কালবেলা
বাংলাদেশি জাহাজ জিম্মি /                মুক্তিপণ নিয়ে উপকূলে গিয়েই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার

বাংলাদেশি জাহাজ জিম্মি / মুক্তিপণ নিয়ে উপকূলে গিয়েই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার

উত্তর-পূর্ব সোমালিয়ার ফেডারেল রাজ্য পুন্টল্যান্ডের পূর্ব উপকূল থেকে ৮ জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাবিকসহ বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছেড়ে দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই গ্রেপ্তার হয় তারা। জলদস্যুদের গ্রেপ্তারের জন্য আগেই ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে সোমালিয়ার পুলিশ। গত তিন মাস ধরে জলদস্যুদের ধরান জন্য বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে সোমালিয়ার পুলিশ ও উপকূল রক্ষীরা। একাধিক সূত্র অনুসারে জলদস্যুরা আল-শাবাব জঙ্গিদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিল। পুন্টল্যান্ড পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করা জলদস্যু দলের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযানে জলদস্যুদের দেওয়া মুক্তিপণের টাকা উদ্ধার করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। পরে দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঈদের আগেই জাহাজটির মালিকপক্ষ নানা পর্যায়ে দরকষাকষির পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আভাস দিয়েছিল। এর আগে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সচিবালয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সোমালিয়ায় জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি ২৩ নাবিককে উদ্ধারের তৎপরতা চলছে। বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করি, অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাদের সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব। আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে তাদের যেন আনতে পারি। কিন্তু সেই টার্গেটটা পূরণ করা যায়নি। তবে আশা করছি, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব। জলদস্যুরা কিছু একটা পাওয়ার জন্য জিম্মি করেছে নাবিকদের। কিন্তু তাদের কত টাকা দিতে হবে এটা বলা যাচ্ছে না। মুক্তিপণ পাওয়ার পর নাবিকসহ বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছেড়ে দেয় জলদস্যুরা। মুক্তি পাওয়ার পর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। পান্টল্যান্ড পোস্টের অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ আদায়ের পর দস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে। জলদস্যুরা তীরে অবতরণের সময় সেখানে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন। সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি সোমালিয়া অনলাইনের এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় বলা হয়, পাঁচ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে দস্যুরা। আরেকটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম পান্টল্যান্ড মিররের এক্স বার্তায় স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, পাঁচ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ নেওয়ার পর জলদস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে। এরআগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
Published on: 2024-04-14 15:05:34.764504 +0200 CEST