Bdnews24 Bangla
চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট, গরমে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট, গরমে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ঢাকা থেকে ট্রেনে চেপে রোববার সকালে চট্টগ্রামে নেমে বিপাকে পড়েন চার তরুণ, কক্সবাজার যেতে তারা একবার নগরীর রেল স্টেশন এলাকা ঘুরে বাস না পেয়ে শেষমেশ এসে দাঁড়ান শাহ আমানত সেতুর কাছে। কিন্তু সেখানেও বাসের দেখা নেই। কারণ সকাল থেকে চট্টগ্রামে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এই চারজনের মত আরো অনেককেই গরমের মধ্যে সেতু এলাকায় কাউন্টারের সমানে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা থেকে আসা কক্সবাজার ও বান্দরবানগামী মানুষ। রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগর থেকে, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। ওই সব এলাকা থেকেও কোনো বাস আসছে না। এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শনিবার পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’। পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার দফা দাবিতে আমাদের সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। কোনো রুটে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। “তিনি বলেন, “বিকালে আমাদেরকে জেলা প্রশাসক ডেকেছেন। তার সাথে ৩টায় বৈঠক হবে। সেখানে দেখা যাক তিনি আমাদের দাবিগুলো কতটুকু মেনে নেন।” বিভিন্ন স্থান থেকে লাইনম্যানসহ পরিবহন শ্রমিকদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং অনুমোদনহীন যান বাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে এ ধর্মঘটের আহ্বান করে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। শাহ আমানত সেতু এলাকায় ঢাকা থেকে আসা রায়হান উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কক্সবাজার যেতে আমার চারজন ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রামে এসেছি। রেল স্টেশন এলাকা থেকে কক্সবাজারের বাস পাওয়া গেলেও আজকে পাওয়া যায়নি। “সেখান থেকে অনেকে বলেন শাহ আমানত ব্রিজ থেকে বাস পাওয়া যেতে পারে। এখন এখানে এসেও অপেক্ষা করেও কোন বাস পাচ্ছি না।” নগরীতে সড়কে কিছু গণপরিবহন দেখা গেলেও সেগুলো চলাচলে শ্রমিকরা বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শাহ আমানত সেতু এলাকায় এক বাস চালক জানান, সকালে বাঁশখালী থেকে যাত্রী নিয়ে আসার পর শাহ আমানত সেতু এলাকায় তাদের বাসটি আটকে দিয়েছে অবরোধকারীরা। ঢাকাগামী যাত্রীরাও এ ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন। নগরীর এ কে খান এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ইউনিক পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক রবি হোসেন বলেন, “অনেক যাত্রী আছে। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে আমাদের কোনো বাস চলাচল করছে না। “*কেন এই ধর্মঘট* গত ২২ এপ্রিল বিকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় 'শাহ আমানত' পরিবহনের একটি বাসের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শান্ত সাহা ও ২১তম ব্যাচের তৌফিক হোসেন। গুরুতর আহত একজন। রাতে ওই ঘটনার খবরে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের চুয়েট সংলগ্ন অংশে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ভাঙচুর করেন শাহ আমানত পরিবহনের কয়েকটি বাস। পরদিন মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওই ঘটনায় বৈঠক হয়। সেখানে নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সড়ক সম্প্রসারণসহ বেশকিছু দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার শাহ আমানত পরিবহনের সেই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিনও সড়ক অবরোধ করে নিহতদের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে অনড় থাকেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবারো গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে সেদিনই উপাচার্যসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। তারা চুয়েটের সবগুলো বিভাগে তালা মেরে দেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে চুয়েট কর্তৃপক্ষ শুক্রবার সিদ্ধান্ত বদলে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে থাকার অনুমতি দেয়। শনিবার সকালে আবারো সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে দুপুরেই জরুরি সভায় ধর্মঘটের ডাক দেয় চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
Published on: 2024-04-28 09:21:50.130146 +0200 CEST