কালবেলা
৯ মাসেই রির্জাভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

৯ মাসেই রির্জাভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রিজার্ভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর কাছে এই ডলার বিক্রি করা হয়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার কিনেছে। এতে বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের গ্রস রিজার্ভ এখন ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সূত্র বলছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার-সংকট থাকায় জ্বালানি ও নিত্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত (১০ দশমিক ০৪ বিলিয়ন) ১ হাজার ৪ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখায় রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৮১ বিলিয়ন, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে ব্যবহারযোগ্য বা নিট রির্জাভ বর্তমানে ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও কম। গত অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিলে আমদানিতে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় নিত্যপণ্য বাদে বিলাসী পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন দেওয়া হয়। এতে এলসি নিষ্পত্তি ও পরিশোধ কমে যায়। গত জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গণমাধ্যমকে জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে কোনো ব্যাংকের কাছে সস্তায় কিংবা স্বাভাবিক দামেও ডলার বিক্রি করা হবে না। কিন্তু ইতোমধ্যেই ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আশার দিক হচ্ছে, রেমিট্যান্সে বড় বিপর্যয়ের পর আবারও এই সূচকের প্রবাহ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ২১৬ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ আয় দেশে পাঠিয়েছেন। আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১০ কোটি ডলার। ফলে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাস ২ দিন কম হলেও প্রবাসী আয় বেশি এসেছে। অন্যদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ‘ক্রলিং পেগ’ চালু ডলার সংকট কাটাতে ঈদের পরই ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার দর নিয়ন্ত্রিত ও বাজারভিত্তিক করতে দ্রুত ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মার্চের প্রথম দিক থেকে এই পদ্ধতিতে ডলার ক্রয় বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ঈদের মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়তে পারে এই বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার উরুগুয়েতে প্রথম ক্রলিং পেগের প্রচলন ঘটে। বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় বতসোয়ানা, হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়ায় ক্রলিং পেগ পদ্ধতি। এ পদ্ধতি টাকার বিপরীতে ডলারের দামের ভিত্তি হবে রিয়াল ইফেকটিভ একচেঞ্জ রেট (রিয়ার) ও নমিনাল ইফেকটিভ একচেঞ্জ রেট (নিয়ার)। বৈশ্বিক মানদণ্ডের আলোকে ‘ক্রলিং পেগ’ রেটের সঙ্গে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকার করিডোর রাখা হবে। আর স্মার্ট সুদহারের আলোকে বাংলাদেশ ফরেন একচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ডলারের দর নির্ধারণ করবে। এই প্রদ্ধতিতে চালু হওয়ার সাথে সাথে দেশে ডলার দর বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকে এক কর্মকর্তা জানান, ডলার সংকট কাটছে না। সংকটের সুযোগে কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছে ব্যাংক-এক্সচেঞ্জ হাউজ। অন্যদিকে, রিজার্ভও তলানিতে। এ পরিস্থিতিতে ডলারের দর শতভাগ বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরিবেশ নেই। তাই গভর্নর ক্রলিং পেগ পদ্ধতি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
Published on: 2024-03-28 20:49:14.213599 +0100 CET