Bdnews24 Bangla
মৌসুমের উষ্ণতম দিন পার, টানা ২৭ দিন দাবদাহ

মৌসুমের উষ্ণতম দিন পার, টানা ২৭ দিন দাবদাহ

দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় পারদ চড়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ। এদিন ঢাকায় ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিবদ্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার বুলেটিনে দেশের ৫৫ জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুলেটিনে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর ও কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে।পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। *৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙল* আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১৯৪৮ সাল থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডেটা সংরক্ষণ রাখা আছে। চলতি মৌসুমের আগের ৭৫ বছরের মধ্যে টানা সর্বোচ্চ ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে চলে ২০২৩ সালে। ওই বছরের এপ্রিলের শেষ ১৮ দিন ও মে মাসের শুরুর ৫ দিন দাবদাহ ছিল দেশে। এবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা না থাকায় চৈত্র মাসের শেষ সময় থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত টানা ২৭ দিনের তাপপ্রবাহের তথ্য তুলে ধরে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল বলেন, “৩১ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কিছু কিছু অঞ্চলে তাপপ্রবাহ ছিল, তাপমাত্রার পরিমাণও (তুলনামূলক) ছিল কম। ১১ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত তাপপ্রবাহ মৃদু থেকে বেড়ে মাঝারি রূপ নেয় এবং যোগ হয়েছে কিছু অঞ্চল। “১৬ তারিখ থেকে তীব্রতা বেড়ে ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠেছে। সেই সঙ্গে ব্যাপক অঞ্চলে তা বিস্তৃতি লাভ করে এবং তাপমাত্রার পরিমাণ তীব্র থেকে অতি তীব্র হয়।” এর মধ্যে ২০ এপ্রিল যশোরে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় তা ছাড়িয়ে গেল। বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। গত বছর ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এ বছরও কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এপ্রিল এমনিতেই দেশের উষ্ণতম মাস। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরুতে গরমের তীব্রতায় হাঁসফাঁস করতে হয়।আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদের ভাষ্য, “গত বছর বাতাসে আর্দ্রতা কম ছিল। এবার আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে মানুষের শরীর ঘামছে, অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। এই সময়ে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। “এবার বৃষ্টিপাত কম। কালবৈশাখী এবং বৃষ্টি না থাকার কারণে এবার গরমের তীব্রতা বেশি।” চলমান তাপপ্রবাহ মে মাসের ৪/৫ তারিখ পর্যন্ত চলতে পারে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান। বাংলাদেশে মে মাসেও গরমের দাপট যে বেশি থাকে, সে কথা তুলে ধরে ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড মেরিটাইম ইন্সটিটিউটের (এনএওএমআই) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সমরেন্দ্র কর্মকার মনে করিয়ে দিলেন, ১৯৭২ সালে এই মে মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শেষ তিন দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, “জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটি পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই গরম বেশি পড়ছে।”
Published on: 2024-04-26 17:46:39.290265 +0200 CEST