The Business Standard বাংলা
তীব্র তাপদাহ: ঘাম, প্রখর রোদ উপেক্ষা করেও ফসলের মাঠে কৃষকরা

তীব্র তাপদাহ: ঘাম, প্রখর রোদ উপেক্ষা করেও ফসলের মাঠে কৃষকরা

কয়েক দিন ধরেই দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ চলছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তীব্র গরমে হাসফাঁস করছে মানুষ। রাতেও মিলছে না একটু স্বস্তি। এ অবস্থার মধ্যেও থেমে নেই কৃষকের কাজ। তাপ প্রবাহ উপেক্ষা করে তারা ফসল ফলানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে আজ রবিবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলার কয়েকটি ফসলি মাঠ ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। কৃষকরা জানান, তাপ হোক আর বৃষ্টি, সময় মতো প্রয়োজনীয় কাজ না করলে ঘরে ফসল উঠবে না। শনিবার (২০ এপ্রিল) জেলার রায়পুর উপজেলার চর বংশী ইউনিয়নের টুনুর চর এলাকায় দেখা যায়, কৃষকরা মাঠে সয়াবিন কাটছেন। ঘড়িতে তখন সময় দুপুর প্রায় ১২টা। এ সময়ে ফসলি মাঠে খালি মাথায় দাঁড়ানো ছিল প্রায় অসম্ভব। অথচ সেই প্রখর রোদে মাঠে সয়াবিন কাটছিলেন ১৫ জন কৃষক। তাদের সবার শরীর থেকে তখন ঘাম ঝরছিল। প্রচণ্ড গরমে শরীরে ক্লান্তি থাকলেও তাদের মুখে ছিল হাসি। তারা গান গেয়ে গেয়ে সুরের তালে ফসল কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নুরুল হক (৬০) নামের এক কৃষক বলেন, 'মাঠে সয়াবিন পেকে গেছে। এখন দ্রুত ফসল তোলা জরুরি। ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলেও সয়াবিন তুলতে হবে। কারণ দেরি হলে কালবৈশাখী ঝড় ও পরে বৃষ্টি। তাতে আমরা শেষ হয়ে যাব। তাই গরম আমাদের কাছে কোন বিষয় না। বিষয় হচ্ছে ফসল ঘরে নিতে হবে।' তবে গরমের কারণে অনেকেই তাদের কাজের সূচিতে পরিবর্তন এনেছেন। আবুল কাশেম (৫৫) নামের এক কৃষক জানান,  এক সপ্তাহ আগে তারা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করতেন দৈনিক ৪০০ টাকায় মুজুরিতে। প্রতি দেড় ঘণ্টা পর পর ১০ মিনিট হালকা বিশ্রাম নিতেন। এখন একই পারিশ্রমিকে ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ সারাদিন কাজ করতেন ৬০০ টাকা মুজুরিতে। এখন সময় পরিবর্তন করে ১১টা পর্যন্ত কাজ করছেন। কেউ আবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর মনসা গ্রামে টমেটো ক্ষেত পরিষ্কার করছিলেন ইসমাইল (৪৫)। তিনি জানান, এখন ক্ষেতে আসার সময় প্রচুর পানি সঙ্গে আনেন। গরমে হলেও এখন পর্যন্ত কোনোদিন কাজ বন্ধ করেননি। আলেয়া বেগম (৪৩) নামে কৃষাণী বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই আমরা মাঠে-ঘাঁটে কাজ করে রোদ, বৃষ্টির সাথে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি। আমাদের গরম লাগে না।' কৃষকরা জানান, এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝিতে লক্ষ্মীপুর জেলাজুড়ে বিভিন্ন ফসলি মাঠে সয়াবিন, বাদাম, সূর্যমুখী, বিভিন্ন সবজি ও বোরো ধান আসে। এ সময় কৃষকরা খুবই ব্যস্ত সময় পার করেন। তাপ, বৃষ্টি, ঝড় কিছুই কৃষকদের আটকাতে পারে না। কিন্তু এই গরমের মধ্যে কাজ করতে তাদের খুবই কষ্ট হয়। লক্ষ্মীপুরের রামগতি আবহাওয়া সেন্টারের পর্যবেক্ষক মো. সোহরাব হোসেন জানান, দুই-তিন দিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা গড়ে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
Published on: 2024-04-21 17:45:02.497206 +0200 CEST