বাংলাদেশ প্রতিদিন
ঈদের খরচ পৌনে ২ লাখ কোটি

ঈদের খরচ পৌনে ২ লাখ কোটি

ঈদ কেন্দ্র করে এবার রমজান মাসে প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে ইফতার, সাহরি, অতিথি আপ্যায়ন, বেতন-বোনাস, ফিতরা এবং পরিবহনের খরচ যোগ করে এই হিসাব দিয়েছে দোকান মালিক সমিতি। এক সমীক্ষার তথ্য দিয়ে সমিতি জানিয়েছে, এবার ঈদে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম। ২০২৩ সালে ঈদের অর্থনীতির আকার ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। দোকান মালিক সমিতি যে হিসাব দিয়েছে, তার মধ্যে জাকাতের অর্থ ৭০ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, পোশাকের কেনাকাটা ৩৪ হাজার কোটি টাকা, অতিথি আপ্যায়ন, ইফতার ও সাহরি থেকে ৩৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা, পরিবহন খরচ থেকে ব্যয় হয় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ফিতরা থেকে ৪৬৭ কোটি টাকা এবং চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস থেকে আরও ১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা যুক্ত হয়েছে অর্থনীতিতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকটি খাত থেকে অর্থনীতিতে অতিরিক্ত অর্থ যুক্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৭৫ লাখ দোকান কর্মচারী এবং আরও প্রায় ৫৫ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন ও বোনাস, যা ঈদ অর্থনীতিতে আসছে। এ ছাড়া রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা। ঈদের সময়ে প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে বাড়তি ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে থাকেন। এবার ঈদের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ যোগ হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নববর্ষ বোনাসও যোগ হয়েছে। নগদ অর্থ হাতে পাওয়ায় দোকানগুলোতেও ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ক্রেতাদের। তারপরও প্রত্যাশা অনুযায়ী কেনাকাটা হচ্ছে না বলেই মনে করছেন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এবার ঈদে টাকার অঙ্কে প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে। এটি গত ঈদ ব্যয়ের কাছাকাছি হলেও কেনাকাটার পরিমাণ ছিল কম। উদাহারণ দিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, গতবার রমজানের ঈদে কেনাকাটা করতে যে পরিমাণ অর্থ বাজেট ছিল ক্রেতাদের। এবার সেই পরিমাণ বাজেটে কম জিনিস কিনতে পেরেছেন তারা। কারণ পণ্যের দাম ছিল বেশি। রাজধানীর কয়েকটি দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের তুলনায় তাদের পণ্য বিক্রি কম হয়েছে। মিরপুর-২ নম্বরের একটি দেশি ব্র্যান্ডের সেলসম্যান আরিফ জানান, গতবার তারা যে পরিমাণ পাঞ্জাবি বিক্রি করেছিলেন, এবার তার অর্ধেক বিক্রি হয়েছে। দাম বেশি কিন্তু বাজেট সীমিত, এ কারণে অনেকে কেনাকাটা কম করেছেন। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, এবার ঈদ ও নববর্ষ মিলেমিশে একাকার হওয়ার ফলে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে যে কেনাকাটা সেটিও এবার হচ্ছে না। এটিও ব্যবসায়ী দোকানদারদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিন্ন সময়ে শুধু নববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেনাকাটার জন্য সাধারণ মানুষ ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে বেশি ভিড় করছেন। পাজামা, পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ থেকে শুরু করে জামা, জুতা, কসমেটিকস ও গয়না কিনতেও এখন ব্র্যান্ডের পণ্যেই মনোযোগ বেশি ক্রেতাদের। রাজধানীতে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের একটা অংশ কেনাকাটার জন্য ভিড় করেছেন বসুন্ধরা শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্কে। এর বাইরে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন শপিংমল, মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মগবাজার, মৌচাক, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, টিকাটুলি রাজধানী সুপার মার্কেট ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান আড়ং, কিউরিয়াস, ইয়োলো, লা রিভ, ফ্রিল্যান্ড, অঞ্জনস, আর্টিসান, সেইলর, টুয়েলভ, জেন্টেল পার্ক, ইনফিনিটির দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। ঈদের আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, গাউছিয়া মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, বেইলি রোড, মৌচাক মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ও ফ্যাশন হাউস ঘুরেও দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। তবে এতেও ব্যবসায়ীরা সন্তোষ প্রকাশ করেননি। এলিফ্যান্ট রোডের এক জুতার দোকানি বলেন, রমজানের মাঝামাঝি ভিড় থাকলেও শুরু ও শেষের দিকে তেমন বিক্রি হয়নি। ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, জেনেটিক প্লাজা, মেট্রো শপিংমল, অর্চার্ড পয়েন্ট, হ্যাপি অর্কেডসহ একাধিক শপিংমলের বিক্রেতারা জানিয়েছেন বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। রাজধানী ঢাকার ফুটপাতের দোকানগুলো গড়ে উঠেছে মূলত মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, বঙ্গবন্ধু ও মাওলানা ভাসানি স্টেডিয়াম, গুলিস্তান, পল্টন, ফার্মগেট, ঢাকা কলেজ, মিরপুর-১০ নম্বর ও নিউমার্কেট-এলিফ্যান্ট রোড ধরে। অসংখ্য দোকানি এসব ফুটপাতে বসে সারা বছর ধরেই পণ্য বিক্রি করে। তবে ঈদের আগে এবার তাদের ভিড়ে নতুন দোকানিও দেখা গেছে যারা শুধু ঈদভিত্তিক পণ্য নিয়ে বসেছেন। এসবের মধ্যে পাঞ্জাবি, পাজামা, জুতা, শাড়ি, লুঙ্গি, শিশুদের পোশাক ছাড়াও আতর, সুগন্ধি, সাবান, টুপিসহ ঈদভিত্তিক পণ্য বেশি ছিল। দোকানপাট ছাড়াও ঈদকে কেন্দ্র করে অনলাইনে ব্যবসাও (ই-বিজনেস) বেড়েছে। সামাজিক মাধ্যমের সাইটগুলোতে ঢুকলেও দেখা গেছে নানারকম পণ্যের ছবিসহ বিজ্ঞাপন। এর মধ্যে শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, জুতা, ঘড়ি, সানগ্লাস, বেল্ট, মোবাইল ফোনসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হয়েছে। এর বাইরে ঈদের অতিথি আপ্যায়নের জন্য মাংস, সেমাই, চিনি, পোলাওয়ের চাল, গরমমসলার দোকানেও ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
Published on: 2024-04-08 21:06:21.091419 +0200 CEST