The Business Standard বাংলা
লটারি না জিতেই কীভাবে ধনী হবেন!

লটারি না জিতেই কীভাবে ধনী হবেন!

একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে সম্পদ গড়ার চেষ্টা– একইসঙ্গে যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমন আনন্দদায়ক। অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে হলে সুস্পষ্ট কৌশল ও পরিকল্পনার পাশপাশি থাকতে হবে ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতাও। আমাদের সমাজে বিশেষ করে, নারীদের জন্য এই পথ অনেকটাই অমসৃণ। সম্পদ গড়ার যাত্রাপথে প্রতিনিয়তই নানান ধরনের সিস্টেমিক বাধা ও লিঙ্গগত পক্ষপাতের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এরপরেও লক্ষ্য স্থির করে নিজের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উপযুক্ত পরিকল্পনা ও কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন এই রাস্তায় হাঁটা সফল ব্যক্তিরা। চলুন, জেনে নেওয়া যাক অল্প বা শূন্য থেকে কীভাবে ধনী হওয়ার যাত্রা শুরু করবেন— *সম্পদ গড়ার জন্য মনস্থির* কোনো কাজ শুরুর আগে, সেটি করার জন্য সুস্পষ্টভাবে মনস্থির করাই হলো ওই কাজের সাফল্যের মূলভিত্তি। সম্পদের তৈরির মানসিকতা গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে হতে হবে আশাবাদী। যেকোনো কাজের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠে সম্ভাবনার দিকে তাকাতে হবে। যেখানে অন্যরা প্রতিবন্ধকতা দেখে, সেখানে আপনাকে সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে হবে; একইসঙ্গে শিক্ষাও নিতে হবে ব্যর্থতা থেকে। তবেই আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন লক্ষ্যের দিকে। *লক্ষ্য নির্ধারণ* আপনার কাছে সম্পদের মানে কী– তা নির্ধারণ করুন এবং সে অনুযায়ী তা অর্জনে সুস্পষ্ট, অর্জনযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক লক্ষ্য তৈরি করুন। স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে আপনি আপনার করণীয়গুলো সহজেই বুঝতে পারবেন, একইসঙ্গে লক্ষ্য অর্জনে নিজের অগ্রগতিও পরিমাপ করতে পারবেন। *নিজের অর্থনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি* সম্পদ গড়া ও স্বচ্ছলতার সঙ্গে জীবনযাপনের জন্য অর্থনীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। বাজেট, সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং ঋণ পরিশোধের মূল বিষয়গুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আর এই জ্ঞান অর্জনের জন্য খুব বেশি সময় বা শ্রমেরও প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই অনলাইনে সার্চ দিলে বিনামূল্যে এ সম্পর্কিত অসংখ্য আর্টিকেল আপনি পেয়ে যাবেন, যা আপনার আর্থিক জ্ঞানের শক্ত ভিত তৈরিতে সহায়তা করবে। আর এই জ্ঞান আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। *সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ইচ্ছা* সম্পদ গড়ার অন্যতম মাধ্যম হলো সঞ্চয় শুরু এবং যুতসই জায়গায় বুঝে সেখানে বিনিয়োগ করা। প্রথমেই আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করুন এবং ঝুঁকি চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করে নিজের জন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত বিকল্পগুলো নির্বাচন করুন। একইসঙ্গে, বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনা অর্থাৎ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের চেষ্টা করুন, যাতে এক জায়গায় লোকসান হলে ওপর জায়গা থেকে সেই লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। *বাড়তি আয়ের উৎস তৈরি* নিয়মিত আয়ের বাইরে অতিরিক্ত আয়ের উৎস খুঁজে বের করাও তুলনামূলক স্বল্প সময়ে সম্পদ গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম। কারণ একক উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাই বাড়তি আয়ের উৎস সন্ধান করুন। এটি হতে পারে, পুঁজি বিনিয়োগ করে নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করা বা চলমান কোনো ব্যবসায়ে  বিনিয়োগ করা। আপনার উদ্দেশ্য থাকবে কোনো একক আয়ের ওপর নির্ভর না করে একাধিক আয়ের উৎসে বিনিয়োগ বাড়ানো। *নেটওয়ার্কিং ও পরামর্শদাতা* সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। আপনি নিজেকে যেখানে দেখতে চান, সে সম্পর্কিত লোকজনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলুন। একইসঙ্গে একজনকে নিজের মেন্টর বা পরামর্শদাতা হিসেবে বেছে নিন, যিনি আপনাকে ঠিক পথে এগোনোর পরামর্শ দেবে; আপনাকে নতুন নতুন সুযোগ-সম্ভাবনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে এবং আপনাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে। *ঝুঁকি নেওয়া* সম্পদ গড়তে গেলে আপনাকে অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে। তবে সেই ঝুঁকি যেন আপনার জন্য বোঝা তৈরি না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। নিজের অবস্থান বুঝে পরিমিত পরিমাণে ও কৌশলগত উপায়ে ঝুঁকি গ্রহণ করুন। অপ্রয়োজনে ব্যয় করা এড়িয়ে চলুন; একইসঙ্গে যেকোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এর ফলাফল ও প্রভাব কেমন হতে পারে– সে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নিন। *ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিন* সম্পদ অর্জনের পথে নানান বাধা ও ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়। তবে এসব ব্যর্থতায় থেমে গেলে চলবে না। সফল ব্যক্তিরা কখনও থেমে যাননি। তাই নিজের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিন, ভুলগুলো বিশ্লেষণ করুন এবং নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা রাখুন। *নিজের যত্ন নিন* শুধু সম্পদ বা আর্থিক প্রাচুর্যকে নয় নিজেকেও সময় দিন, নিজের খেয়াল রাখুন। উদ্যমী হয়ে কাজ করার জন্য সুস্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ মনই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের ওপর জোর দিন; নিজের জন্য সব সময় পুষ্টিকর খাবারের যোগান নিশ্চিত করুন; একইসঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শরীন-মন ভালো থাকলেই আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হবে। *প্রতিদানের মানসিকতা* শুধু সম্পদ অর্জন করলেই চলবে না, প্রতিদানের মানসিকতাও থাকতে হবে। সম্পদ-স্বচ্ছলতা অর্জনের পর, আপনার কমিউনিটির জন্য আপনি কী করতে পারেন তা বিবেচনা করুন, কীভাবে আপনি এর প্রতিদান দিতে পারেন, সেটি ভাবুন। দানশীলতা আপনার জন্য মানসিক প্রশান্তির কাজ করতে পারে। তাই এ সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করুন। সুস্বাস্থ্য, সুস্থ মন ও মানসিক প্রশান্তির চেয়ে বড় আর কোনো সম্পদ পৃথিবীতে নেই বলেই অভিমত জ্ঞানী, মনীষীদের। অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরী তৃষা
Published on: 2024-04-16 13:48:08.720447 +0200 CEST