The Business Standard বাংলা
তীব্র গরমে ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিমের ব্যবসা জমজমাট

তীব্র গরমে ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিমের ব্যবসা জমজমাট

সারা দেশে তীব্র গরমের মধ্যে একদিকে যেমন মানুষ প্রচণ্ড গরমের সাথে লড়াই করতে হিমশিম খাচ্ছে তেমনি এ কারণে বোতলজাত পানি, ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্পের "ভাতের হোটেল" এর মতো খাবারের দোকানগুলোতে এর প্রভাব স্পষ্ট। খাবার পরিবেশনের সাথে সেখানে স্টিলের গ্লাসে স্বাভাবিকভাবেই এক গ্লাস ফিলটার পানি ক্রেতাকে পরিবেশন করা হয়। কিন্তু তীব্র গরমের জন্য অধিকাংশ ক্রেতা এখন খেতে বসলেই আধা লিটারের 'ঠান্ডা' পানির বোতল চাইছেন। "ভাতের হোটেল" এর ম্যানেজার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, "গরমের কারণে ঠান্ডা পানির চাহিদা এত বেড়েছে যে দুটো ফ্রিজে পানি রাখলেও অনেক সময় তা চাহিদার তুলনায় কম হয়ে যাচ্ছে।" দেশব্যাপী হিটওয়েভের কারণে পানির পাশাপাশি কোমল পানীয়, আইসক্রিমের মত পণ্যগুলোর ব্যবসা এখন জমজমাট। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তীব্র গরমের কারণে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বেসরকারি কর্মচারী হাবিবুর রহমানের মতো অনেক ক্রেতাই গরমের সাথে লড়াই করার জন্য দুপুরের ঠান্ডা পানীয়কে একটি রুটিন বানিয়ে ফেলেছেন। কেউ কেউ অতিরিক্ত হাইড্রেশনের জন্য তাদের পানিতে স্যালাইন যোগ করছেন। অন্যরা তাদের পরিবারের জন্য আইসক্রিম নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। বোতলজাত পানি প্রস্তুতকারকদের জন্য এ আবহাওয়া আশীর্বাদ প্রমাণিত হয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এবং পারটেক্স গ্রুপের মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর বিক্রি বেড়েছে। প্রান-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল জানিয়েছেন, রোজার মাস থেকে শুরু করে বর্তমানে বোতলজাত পানির বিক্রি ১৫ শতাংশ বেড়েছে। পারটেক্স গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক নাহিদ ইউসুফ চলমান তাপপ্রবাহের কারণে বোতলজাত পানির বিক্রি বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন। এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতে, বোতলজাত পানির বাজারের মূল্য ১২০০ কোটি টাকার বেশি এবং বার্ষিক বিক্রয় ৪০ কোটি লিটারের বেশি। ঠান্ডা পানীয়ের চাহিদা এত বেশি যে তেজগাঁওয়ের শরিফুলের মতো দোকানদাররা তাদের ফ্রিজগুলো রাতে পানি ও ঠান্ডা পানীয় দিয়ে পুনঃস্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, গ্রাহকরা সক্রিয়ভাবে ঠান্ডা পণ্যের দোকান খুঁজে বের করেন। এমনকি যেসব চায়ের দোকানে রেফ্রিজারেটরের অভাব রয়েছে সেগুলোতে বোতলজাত পানি এবং ঠান্ডা পানীয় মজুত করে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার মো. মাইদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "এই গরমে মানুষ ঠান্ডা পানীয় সবচেয়ে বেশি পছন্দ করছে। এ সময় পানি, কোল ড্রিংকস সহ সব ঠান্ডা পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে আমরা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দিতে হিমশিম খাচ্ছি।" তিনি বলেন, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বোতলজাত পানিতে ২৫ শতাংশ এবং ঠান্ডা পানীয়তে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। আইসক্রিম কোম্পানিগুলোও ইতিবাচক প্রভাব দেখছে। প্রথম ত্রৈমাসিক প্রত্যাশার তুলনায় কম থাকলেও আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ইগলু আইসক্রিমের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সুমিত চক্রবর্তী ঈদের আগে উল্লেখযোগ্যভাবে বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলেছেন এবং বর্তমান তাপপ্রবাহের কারণে বিক্রি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তীব্র গরমের কারণে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ শিল্পের লক্ষ্যমাত্রা ২৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে দেশ যেখানে কিছু অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। বেশিরভাগ জেলা জুড়ে গড় তাপমাত্রা ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে যা দৈনন্দিন কাজকে ব্যাহত করছে এবং মানুষকে ঠান্ডা খাবার ও পানীয় দিয়ে পরিত্রাণ পেতে বাধ্য করছে।
Published on: 2024-04-25 07:51:42.328445 +0200 CEST