The Business Standard বাংলা
একমাসেই রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেড়েছে ৪ টাকা

একমাসেই রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেড়েছে ৪ টাকা

এলসি নিষ্পত্তিতে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা ব্যাংকগুলোকে বেশি দাম দিয়ে হলেও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়ার কারণে এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ৩ থেকে ৪টা বেড়েছে। বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পর থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোকে ১১৬-১১৭ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। অন্তত ১০-১২টি ব্যাংক এই রেটে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রেমিট্যান্সের এই ডলারের দাম ১১২.৫ থেকে ১১৩ টাকায় নেমে গিয়েছিল। অবশ্য ফেব্রুয়ারির শেষে রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য ১২০-১২২ টাকা পর্যন্ত অফার করেছিল ব্যাংকগুলো। ডলারের দাম কেন কমেছিল জানতে চাইলে একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, স্বাভাবিকভাবে ঈদের আগে নতুন আমদানি এলসি খোলার প্রবণতা কমে যাওয়ায় ডলারের চাহিদাও কমে যায়। "এছাড়া, আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট সারপ্লাস রয়েছে। এসব কারণে ঈদের আগে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম কমে গিয়েছিল," বলেন তিনি। সিনিয়র এই কর্মকর্তাক আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংকগুলোকে উচ্চ হারে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এটিও মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে অবদান রাখেছে। "তবে স্বস্তির বিষয় হলো, ঈদের পর সপ্তাহখানেক ধরে ডলারের রেট ১১৬-১১৭ টাকার বেশি বাড়েনি," যোগ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করতে বলার পেছনের কারণ উল্লেখ করে বেসরকারি শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, "আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্যাকেজের তৃতীয় ধাপের কিস্তি পেতে মার্চের জন্য নির্ধারিত ১৯.২৬ বিলিয়ন ডলার নেট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার কম ছিল।" এই ঘাটতি পূরণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার প্রয়োজন ছিল। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমে বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করতে বলে। দাম বেশি দেওয়ায় রেমিট্যান্স অল্প বেড়েছিল। পরে রিজার্ভ বাড়াতে কারেন্সি সোয়াপ অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় জমা থাকা কিছু ব্যাংকের ডলার 'ফোর্সফুলি' (জোরপূর্বক) কিনে নেয়। তিনি আরও বলেন, "নির্বাচন পরবর্তী দেশে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় থাকায় একটি গোষ্ঠী পাচার করা টাকা ফেরত আনতে চেয়েছিল। এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের মতো ট্রেড ফাইন্যান্সের মাধ্যমে পাচার করা টাকা ফেরানোর তুলনায় রেমিট্যান্সের মাধ্যমে পাচারের টাকা ফেরানো লাভজনক। কারণ, এতে সরকারি প্রণোদনা পাওয়া যায়। ডলারের রেট বেশি থাকলে এই গোষ্ঠীর সুবিধা হয়।" ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন বলেন, ব্যাংকগুলোতে এখন ডলারের চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এর অন্যতম কারণ হলো, গত কয়েকমাস ধরে প্রতিমাসে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো রপ্তানি আয় আছে। "এই অর্থবছরে রপ্তানিতে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া, আমদানি এলসি খোলাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। এসব কারণে আমদানি এলসি পেমেন্টের চাপ থাকলেও সেটি তীব্র নয়। চাহিদা কম থাকায় ডলারের দাম খুব বেশি বাড়েনি," বলেন তিনি। *ডলারের দাম কি আরো বাড়তে পারে?* ডলারের দাম বাড়বে কিনা, এটি অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। একটি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দাম বাড়বে কিনা সেটি এখনই বলা কঠিন। "ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্সের ডলারের রেট অনেক বেশি ছিল। ওই মাসে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পেয়েছিলাম, মার্চে রেট কমে যাওয়ার পরও আমাদের রেমিট্যান্স খুব বেশি কমেনি। রেমিট্যান্সের রেট যেহেতু ১২৩ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, ওখানে একটা স্ট্রং রেজিস্ট্র্যান্স রয়েছে।" "এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা তেমন না কমলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা আগের তুলনায় কমেছে। অর্থাৎ, সংকট তৈরি হওয়ার ক্ষেত্র কমেছে," বলেন তিনি। একইসঙ্গে কয়েকমাস ধরে রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকার পাশাপাশি আমদানিও কমছে। ফলে, খুব অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি না হলে ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
Published on: 2024-04-21 08:54:05.242685 +0200 CEST