Bdnews24 Bangla
উপজেলা ভোট: বালিয়াডাঙ্গীতে লড়াই দুই ভাই আর ভাতিজার

উপজেলা ভোট: বালিয়াডাঙ্গীতে লড়াই দুই ভাই আর ভাতিজার

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ভোট হচ্ছে শুধু চেয়ারম্যান পদে; যা পরিণত হয়েছে চাচা-ভাতিজার লড়াইয়ে, যারা আবার সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজন। ভোটে উপজেলা মহিলা ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে করে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরাই ঘুরছেন প্রার্থীদের ‍দুয়ারে দুয়ারে, যা আবার পরিণত হয়েছে পারিবারিক এক প্রতিযোগিতায়। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান পদের তিন প্রার্থী হলেন দুই ভাই এবং তাদের একজনের ছেলে। সহদর দুই প্রার্থী ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজনের চাচা; অপরজন তার চাচাত ভাই। প্রার্থীরা হলেন- বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী (মোটরসাইকেল প্রতীক) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম (আনারস প্রতীক)। এ  ‍দুই ভাই সংসদ সদস্য সুজনের চাচা। অপরজন মোহাম্মদ আলীর ছেলে উপজেলা যুবলীগের সদস্য আলী আফসার (মুকুট প্রতীক)। এ ছাড়া সংসদ সদস্যের ফুফাত বোন উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সিমা আক্তার সুমনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।এবারের ‍উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য কিংবা নিকট আত্মীয়রা যাতে ভোট না দাঁড়ায় সে ব্যাপারে দল থেকে কড়া বার্তা দেওয়া হলেও অন্য স্থানের মতো তা মানা হয়নি বালিয়াডাঙ্গীতেও। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সুজন বলেন, “উপজেলা নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু তারা শোনেননি; অতএব ধরে নেওয়া যায় তারা দলীয় সিদ্ধান্ত মানেন না, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই দল কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. দলিল উদ্দীন বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মোমিনুল ইসলাম ভাসানি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সিমা আক্তার সুমনা নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের পোস্টার দেখা গেলেও প্রচার-প্রচারণায় তাদের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়েনি। এখনও সরগরম হয়নি ভোটের মাঠ। তবে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। # বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ভোট হচ্ছে শুধু চেয়ারম্যান পদে; প্রার্থী তিনজন। # মোট ভোটার এক লাখ ৬০ হাজার ৬৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮২ হাজার ৯৫৪ ও নারী ভোটার ৭৭ হাজার ৯০৯ জন। # ৫৪টি ভোটকেন্দ্রের ৪৫৫টি কক্ষে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হবে। # পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েল। চতুর্থ চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম। তৃতীয় চেয়ারম্যান ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রবীর কুমার রায়। দ্বিতীয় চেয়ারম্যান ছিলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফাহিম। আর প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী। দলীয় প্রধানের কঠোর নির্দেশনা পরও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে প্রার্থীদের ভাষ্য, স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের ‘চেয়ারম্যান প্রার্থী’ হিসেবে নাম ঘোষণা করেছেন। তারই অনলাইনে চেয়ারম্যান পদে আবেদন করেন। প্রতীক পাওয়ার পর তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে প্রচারে নেমেছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্যের ফুফাত বোন উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সিমা আক্তার সুমনা। তিনি বলেন, “আমি যখন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি তখন প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেননি। তবে শেষ পর্যন্ত অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছি।” তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নির্দেশনা দেয়নি সেজন্য আর প্রত্যাহার করা হয়নি বলে ভাষ্য তার।চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, “পত্র-পত্রিকায় দেখেছি উপজেলা নির্বাচন থেকে সংসদ সদস্যদের আত্মীয়-স্বজনদের সরে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আমাকে কেউ কোনো কিছু বলেননি। তাই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি; এখন দল যদি আমার বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে সেটি সঠিক হবে না।” আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী সফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি সংসদ সদস্যের চাচা হতে পারি, কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে থাকি না; আমি পরিবার নিয়ে আলাদা থাকি, আলাদা খাই। “এছাড়া নির্বাচন থেকে সরে যেতে হবে দল থেকে এমন কোনো চিঠিও পাইনি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় চিঠি পেলে বিষয়টি ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।” ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বাবলু বলেন, দলের সিদ্ধান্ত প্রত্যেক প্রার্থীদের জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত উপক্ষো করে নির্বাচনে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Published on: 2024-04-27 19:59:26.040956 +0200 CEST