বাংলা ট্রিবিউন
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়

লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়

গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে বিষিয়ে আছে মানুষের মন। কোনও কিছুতেই যেন মিলছে না শান্তি। এমন বিষিয়ে ওঠা মনে প্রকৃতি তার সুশীতল ছায়া ও ফুলের সৌন্দর্য দিয়ে কিছুটা শান্তি দেয়। তীব্র গরমে মাথা উঁচু করে গাছের দিকে তাকাতেই তপ্ত হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় কৃষ্ণচূড়ার লাল আর জারুলের বেগুনি রং। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে কলা ভবন বা টিএসসির দিকে যেতে চোখে পড়ে, গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে জারুল ফুল। তখন হয়তো যে কেউ সেই ছোট বেলার পরিচিত ছড়া নিজের অজান্তে গুনগুনিয়ে উঠতে পারেন—‘এই ছবিটি চেনা/মনের মধ্যে যখন খুশি/এই ছবিটি আঁকি/এক পাশে তার জারুল গাছে/দুটি হলুদ পাখি।’ জারুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আপনি যখন পৌঁছে যাবেন মল চত্বরে, সেখানেই চোখে পড়বে কৃষ্ণচূড়ার লাল। এবারও শামসুর রাহমানের মতো বলে উঠতে পারেন, ‘আবার ফুটেছে দেখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে কেমন নিবিড় হয়ে। কখনও মিছিলে কখনও-বা একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয় ফুল নয়, ওরা শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতি গন্ধে ভরপুর। একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল, মল চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোভা পাচ্ছে জারুল ও কৃষ্ণচূড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে আশেপাশে কৃষ্ণচূড়া সঙ্গে রয়েছে আরও নানা রঙের ফুল। তীব্র তাপপ্রবাহে প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য শিক্ষার্থী ও পথচারীদের মনে শীতল স্পর্শ দিয়ে যায়, শান্তি খুঁজে পান তারা। সকালে রোদ ওঠার আগে ও বিকালে রোদের আঁচ কমলে অনেকেই এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে বের হন ক্যাম্পাসে। শুধু জারুল আর কৃষ্ণচূড়া নয়, ক্যাম্পাসে এই গরমে শোভা পাচ্ছে আরও অনেক ফুল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাগানবিলাস, কনকচূড়া, কাঠগোলাপ, রঙ্গনসহ নানান প্রজাতির ফুল। ‘ঢাকা শহরে সবুজে কমতি থাকলেও আমাদের ক্যাম্পাসে গাছপালার কিছু ছিটেফোঁটা দেখা যায়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে অতিষ্ঠ জনজীবনের রুক্ষতাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে ক্যাম্পাসের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য’—বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নুপুর আক্তার। এই প্রকৃতিপ্রেমী আরও বলেন, এই ঋতুতে গাছে গাছে দুলছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, কনকচূড়াসহ নানান প্রজাতির ফুল। এসব ফুলের বাহারি সৌন্দর্য শোভা বাড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসে। মল চত্বরের জারুল ফুলের বেগুনি আভা, কৃষ্ণচুড়ার লাল উত্তাপের সৌন্দর্য দেখে যে কেউ পুলকিত হতে বাধ্য। প্রথম বর্ষের স্মৃতির বর্ণনা দিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার প্রাপ্তি বলেন, ‘ফার্স্ট ইয়ারে যখন এসেছিলাম বন্ধুরা সবাই মিলে ফুলের মাঝে ছবি তুলে বেড়িয়েছি। সব ফুল চেনার চেষ্টা করতাম সবাই মিলে। কিছু ফুলের নাম জানতাম, কিন্তু দেখিনি আগে সেভাবে। যেমন জারুল। এই ফুলগুলো সেই ফার্স্ট ইয়ারের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল এমনিতেই আমার ভীষণ পছন্দের। ক্যাম্পাসের যে দিকেই তাকাই সেখানেই এই কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া চোখে পড়ে। আগে অনেক বেশি চোখে পড়তো মল চত্বরের দিকটায়। এখন গাছ কেটে ফেলায় সেসব ফুল নেই বললেই চলে। এটা অনেক কষ্টদায়ক। এখন গণতন্ত্র তোরণ থেকে সোজা টিএসসি পর্যন্ত যেতে পথে অসংখ্য বেগুনি রঙের জারুল অনেক বেশি মন কাড়ছে। কিছুদিন পর গোলাপি সাদা রঙের জারুলও দেখা যাবে। এগুলো যেমন মনের শান্তি, চোখের শান্তি, তেমনি পরিবেশের জন্যও ভালো। আরও বেশি গাছ লাগাতে বলা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব ফুলগাছের পাশাপাশি ফলের গাছ লাগাতে পারলেও অনেক ভালো হয়। ক্যাম্পাসে ফলের গাছ আছে, কিন্তু সেটা কমই মনে হয়।’ প্রতিদিন সকালে ফজর নামাজের পর ঠান্ডা আবহাওয়ায় হাঁটতে বের হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাহেদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘সকালের ঠান্ডা আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন দুনিয়াতেই জান্নাতের অনুভূতি দেয়। স্বচ্ছ বাতাস আর লাল-বেগুনি ফুলের সৌন্দর্য মনে দোলা দিয়ে যায়। আমাদের উচিত এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হলেও বেশি করে ফুল, ফল ও উপকারী গাছ লাগানো। তাতে করে সুন্দর প্রকৃতি গড়ে উঠবে, সবাই সুস্থ থাকবে, আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও হবে না।’
Published on: 2024-04-27 04:03:48.69404 +0200 CEST