Bdnews24 Bangla
শেরপুরে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর ভিড়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অসন্তোষ

শেরপুরে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর ভিড়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অসন্তোষ

সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। তীব্র রোদ ও অসহনীয় তাপমাত্রায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। একইসঙ্গে বেড়েছে গরমজনিত রোগের  প্রকোপ। জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হিট স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা ভিড় করছেন হাসপাতালে। তবে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে গরমজনিত রোগে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশির ভাগই ভর্তি হচ্ছেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খায়রুল কবির সুমন বলেন, “গরমের জন্য হাসপাতালে ডায়রিয়া এবং গরম জাতীয় রোগের রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বহির্বিভাগে অনেক রোগী আসছেন তাদের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গড়ে প্রতিদিন ২০ জন ভর্তি হচ্ছেন। “ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৪৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। শনিবার সকালে হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪২ জন ভর্তি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি।”পর্যাপ্ত সংখ্যক শয্যা না থাকায় অনেকেই হাসপাতালের মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন। গরমের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরাই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। তবে ভর্তিকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু বলে জানান এই চিকিৎসক। তবে অতিরিক্ত রোগীর কারণে হাসপাতালের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন রোগীর স্বজনরা। সদর উপজেলার বেতমারী গ্রামের ডায়রিয়া আক্রান্ত ১১ মাসের শিশুকে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে আসা শিখা বেগম বলেন, “ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বাচ্চাদের কক্ষে ফ্যান-টেন কিচ্ছু নাই। ওয়ার্ডের সামনে নোংরা-ময়লা, বাথরুমে ময়লা, পানি নাই। বাচ্চাকে যে একটু বের হবো সে রকম কোনো পরিবেশ নাই।” একই উপজেলার তিরছা গ্রামের রিয়াজ আলী বলেন, “দুইদিন ধইরা ডায়রিয়া নিয়া হাসপাতালে ভর্তি আছি। সিট পাই নাই। ফ্লোরের মধ্যে পড়ে আছি। ডায়রিয়ার অবস্থাও আগের মতো আছে।” শেরপুর কুসুমহাটি এলাকার ১১ মাস বয়সের নাতিকে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে আসা নানি মাহফুজা বেগমও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অস্বাস্থ্যর পরিবেশের কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শ্রীবরদী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা উত্তর গ্রামের শিরিনা ও সানোয়ারা বলেন, “আমরা ডায়রিয়া ওয়ার্ডে খুবই অসুবিধার মধ্যে আছি। কাল রাইতে নওডার সোম এক বছরের বাচ্চা আব্দুল্লাহকে ভর্তি করাইছি। রুমের মধ্যে কোন ফ্যান নাই। রুম অপরিষ্কার। বাচ্চাডারে নিয়া খুবই কষ্টের মধ্যে আছি।” ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগী ও শিশু রোগীদের অভিভাবকরা বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কাছেই ময়লা আবর্জনার ভাগাড় থাকায় সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শৌচাগারসহ ওয়ার্ড অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকা, পানির অভাব ও ফ্যান না থাকায় রোগীদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছেন জানিয়ে তারা অভিযোগ করেছেন, শিশুদের জন্য ডায়রিয়া ওয়ার্ড নিরাপদ নয়।শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শেরপুর পৌরসভার। সপ্তাহে দুইদিন আবার কখনও তিনদিন ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে পৌরসভা। তাদের লিমিটেশন থাকায় সব সময় পরিষ্কার করতে পারে না। “এ বিষয়টি দেখার জন্য পৌরসভার মেয়র সাহেবকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে বর্তমান এমপি সাহেবকেও অবগত করা হয়েছে।” আর ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  বলেন, “ওয়ার্ডে কিছু সমস্যা আছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।” ময়লার ভাগাড়ের বিষয়টি নিয়ে শেরপুরের পৌরমেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে আমরা সপ্তাহে তিনদিন হাসপাতাল থেকে ময়লা-আর্বজনা সরিয়ে নিচ্ছি। সম্প্রতি একটি সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সপ্তাহে চারদিন ময়লা-আর্বজনা সরিয়ে নিতে। এ ছাড়া জেলা সদর হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণ করার জন্য হাসপাতালের ভিতরেই স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারলে এ সমস্যা আর থাকবে না। এদিকে শেরপুরে কোনো আবহাওয়া অফিস না থাকায় দিনের তাপমাত্রার কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয় না। তবে সকাল থেকেই জেলায় তেজোদ্দীপ্ত সূর্যের দেখা মিলছে। তাপদাহের কারণে অনেকেই ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
Published on: 2024-04-27 09:01:52.98115 +0200 CEST