The Business Standard বাংলা
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে 'স্মার্ট রেট' এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে 'স্মার্ট রেট' এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অফ ট্রেজারি বিল (এসএমএআরটি— স্মার্ট) রেট ফর্মুলা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে, তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেইসঙ্গে, স্মার্ট রেট থেকে বের হয়ে বাজারভিত্তিক সুদের হার নির্ণয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী পদক্ষেপ নেবে সেটিও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফের সঙ্গে সভায় অংশ নেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, স্মার্ট রেট চালুর পর মূল্যস্ফীতি সেভাবে কমেনি। এছাড়া, এই রেটটি ক্যালকুলেট করতে ছয় মাসের (১৮২ দিনের) ট্রেজারি বিলের সুদহারকে ওয়েইটেড এভারেজ করা হয়। সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। তারা জানতে চেয়েছে, ট্রেজারি বিলের রেট কীভাবে লেন্ডিং রেট বা ঋণের সুদহারের রেফারেন্স হতে পারে। কর্মকর্তারা আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি প্রতি মাসেই পরিবর্তন হচ্ছে। অথচ লেন্ডিং রেট নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ৬ মাসের ট্রেজারি বিলের সুদেরহারকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এটির সময়সীমা কমানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত কয়েকমাস ধরে ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ১১.২০ থেকে ১১.৪০ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে। ছয় মাসের গড় করার কারণে স্মার্ট রেট দাঁড়িয়েছে ১০.৫৫ শতাংশে। এরসঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করে লেন্ডিং রেট নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে লেন্ডিং রেট দাঁড়ায় ১৩.৫৫ শতাংশে। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী, রেট নির্ধারণে ছয় মাসের কম সময়ের গড় করা হলে লেন্ডিং রেট আরও বাড়বে। বাংলাদেশকে দেওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পূরণের কাজ পর্যালোচনা করতে গত মঙ্গলবার আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর এসেছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন আাইএমএফের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। *২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে আর্থিক হিসাবে আর কোনো ঘাটতি থাকবে না* ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট (বিওপি) বা লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফকে জানিয়েছে ২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক হিসাবে আর কোনো ঘাটতি থাকবে না। ২০২৪ অর্থবছরের মধ্যে এই ঘাটতি কমিয়ে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনার কথা আইএমএফকে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তারা বলেছেন, আগামী কয়েকমাসের মধ্যে বেশকিছু বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, বড় কোনো পেমেন্টের চাপ আগামী কয়েকমাসে নেই। এসব কারণে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ঘাটতি কমে আসবে। কর্মকর্তারা আইএমএফকে বলেন, "আমাদের ট্রেড ডেফিসিট গত অর্থবছরের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। কারণ, আমদানি কমে এসেছে এবং একই সঙ্গে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।" "এছাড়া কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সেও (চলতি হিসাবের ভারসাম্য) আমরা অনেক ভালো করছি। এর অন্যতম কারণ, রেমিট্যান্সে ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি। প্রতি মাসেই গড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাওয়া যাচ্ছে," যোগ করেন তারা। *'ক্রলিং পেগ' কোনো দেশেই সফলতা আনেনি: বাংলাদেশ ব্যাংক* ক্রলিং পেগ নিয়েও আইএমএফের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সভায় উপস্থিত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "আমাদের সার্বিক রিসার্চ অনুযায়ী বিশ্বের যে কয়টি দেশে 'ক্রলিং পেগ' চালু হয়েছিল, তাদের কেউই তেমন সফল হয়নি। ফলে আমরা এই পদ্ধতি চালু করে সফল হবো, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই আমরা আইএমএফ টিমকে জানিয়েছি, এখনও বিষয়টি নিয়ে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে আছি।" "এছাড়া এখনই বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ রেট করা হলে ডলারের দাম অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। তারা আমাদের ফাইন্ডিং নিয়ে সহমত জানিয়ে বলেছে, যেহেতু আমরা এক্সচেঞ্জ রেট বাজারভিত্তিক করছি না। তাই আমাদের ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেট থেকে বের হওয়ার জন্য 'ক্রলিং পেগ'- এ যাওয়া ছাড়া বিকল্প উপায় নেই," বলেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "ক্রলিং পেগ নিয়ে আমরা এখনো রিসার্চে রয়েছি। আমাদের টিম এটা নিয়ে কাজ করছে, তবে সুবিধা অনুযায়ী সময়ে আমরা এ পদ্ধতিতে যাব।" আইএমএফ টিম কি পরামর্শ দিয়েছেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, "আইএমএফ টিম এর সঙ্গে আমাদের আগামীকালসহ আরও কয়েকদফা মিটিং রয়েছে। এখন তারা আমাদের ম্যাক্রো ইকোনোমি (সামষ্টিক অর্থনীতি) সম্পর্কে জানছেন। আমরা সেগুলো তাদের কাছে তুলে ধরেছি।" *খেলাপিঋণ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপে সন্তোষ আইএমএফ* খেলাপিঋণ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর আওতায় ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন ধার দেওয়ার পদ্ধতি এখনও বন্ধ না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দাতা সংস্থাটি। বৈঠকে থাকা একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "আমরা মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। সে উপলক্ষে সরকার ও ব্যাংকগুলোকে ডেভেলপমেন্ট করে টাকা ধার বন্ধ রেখেছি– সেটিও আইএমএফকে জানিয়েছি।" কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আইএমএফকে জানায়, ব্যাংকখাতের খেলাপি ঋণ কমাতে ও সুশাসন বাড়াতে মোট ১৭টি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। খেলাপিঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে আইএমএফ সন্তুষ্ট হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এছাড়া আইএমএফ টার্ম লোনের ওভারডিউ পিরিয়ড ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাক্টিস অনুযায়ী করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার নিয়েও সাধুবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, গত ২৩ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাব করে তা ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
Published on: 2024-04-25 06:10:23.897798 +0200 CEST