকতে হয়, তারা সাধারণত ফ্ল্যাট কেনেন। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের প্রবাসী কর্মীদের আবাসনের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট কিনে থাকে। শিহাব জানান, বিদেশিরা বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন না সাধারণত। 'বরং তারা মাঝামাঝি দামের অ্যাপার্টমেন্ট পছন্দ করেন যাতে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় পুনরায় সহজে বিক্রি করতে পারেন।' তিনি আরও বলেন, 'কেবল অল্পকিছু বহুজাতিক কোম্পানি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে।' কারা কিনছেন ফ্ল্যাট? নিবন্ধন অধিদপ্তরের অনানুষ্ঠানিক তথ্য অনুসারে, ১০ বছরে (২০১৩–২০২২) বিক্রি হওয়া দুই হাজার ৪৮৬টি ফ্ল্যাটের মধ্যে বিদেশি নাগরিকেরা এক হাজার ৩০৪টি এবং বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি এক হাজার ১৮২টি ফ্ল্যাট কিনেছে। গত বছর বিদেশিদের কাছে বিক্রি হওয়া ২১৬টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১০৪টির অবস্থান রাজধানীর গুলশান, বনানী, বাড্ডা, উত্তরা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। বাকিগুলো বিক্রি হয়েছে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় এবং দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে। এর মধ্যে চীনা নাগরিক ও কোম্পানি ৫৪টি, ভারতীয়রা ৪৭টি, কোরিয়ানরা ১৭টি, রাশিয়ানরা ১১টি, জাপানিরা ৮টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিকেরা ১৩টি এবং সৌদিরা ৯টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। বাকি ফ্ল্যাটগুলো কিনেছেন ১২টি দেশের নাগরিক এবং কোম্পানিসমূহ। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ঝিলিক হাউজিংয়ের দুটি রেডি ফ্ল্যাট কেনেন দুই চীনা নাগরিক। ৯০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টগুলোর প্রতিটির দাম পড়ে ৮৫ লাখ টাকা। ঝিলিক হাউজিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, দুই চীনা নাগরিক বাংলাদেশে একটি চীনা কোম্পানিতে নিযুক্ত আছেন এবং কোম্পানিটিতে তাদের চাকরির চুক্তি রয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। 'ফ্ল্যাট কেনার আগে দুজনেই তাদের কোম্পানির সহায়তায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন। এরপর আইন অনুযায়ী ক্রয়চুক্তির নিবন্ধন করা হয়।' ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম নিবন্ধন অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএস কে বলেন, বিদেশি ব্যক্তিদের বাংলাদেশে জমি বা বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আগে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে সরকার ১৯৯৬ সালে বিদেশিদের কেবল ফ্ল্যাট কেনার অনুমতি দেয়, তিনি বলেন। ফ্ল্যাট কেনার জন্য এসব বিদেশিদেরকে বিডা, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরের অনুমতিও নিতে হয়। 'বহুজাতিক বা বিদেশি কোম্পানিগুলো যখন বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায়, তখন তারা কোম্পানির নামে জমি ও বাড়িসহ সম্পত্তি কেনার অধিকারী হয়,' ওই কর্মকর্তা বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, আইনি স্বীকৃতির কল্যাণে একবার কোনো কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া হলে, এটি বাংলাদেশের একজন নাগরিকের মতো সমান অধিকার ভোগ করার অধিকার পায়। তবে কোম্পানিগুলোকে বিডা থেকেও অনুমতি নিতে হয়। কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি টিবিএস কে বলেন, বিডা'র নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি নাগরিক বা কোম্পানির রাজউক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মতো কোনো সরকারি সংস্থার কোনো প্রকল্পে আবাসিক সম্পত্তি কেনার সুযোগ নেই। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বিডা থেকে অনুমোদন পাওয়া ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া জটিল — এর জন্য বিদেশি নাগরিকদের তাদের আয়ের উৎস, অর্থ সরবরাহের মাধ্যম ও নমিনিসহ বিভিন্ন নথির প্রয়োজন হয়। ফলে অনেক বিদেশি নাগরিকের অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগ্রহ থাকলেও তারা তা কিনছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, 'এ প্রকিয়াগুলোকে সহজ করলে বাংলাদেশে অনেক বিদেশি অ্যাপার্টমেন্ট কেনায় বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন।' তিনি উল্লেখ করেন, অনেক দেশেই বিদেশিদের জন্য বাড়ি কেনা সহজ করা হয়েছে। ফলে সেসব দেশের সরকার আবাসন খাত থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব পায় যা দেশগুলোর জিডিপিতেও অবদান রাখে।
Published on: 2023-08-12 19:16:59.531321 +0200 CEST

------------ Previous News ------------